রংপুরে জাহাঙ্গীর হোসেন নামে এক পত্রিকা হকারকে আর্থিক সহায়তা দিয়েছেন জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) বিপ্লব কুমার সরকার। শুক্রবার (১৩ আগস্ট) সকালে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে অর্থসহায়তা তুলে দেন তিনি। এ সময় জেলা পুলিশের অন্যান্য কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।

সহায়তাপ্রাপ্ত জাহাঙ্গীর হোসেন জন্মের পর থেকেই শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী। তার বয়স চল্লিশের কোঠায়। মা আছেন, বাবা নেই। এক সময় বিয়ে করেছিলেন। কিন্তু অভাবের সংসার ছেড়ে তার স্ত্রী চলে গেছেন। আগে ভিক্ষা করে জীবিকা নির্বাহ করতেন জাহাঙ্গীর। হঠাৎ উপলব্ধি হয় ভিক্ষা করার চেয়ে না খেয়ে মরা ভালো। এরপর নেমে পড়েন বিকল্প কাজের সন্ধানে। 

শুরু করেন পত্রিকা বিলির (হকার) কাজ। রংপুর প্রেসক্লাব চত্বর থেকে পত্রিকা এজেন্টদের কাছ থেকে বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকা কিনে তা জাহাজ কোম্পানি মোড়, পায়রা চত্ত্বর, টাউন হল, ডিসির মোড়সহ বিভিন্ন স্থানে ফেরি করে বিক্রি করেন। এভাবে জাহাঙ্গীরের হাত থেকে মানুষের হাতে পৌঁছে যায় দেশ-বিদেশের খবর। প্রথম প্রথম লোকজন একটু অবজ্ঞার চোখে দেখলেও ধীরে ধীরে জাহাঙ্গীর সকলের প্রিয় হয়ে ওঠেন। পত্রিকা বিক্রি করে যা আয় হতো, তা দিয়ে চলে যাচ্ছিল জাহাঙ্গীরের দিন। 

কিন্তু বাধ সাধে করোনা। এতে এলোমেলো হয়ে যায় জাহাঙ্গীরের জীবনযাপন। লকডাউনে বন্ধ হয় দোকান-পাট, শহরে মানুষের আনাগোনা। জাহাঙ্গীরের বেচাকেনাও কমে যায়। এক সময় হাতের জমানো টাকা ফুরিয়ে আসে। কিন্তু তাতে হাল ছাড়েননি জাহাঙ্গীর।  লকডাউন শিথিল হলে আবারও পত্রিকা হাতে নেমে পড়েন। সঙ্গে করোনা ঝুঁকি রোধে জরুরি মাস্কও বিক্রি করেন।

জাহাঙ্গীরের চলাফেরা অন্য আট-দশজনের মতো নয়। জরাজীর্ণ কাপড়, বিবর্ণ চেহারার জাহাঙ্গীর পত্রিকা নিয়ে কারও সামনে গেলে অনেকেই ভিক্ষুক ভেবে টাকা হাতে দেয়। কিন্তু সে স্মিত হেসে সকলকে বিনয়ের সঙ্গে ফিরিয়ে দেয়। পত্রিকার মূল্য ছাড়া কারও কাছ থেকে ভিক্ষার টাকা নেন না। প্রতিবন্ধী হলেও জাহাঙ্গীর ভিক্ষা করতে চায় না। বরং শত অভাবের মাঝেও মাথা উঁচু করে বাঁচতে চায়। 

এই লড়াকু গল্প শুনে জাহাঙ্গীরকে ডেকে নেন রংপুর জেলার পুলিশ সুপার বিপ্লব কুমার সরকার। তার দুঃখভরা গল্প শুনে অভিভূত হন এসপি। জাহাঙ্গীরের বর্তমান অর্থনৈতিক ও পারিবারিক অবস্থার খোঁজ নেন তিনি। 

জাহাঙ্গীর তার পুঁজি হারিয়ে এখন আর আগের মতো পত্রিকা কিনে বিক্রি করতে পারছেন না। তাছাড়া অর্থের অভাবে সে ও তার মা খাদ্য ও বস্ত্র সংকটে আছে। সব শুনে জাহাঙ্গীরকে পত্রিকা বিলির ব্যবসা ও তার মায়ের খাদ্য-বস্ত্র কেনার জন্য আর্থিক সহায়তা তুলে দেন এসপি বিপ্লব কুমার সরকার। এ সময় আনন্দে কেঁদে ফেলেন জাহাঙ্গীর। 

এসপি বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, ভিক্ষাবৃত্তি মানুষের পরিচয় হতে পারে না। কর্মই তার সবচেয়ে বড় পরিচয়। জাহাঙ্গীর প্রতিবন্ধী হয়েও ভিক্ষা না করে সাহসী এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এমন মানুষের পাশে আমাদের এগিয়ে আসতে হবে। সবাই যদি জাহাঙ্গীরের মতো চিন্তা করে ভিক্ষার জন্য হাত না বাড়িয়ে কিছু করার চেষ্টা করতে থাকে, দেশ একদিন সত্যিকারের ভিক্ষুকমুক্ত হবে।

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এসপি