রাজিয়া সুলতানা

কুষ্টিয়া সদর উপজেলার বটতৈল ইউনিয়নের কবুরহাট গ্রামের মো. খাদেমুল ইসলামের স্ত্রী মোছা. রাজিয়া সুলতানা। ১৯৮৮ সালে জন্ম নেওয়া এই নারী পরিবার-পরিজন আর সমাজের সবার কাছে জীবিত মানুষ হলেও নির্বাচন কমিশনের ডাটাবেজ বলছে তিনি ‘মৃত’! এ কারণে অনেক সমস্যা ও বিড়ম্বনায় পড়ছেন তিনি। নিতে পারছেন না এই মুহূর্তের মহামূল্যবান করোনার টিকাও!  

পরিচয়পত্র থাকার পরও ডাটাবেজের ভুলের কারণে কয়েক বছর ধরে নানা নাগরিক সুবিধা ভোগ করতে পারছেন না রাজিয়া। শুধু তাই নয়, দীর্ঘদিন ধরে ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ এবং জাতীয় নির্বাচনেও ভোট দিতে পারছেন না তিনি। 

রাজিয়ার পরিবার সূত্রে জানা গেছে, তিনি ভোট দিতে গেলে তাকে বলা হয় তালিকায় নেই। ব্যাংকে হিসাব খুলতে গেলেও বলা হয় তার জাতীয় পরিচয়পত্র সঠিক নয়। মোবাইলের সিম কিনতে গেলেও একই ভোগান্তি। সবশেষ করোনা টিকার জন্য নিবন্ধন করতে গিয়েও বারবার ব্যর্থ হন তিনি। 

এক প্রতিবেশীর পরামর্শে তিনি বুঝতে পারেন, জাতীয় পরিচয়পত্রের এ সমস্যা সমাধানের জন্য তাকে জেলা নির্বাচন অফিসারের কার্যালয়ে যেতে হবে। পরে তিনি ছুটে যান কুষ্টিয়া জেলা নির্বাচন অফিসারের কার্যালয়ে। সেখানে গিয়ে তিনি জানতে পারেন নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী তিনি এখন ‘মৃত’। ডাটাবেজে তার স্ট্যাটাসে ‘মৃত’ লেখা রয়েছে।
 
১৯৮৮ সালের ২৩ মে চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদা উপজেলার জয়রামপুর শেখপাড়া গ্রামে জন্ম নেন রাজিয়া। ২০০৫ সালে কুষ্টিয়া সদর উপজেলার কবুরহাট গ্রামের মো. খাদেমুল ইসলামের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। এরপর থেকে এখানে তার সবকিছু। এখানে থেকেই তিনি ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী ২০১৮ সাল থেকে তাকে মৃত দেখানো হয়েছে। 

রাজিয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, জীবিত থাকলেও আমি নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী মৃত। পরিচয়পত্র দিয়ে আমি কোনো কাজ করতে পারি না। ভোটও দিতে পারি না। টিকার নিবন্ধনও করতে পারিনি। নির্বাচন কমিশনের তথ্য সংশোধন না হলে আমি টিকা নিতে পারব না। এ নিয়ে বেশ চিন্তা হচ্ছে।  

তিনি বলেন, জেলা নির্বাচন অফিসারের কার্যালয় থেকে আমাকে বলা হয়েছিল, স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের কাছ থেকে একটি জীবিত থাকার প্রত্যয়নপত্রসহ আবেদন করতে। পরে আমি স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ থেকে প্রত্যয়নপত্র সংগ্রহ করে আবেদনপত্র জমা দিয়েছি । আমি চাই দ্রুত আমার সমস্যার সমাধান হোক।

এ বিষয়ে বটতৈল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোমিন মন্ডল বলেন, রাজিয়া সুলতানা এখনো জীবিত আছেন। তাকে পরিষদ থেকে আমরা একটা প্রত্যয়নপত্র দিয়েছি। কীভাবে তিনি জীবিত থেকেও মৃত হলেন সেটা নির্বাচন অফিস বলতে পারবেন।

এ বিষয়ে কুষ্টিয়া সদর উপজেলা নির্বাচন অফিসার মো. সহিদুর রহমান বলেন, রাজিয়া সুলতানা জীবিত। কিন্তু জাতীয় নির্বাচন কমিশনের ডাটাবেজে তাকে মৃত দেখানো হচ্ছে। সার্ভারে হয়তো ভুল তথ্য দেওয়া হয়েছিল। তথ্য  সংশোধনের জন্য গত ৯ আগস্ট তিনি একটি আবেদন করেছেন। 

তিনি বলেন, রাজিয়া সুলতানা নামে ওই নারীর জাতীয় পরিচয়পত্রের সমস্যা সমাধানের জন্য প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নিয়েছি। এটি কোনো ইচ্ছাকৃত ভুল নয়। বরং কাজের ভুল। তথ্য সংগ্রহকারী ভুলক্রমে জীবিত রাজিয়া সুলতানাকে তালিকায় এন্ট্রি করার সময় মৃত দেখিয়েছেন। আশা করি দ্রুত এ সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। 

রাজু আহমেদ/আরএইচ/জেএস