পাটের সুদিন ফিরছে, ভালো লাভের আশা চাষিদের
খেত থেকে কেটে আনা পাটের আঁশ ছাড়ানোয় ব্যস্ত একদল নারী-পুরুষ। পুকুরে হাঁটু পানিতে নেমে তারা কাজ করে চলেছেন নিরলসভাবে। এক হয়ে কাজ করা এসব নারী-পুরুষের মুখে দেখা যায় হাসির রেশ। তবে ভবিষ্যৎ চিন্তায় এলেই কপালে ভাজ দেখা দেয় তাদের।
বলছিলাম ঠাকুরগাঁও জেলার পাট চাষিদের কথা। সোমবার (১৬ আগস্ট) জেলার বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে চাষিদের এমন অবস্থা লক্ষ্য করা যায়। জেলায় গতবারের তুলনায় এবার পাটের ফলন ভালো হলেও দাম নিয়ে চিন্তিত চাষিরা। তবু পাটে লাভের আশা করছেন তারা।
বিজ্ঞাপন
সরেজমিনে দেখা যায়, জেলার মাঠে পর্যায়ে খেত থেকে পাট কর্তন, জাগ দেওয়া, পানিতে ডোবানো ও ধোয়ার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। নারী-পুরুষ উভয়ে এক হয়ে কাজ করছেন স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে। অনেকে পাট ধোয়া শেষে শুকানোর কাজেও ব্যস্ত। গতবছর জেলায় আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় পাটের ফলন ভালো ছিল। কৃষকও পাটের দাম পেয়েছিল ভালো। এবারও সেই আশায় জেলায় চাষিরা করেছেন পাটের আবাদ।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য মতে, চলতি বছর জেলায় ৬ হাজার ২৯২ হেক্টর জমিতে পাট আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। তবে আবাদ হয়েছে ৬ হাজার ৮১৭ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে দেশি জাতের পাট আবাদ হয়েছে ৭১৭ হেক্টর ও তোষা জাতের পাট আবাদ হয়েছে ৬ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে। যা গতবারের চেয়ে বেশি।
গত বছর ঠাকুরগাঁওয়ে ৬ হাজার ১৪০ হেক্টর জমিতে পাট আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। আবাদ হয়েছিল ৫ হাজার ৮১২ হেক্টর জমিতে। এরমধ্যে দেশি জাতের পাট আবাদ হয় ৭০২ হেক্টর ও তোষা জাতের পাট আবাদ হয় ৫ হাজার ১১০ হেক্টর জমিতে।
বর্তমানে বাজারে পাট উঠলেও মণপ্রতি বিক্রি হচ্ছে দুই হাজার থেকে ২৪শ টাকা পর্যন্ত। কৃষকরা বলছেন, পাট চাষের শুরু থেকে ধোয়া পর্যন্ত যে খরচ হয়েছে, বাজারে বিক্রি করে তার থেকে কিছুটা হলেও লাভের আশা করা যায়। তবে বাজারে পাটের আরও দাম পেলে গতবারের তুলনায় এবার আরও বেশি লাভ করা যাবে।
কথা হয় রহিমানপুর ইউনিয়নের কৃষক আব্দুল হেলালের সঙ্গে। তিনি বলেন, গতবারের তুলনায় এবারে পাটের ফলন অনেক বেশি হয়েছে। বাজারে যে দামে বিক্রি হচ্ছে তাতে ২০ থেকে ২৫ শতাংশ লাভ হতে পারে ধারনা করছি। আমার আবাদে প্রায় ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। আশা করি, খুব একটা লাভ না হলেও কিছুটা হবে। তবে দাম আরেকটু বেশি হলে অনেকটা লাভ হতো। এরপরও আশায় আছি, দেখি কি হয়।
ফাঁড়াবাড়ি এলাকায় কথা হয় কৃষক জয়নুদ্দিনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ৪৫শতক জমিতে পাট আবাদ করেছি। যখন পাট লাগানো হয়, তখন আকাশ ভালো ছিল। তবে বৃষ্টি না হওয়ায় পাটে একটু সমস্যা হয়েছিল। আমার ৪৫শতকে প্রায় ৮ মণের মতো পাট হতে পারে। বাজারে দামও আছে কিছুটা। তবে বাজারে আরও দাম পেলে বেশি লাভবান হতাম।
ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক আবু হোসেন বলেন, লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে এবার অতিরিক্ত জমিতে পাট চাষ হয়েছে। তবে বৃষ্টি কম হওয়ায় পাটের মান কিছুটা খারাপ হয়েছে। যদি সময় মতো বৃষ্টি হতো তাহলে কৃষক আরও বেশি লাভবান হতো। আমি মনে করি, পাট চাষকে আরও লাভজনক করতে সর্বক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করতে হবে।
মো. নাহিদ রেজা/এসএসএইচ