চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলায় জমি নিয়ে পূর্বশত্রুতার জেরে কৃষকের আমন ধান ক্ষেতে লবণ মিশিয়ে বিষ দিয়ে ধান পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলার পার্বতীপুর ইউনিয়নের হাটখোলা গ্রামের আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে কৃষক রাশিদুল ইসলামের প্রায় সাড়ে তিন বিঘা জমিতে লবণ-বিষ দেওয়া হয়েছে।

শনিবার (১৪ আগস্ট) রাত আনুমানিক ১টার দিকে ১৫ থেকে ২০ জনের সশস্ত্র একটি দল স্প্রে করার মেশিনে করে জমিতে বিষ দেয়। গ্রামের লোকজন তাড়া করলে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা।

শনিবার বিকেলে সরেজমিনে দেখা যায়, লবণ-বিষ দেওয়ার কারণে ধানগাছগুলো মরে যেতে শুরু করেছে। দুই-তৃতীয়াংশ ধানগাছ শুকিয়ে গেছে। ধানগাছের গোড়ায় এখনো লবণ পড়ে আছে। এমনকি দুর্বৃত্তদের ফেলে যাওয়া ফাস্ট অ্যাকশন নামের দুটি বিষের বোতল, লবণের বস্তা ও স্প্রে করার একটি মেশিন জমিতেই পড়ে আছে।

স্থানীয় বাসিন্দা ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, শনিবার রাত আনুমানিক ১টার দিকে হাতে লাঠিসোটা, হাঁসুয়া, বল্লম নিয়ে ১৫ থেকে ২০ জনের একটি দল এ কাজটি করেছে। তারা প্রথমেই জমিতে থাকা পাহারাদারকে মারধর শুরু করে। পরে পাহারাদার পালিয়ে গিয়ে গ্রামের লোকজনকে ঘুম থেকে জাগিয়ে বিষ দেওয়ার বিষয়টি জানান। পরে গ্রামবাসী দল বেঁধে এলে পালিয়ে যায় তারা। ততক্ষণে প্রায় সাড়ে তিন বিঘা জমিতে লবণ মিশিয়ে বিষ দেওয়া হয়ে গেছে।

পঞ্চাশোর্ধ্ব ইব্রাহিম আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, বাড়ির পাশেই আমার আশ্বিনা আমের বাগান আছে। প্রতিদিন রাতে বাগানের খেয়াল রাখি। শরিবার রাতে দেখলাম আমার বাড়ির সামনে দিয়ে কয়েকজন টর্চ জ্বালিয়ে যাচ্ছে। তাদের কাছে এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, কে আপনারা? কোথায় যাচ্ছেন? উত্তরে গালি দিয়ে বলল, তোর কাজ তুই কর, বাসায় যা। এরপর তারা আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। এ সময় পাশের গ্রামের পরিচিত কয়েকজনকে দেখেছেন বলে জানান তিনি।

গ্রামের আতাবুর রহমানের স্ত্রী খাতিজা বেগম জানান, মানুষের হইহুল্লোড়, চেঁচামেচি শুনে অনেক রাতে ঘুম ভাঙে। উঠে বের হতেই দেখি রাস্তা দিয়ে হাতে বড় বড় হাঁসুয়া, লাঠিসোটা নিয়ে কিছু লোক পালিয়ে যাচ্ছে। মানুষের কথাবার্তা শুনে এগিয়ে এসে দেখি, তারা জমিতে বিষ দিতে এসেছিল। গ্রামের লোকজনের উপস্থিতি টের পেয়ে পালিয়ে গেছে।

ধানক্ষেতের পাহারাদার রাজিবুল ইসলাম বলেন, শনিবার রাত ১টার দিকে ঘুমানো অবস্থায় চারদিক থেকে আমাকে ঘিরে মারধর শুরু করে। দৌড়ে পালিয়ে গ্রামের দিকে গিয়ে সবাইকে ঘুম থেকে জাগিয়ে ওঠাই। গ্রামের সবাইকে নিয়ে এলে অনেক লোকজন দেখে পালিয়ে যায়।

ধানচাষি রাশিদুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, পেতৃক সূত্রে প্রায় ৫০ বছর ধরে বাপ-দাদার ১৮ বিঘা জমি চাষাবাদ করছি। কিন্তু কয়েক বছর ধরে হঠাৎ রেকর্ড অনুযায়ী জমিটি নিজেদের বলে দাবি করছেন পার্বতীপুর ইউনিয়নের রাহিগ্রামের দুই ভাই তাইজুদ্দিন ও কামরুজ্জামান। এমনকি তারা মামলাও করেছেন। কিন্তু মামলা চলমান অবস্থায় রাতের অন্ধকারে বারবার এসে বিষ দিচ্ছেন।

রাতেই পুলিশকে ফোন করে বিষয়টি জানিয়েছি। সকালে গোমস্তাপুর থানায় গেছিলাম। আদালতে জমিটির বিষয়ে মামলা চলমান রয়েছে এবং পুলিশ জমি-সংক্রান্ত মামলা নেয় না জানিয়ে পুলিশ আদালতের শরণাপন্ন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে। পরে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের কাছে অভিযোগ দিয়েছি-- রাশিদুল ইসলাম

এ বিষয়ে জমির মালিক দাবিদার তাইজুদ্দিন মুঠোফোনে জানান, জমির মালিকানা নিয়ে আদালতে মামলা চলমান রয়েছে। ১৯৬২ সালের রেকর্ড অনুযায়ী জমিটির মালিক আমরাই। তারপরও তারা জোর করে দখল করে চাষাবাদ করছেন। তবে জমিতে লবণ-বিষ প্রয়োগ করে ধান নষ্ট করার বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে জানান তিনি।

পার্বতীপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী খান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক আমার কাছে অভিযোগ করেছেন। কিন্তু তাদের জমিটি নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে ঝামেলা চলছে। আদালতের চলমান বিষয় নিয়ে আমার করণীয় তেমন কিছুই নেই। তাই তাদের পরামর্শ দিয়েছি আদালতের শরণাপন্ন হতে।

মো. জাহাঙ্গীর আলম/এনএ