দুই শতাধিক সেলাই পড়েছে সাংবাদিক ডালিমের শরীরে
চুয়াডাঙ্গায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের হামলায় আহত স্থানীয় সংবাদকর্মী সোহেল রানা ডালিমের শারীরিক অবস্থা ৭২ ঘণ্টা পার না হওয়া পর্যন্ত শঙ্কামুক্ত কীনা শতভাগ বলতে পারছেন না চিকিৎসকেরা। সাংবাদিক ডালিমকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের ৬নং কেবিনে অবজারভেশনে রাখা হয়েছে।
মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর ডালিমের শরীরে জ্বরের উপস্থিতি পেয়েছেন তার পরিবারের সদস্যরা। তার শরীরের জখমের স্থানগুলোতে প্রায় দুই শতাধিক সেলাই দেয়া হয়েছে। সেই ক্ষতস্থানের চামড়াগুলোতে ইনফেকশনের আশঙ্কা করছেন চিকিৎসকরা। তবে জীবননাশের কোনো আশঙ্কা নেই বলে জানিয়েছেন তারা।
বিজ্ঞাপন
বর্তমানে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে জুনিয়র সার্জারি কনসালটেন্ট ডা. এহসানুল হক তন্ময়ের তত্ত্বাবধানে সাংবাদিক সোহেল রানা ডালিমের চিকিৎসা চলছে।
ডা. এহসানুল হক তন্ময় ঢাকা পোস্টকে বলেন, ডালিমের ক্ষতস্থানগুলোতে ইনফেকশন হবে কীনা সেটা এ মুহূর্তে বলা যাবে না। চামড়ায় যদি ইনফেকশনটা না হয় তাহলে গুরুতর কোনো কিছু হবে না এবং জীবননাশের কোনো আশঙ্কা নেই। যেহেতু কাটা জায়গায় সেলাই দেয়া হয়েছে সেখানে ইনফেকশনের চান্স সব সময় থাকে। ৭২ ঘণ্টা পর সেলাই কাটা হবে তারপর প্রাথমিকভাবে বলা যাবে তিনি শঙ্কামুক্ত কীনা। সাংবাদিক ডালিমের অবস্থা ভালোর দিকে থাকলে ৭/৮ দিন পর ছাড়পত্র পেতে পারেন বলে জানান এই চিকিৎসক।
গতকাল সোমবার (১৬ আগস্ট) রাত সোয়া আটটার দিকে পেশাগত কাজ শেষে মোটরসাইকেলযোগে স্থানীয় দৈনিক সময়ের সমীকরণ অফিসে যাচ্ছিলেন সাংবাদিক সোহেল রানা ডালিম। এসময় শহরের আব্দুল্লাহ সিটির সামনে পৌঁছালে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক স্কুল বিষয়ক সম্পাদক রাজু আহমেদের মোটরসাইকেলের সঙ্গে ধাক্কা লাগে।
এ সময় রাজুর মোটরসাইকেলের পেছনের সিগন্যাল লাইট ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ নিয়ে সাংবাদিক ডালিমের মোটরসাইকেলের চাবি কেড়ে নিয়ে গালি-গালাজ করতে থাকেন রাজুসহ তার কর্মীরা। ঠিক এ সময় হুট করে একজন পেছন থেকে সাংবাদিক ডালিমের পিঠে ধারাল কোনো অস্ত্র দিয়ে টান দেয়। এতে ডালিমের পিঠের পুরো অংশ ক্ষতবিক্ষত হয়ে যায়। এ সময় ডালিমের কাছে থাকা হেলমেট দিয়ে রাজুকে আঘাত করে একটি চলন্ত ইজিবাইকে উঠে সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে যায়।
এরপর ডালিমের পিছু নেয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। তারা হাসপাতালে পৌঁছে জরুরি বিভাগে ঢুকে চিকিৎসারত অবস্থায় ডালিমকে আবারও এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে। এ সময় সাংবাদিক ডালিমকে রক্ষা করতে ভয়ে কর্তব্যরত চিকিৎসক, ডিউটিরত পুলিশসহ কেউ এগিয়ে আসেননি। শরীরে অসংখ্য জখম নিয়েই তিনি সেখান থেকে দৌড়ে পালিয়ে পুরো হাসপাতাল ঘুরেন। খবর পেয়ে ডালিমের সহকর্মীরা হাসপাতালে এলে পালিয়ে যায় হামলাকারীরা। এ ঘটনায় রাতেই ছাত্রলীগ নেতা রাজুকে সদর হাসপাতালের মূল ফটক থেকে আটক করে পুলিশ।
এদিকে সদর হাসপাতালের পুরনো ভবনে থাকা সিসিটিভি ফুটেজে শরীরে জখম নিয়েই সাংবাদিক ডালিম হাসপাতালের মধ্যে দৌঁড়াতে দেখা যায়। অপরদিকে সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের মধ্যে ক্যামেরা থাকলেও সিসিটিভির ফুটেজ দেখতে গেলে তা অফলাইন পাওয়া যায়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে জরুরি বিভাগের মধ্যে থাকা সিসিটিভির ক্যামেরা সচল নয়। এতদিন পরও নতুন ভবনের সিসিটিভি ক্যামেরাগুলো সচল হয়নি এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
এদিকে, মঙ্গলবার (১৭ আগস্ট) বিকেল ৩টার দিকে আহত সাংবাদিক ডালিমের বড় ভাই আরিফ হোসেন বাদী হয়ে তিনজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ২/৩ জনকে আসামি করে চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় হত্যাচেষ্টা মামলা করেন। এরপর পুলিশ অভিযান চালিয়ে পৌর এলাকার নুরনগর কলোনীপাড়া থেকে মামলার দুই আসামিকে গ্রেফতার করে।
এর আগে সোমবার (১৬ জুলাই) রাতে এ ঘটনায় জেলা ছাত্রলীগের সাবেক স্কুল ও ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক এবং জেলা ছাত্রলীগের প্রস্তাবিত কমিটির অন্যতম সদস্য রাজু আহমেদকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন, চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার ইমার্জেন্সি রোডের মৃত আব্দুল লতিফের ছেলে রাজু আহমেদ (২৪), ফেরিঘাট এলাকার আব্দুস সাত্তারের ছেলে মোহাম্মদ জান্নাত হোসেন (২৩) ও একই এলাকার নজরুল লতিফের ছেলে আল মমিন (২২)।
সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সাংবাদিক ডালিমের স্ত্রী ঢাকা পোস্টকে বলেন, হাসপাতালে আমরা নিরাপদ নয় বলে মনে হচ্ছে। জরুরি বিভাগে এসে যদি তারা হামলা করতে পারে তালে ওয়ার্ডে এসে যে আবারও কোনো দুর্ঘটনা ঘটাবে না, এর কোনো গ্যারান্টি নেই। আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। সাংবাদিকতার পাশাপাশি সোহেল রানা ডালিম ইন্টার স্পিড মার্কেটিং সোলেশন লিমিটেডের চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর জেলার সুপারভাইজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
আফজালুল হক/এমএএস