হাসপাতালে ঢুকেও সাংবাদিককে কোপাল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা
চুয়াডাঙ্গায় সোহেল রানা ডালিম নামে এক সাংবাদিককে দুই ধাপে কুপিয়ে জখম করেছে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক স্কুলবিষয়ক সম্পাদক ও তার নেতাকর্মীরা। সোমবার (১৬ আগস্ট) রাত সোয়া ৮টার দিকে এই ঘটনা ঘটে।
শহরের আব্দুল্লাহ সিটি কমপ্লেক্সের সামনে প্রথম দফায় তাকে কোপানো হয়। পরে গুরুত্বর আহত অবস্থায় চিকিৎসা নিতে গেলে সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসকের সামনে তার ওপর আবারও হামলা চালানো হয়। এ সময় সাংবাদিক ডালিমকে রক্ষা করতে ভয়ে কর্তব্যরত চিকিৎসক, ডিউটিরত পুলিশসহ কেউ এগিয়ে আসেননি। শরীরে অসংখ্য জখম নিয়েই তিনি সেখান থেকে দৌড়ে পালান।
বিজ্ঞাপন
জরুরি বিভাগে চিকিৎসাধীন সাংবাদিক সোহেল রানা ডালিম ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, আমি ইমারজেন্সি সড়ক হয়ে সময়ের সমীকরণ পত্রিকার অফিসে যাচ্ছিলাম। আব্দুল্লাহ সিটির সামনে আমার মোটরসাইকেলের সঙ্গে রাজুর মোটরসাইকেলের ধাক্কা লাগে। এ সময় রাজু আমার মোটরসাইকেলের চাবি কেড়ে নিয়ে গালি-গালাজ করতে থাকে। হুট করে একজন পেছন থেকে আমার পিঠে ছুরি দিয়ে আঘাত করে।
তিনি আরও বলেন, আমি হেলমেট দিয়ে তাদের প্রতিহত করে একটি চলন্ত ইজিবাইকে করে দ্রুত সদর হাসপাতালে জরুরি বিভাগে আসি। জরুরি বিভাগে চিকিৎসারত অবস্থায় তারা আমাকে আবারও এলোপাতারি কোপাতে থাকে।
জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. শাকিল আর সালান বলেন, আহত ওই সাংবাদিককে জরুরি বিভাগে চিকিৎসা দেওয়ার সময় আবারও কুপিয়েছে দূর্বত্তরা। তার পিঠ, হাত, পেট ও বুকসহ শরীরের বিভিন্নস্থানে জখমের চিহ্ন পাওয়া গেছে। তার শরীরে দুইশতাধিক সেলাই দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে তিনি সার্জারি ওয়ার্ডে অবজারভেশনে আছেন।
এদিকে সাংবাদিকের ওপর হামলার ঘটনায় হাসপাতালে আসেন চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) জাহাঙ্গির আলম, চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সভাপতি সরদার আল আমিন, দৈনিক সময়ের সমীকরণের প্রধান সম্পাদক নাজমুল হক স্বপন, চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার সাবেক মেয়র ও জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক ওবাইদুর রহমান চৌধুরী জিপু, চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফাইজার চৌধুরী, জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. জানিফ প্রমুখ। তারা ডালিমের শারীরিক অবস্থার খোঁজ নেন।
এ ঘটনায় চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু জিহাদ খান বলেন, তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সাংবাদিক ডালিমের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। আমরা হামলার মূলহোতা জেলা ছাত্রলীগের সাবেক স্কুলবিষয়ক সম্পাদক রাজুকে আটক করেছি। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ঘটনার সঙ্গে জড়িত আরও কয়েকজনের নাম জানতে পেরেছি। তাদের আটকে অভিযান অব্যাহত আছে।
ঘটনার নিন্দা জানিয়ে চুয়াডাঙ্গা জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, সাংবাদিকের ওপর যে হামলা হয়েছে এটা ন্যাক্কারজনক। হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসেও মানুষ নিরাপদ নয়। হামলাকারীরা ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সভাপতি সরদার আলামিন বলেন, হত্যার উদ্দেশেই এই হামলা করা হয়েছিল। হাসপাতালের জরুরি বিভাগেও কুপিয়ে জখম করা আসলেই ন্যাক্কারজনক। অভিযুক্তদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবি জানাচ্ছি।
সাংবাদিক সোহেল রানা ডালিমের ওপর হামলার খবর পেয়ে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য দিলিপ কুমার আগরওয়ালা। এক প্রতিবাদ বিবৃতিতে তিনি জানিয়েছেন, সাংবাদিকরা সমাজের দর্পণ। সেই সাংবাদিকের ওপর হামলা সত্যিই ন্যাক্কারজনক। বিবৃতিতে তিনি হামলাকারীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি জানান।
আফজালুল হক/এমএইচএস