গেল কোরবানির ঈদ সন্তানসম্ভবা মুক্তার কাছে অন্যসব ঈদের চাইতে একটু বেশিই আনন্দের ছিল। কারণ চিকিৎসক জানিয়েছিলেন, ঈদের পরদিনই মুক্তার কোলজুড়ে আসবে তার তৃতীয় সন্তান।

প্রসব বেদনা শুরু হলে ঈদের পরদিন ২২ জুলাই মুক্তাকে তার স্বামী নিয়ে আসেন গাজীপুরের শ্রীপুর পৌরসভার মাওনা চৌরাস্তার শাপলা হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। সেখানে সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে ফুটফুটে একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দেন মুক্তা। স্বামীর দৃষ্টিতে এটি ছিল মুক্তার তৃতীয় দফার ভুল। সন্তান জন্ম দেয়ার পর চোখ মেলে একবারই নাড়িছেঁড়া ধনকে দেখার সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি। বুকের দুধ খাওয়াতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু পারেননি।

এরই মধ্যে নবজাতক কন্যা সন্তানকে মাত্র ২০ হাজার টাকার বিনিময়ে কয়েকজনের হাতে তুলে দেন স্বামী। মুক্তার ভাষ্যমতে তাদের আগের দুটি সন্তানও মেয়ে। এই সন্তানও মেয়ে হওয়ায় বিক্রি করে দিয়েছে তার স্বামী।

জন্মের পর থেকে নবজাতক সন্তানকে কাছে না পেয়ে যন্ত্রণায় ভুগছেন এই নারী। হন্যে হয়ে খুঁজছেন তার সন্তানকে। মঙ্গলবার বিকেলে সন্তানের খোঁজে এসেছিলেন সেই হাসপাতালে, যেখানে তার সিজার হয়েছিল। সন্তানকে ফিরে পেতে থানাতেও অভিযোগ করেছেন তিনি। 

সন্তানহারা এই মায়ের নাম মোছা. মুক্তা (২৫)। বাড়ি পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলার ভাওলাগুর গ্রামে। তবে পোশাক কারখানার শ্রমিক হওয়ায় বর্তমানে গাজীপুরের শ্রীপুরের গড়গড়িয়া মাস্টারবাড়ী এলাকার ছিদ্দিক মিয়ার বাড়িতে ভাড়া থাকেন। 

তার স্বামী স্থানীয় ডেনিমেক কারখানার শ্রমিক। মুক্তা নিজেও স্থানীয় ইশরাক স্পিনিং নামের একটি কারখানায় চাকরি করতো। তবে সন্তান ধারণ করার পর চাকরি থেকে ছুটি নেন। তাদের ফাতেমা (১১) ও জীবন (৭) নামে দুটি কন্যা সন্তান রয়েছে।

মুক্তা জানান, তাকে কিছু না জানিয়ে অন্যের হাতে তুলে দিয়েছে তার নাড়িছেঁড়া মানিককে। এরপর থেকে তিনি আর রাতে ঘুমাতে পারেন না। তার খাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে। সন্তানকে না পেলে, তার মুখে নিজের বুকের দুধ তুলে দিতে না পারলে তিনি যে বাঁচবেন না। তাই তার শিশুকে ফিরিয়ে দিতে সবার কাছেই ছুটছেন তিনি।

বিভিন্ন মাধ্যমে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে তার সন্তান রয়েছে জামালপুর সদর উপজেলার পড়ুলা গ্রামে। সেখানকার হাতেম আলীর ছেলে ময়নুল হক ২০ হাজার টাকা দিয়ে অপারেশন থিয়েটার থেকে বের করে এ নবজাতককে কিনে নিয়েছেন।

মুঠোফোনে ময়নুলের ভাই সাইফুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, এ নবজাতককে ২০ হাজার টাকায় তারা কিনে নিয়েছেন। বাচ্চাটি বর্তমানে সুস্থ রয়েছে। তবে মাকে না জানিয়ে কেন কিনেছেন এর জবাবে তিনি বলেন, জানালে কোনো মা কি তার সন্তান বিক্রি করতে চাইবেন? বলে উল্টো প্রশ্ন রাখেন তিনি।

স্বপ্নার স্বামী জাবেদ আলীকে বাসায় পাওয়া না যাওয়ায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

তবে শাপলা হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পরিচালক রেফাজ আহমেদ মিলন ঢাকা পোস্টকে বলেন, এই নারী সিজারিয়ানের মাধ্যমে তাদের হাসপাতালে কন্যা সন্তানের জন্ম দেয়। তার যাবতীয় চিকিৎসা শেষে ২৫ জুলাই তাকে হাসপাতাল থেকে রিলিজ দেয়া হয়। এরপর শিশুটিকে তার পরিবারের লোকজন বিক্রি করেছে, নাকি বাড়ি নিয়ে গেছে এটা তাদের বিষয়। তবে বেশ কয়েকদিন পর আজ হাসপাতালে এসে সন্তানের খোঁজ করছেন এই মা। এ ঘটনায় আমরাও অবাক। 

শ্রীপুর থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ্ ঢাকা পোস্টকে বলেন, মুক্তার পক্ষ থেকে থানায় লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। তিনি বিষয়টি তদন্ত করছেন। আগামীকাল সকালে তার স্বামীসহ তাকে থানায় আসতে বলা হয়েছে।

শিহাব খান/এমএএস