কাঁচা মরিচের দাম বাড়ায় চাষিদের মুখে হাসি
কাঁচা মরিচের দাম বেড়ে যাওয়ায় হাসি ফুটেছে নওগাঁর প্রান্তিক মরিচ চাষিদের মুখে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে দাম বেড়েছে প্রায় চারগুণ। বর্তমানে জেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ ১৫০ টাকা থেকে ১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বেশি দামে বিক্রি হওয়ায় অধিক লাভবান হচ্ছেন চাষিরা। সোমবার (৯ আগস্ট) নওগাঁর বদলগাছী ও মহাদেবপুর উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
বিজ্ঞাপন
কৃষি সম্প্রসারণ সূত্রে জানা গেছে, নওগাঁয় নদীবেষ্টিত বদলগাছী ও মহাদেবপুর উপজেলার আত্রাই ও ছোটযমুনার নদীর অববাহিকায় ১৫টি ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ জমিতে করা হয়েছে মরিচের আবাদ। এখন চলছে মরিচ তোলার মৌসুম।
দুই উপজেলার মাঠে-মাঠে এখন যত দূর চোখ যায় শুধু মরিচ, আর মরিচ। এবার মরিচের উৎপাদন ভালো হওয়ার পাশাপশি বাজারে উপযুক্ত দাম পেয়ে প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র চাষিদের ঘরে খুশির বন্যা বইছে।
মহাদেবপুর উপজেলার লক্ষ্মীপুর ডাক্তারের মোড় কাঁচা মরিচের বৃহৎ বাজারে সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, চাষিদের কাছ থেকে মরিচ কিনে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন বড় বড় পাইকারি বাজারে বিক্রি করছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। দিনভর বাজার থেকে মরিচ কিনে রাতে ট্রাকে নিয়ে যান পাইকারি বাজারে।
এভাবেই বড় মরিচের বাজার তৈরি হয়েছে। এই বাজারে আষাঢ় মাস থেকে আশ্বিন মাস পর্যন্ত প্রতি দিন সকাল ৯টা থেকে ১২টা পর্যন্ত বসে। কিন্তু করোনাকালীন দুুপর ১২টা থেকে দুপুর ৩টা পর্যন্ত বেচা কেনা চলে। গড়ে প্রতি দিন ৭ থেকে ৮ টন কাঁচা মরিচ কেনাবেচা হচ্ছে। আজকে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
দক্ষিণ লক্ষ্মীপুর ডাক্তারের মোড় মরিচ আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, চলতি মৌসুমের প্রথমদিকে মরিচের অনেক আমদানি ছিল। তখন দাম কম ছিল। বর্তমানে মরিচ শেষের দিকে। যেটুকু বাজারে উঠেছে সেটির দাম বেশি। রোববার থেকে মরিচ কিনছি, ১৫০ থেকে ১৬০ টাকায়। এ দামে প্রান্তিক মরিচ চাষিরা খুশি।
চকশিয়ালী গ্রামের প্রান্তিক চাষি অপু ঢাকা পোস্টকে বলেন, চলতি মৌসুমে এক বিঘা জমিতে কাঁচা মরিচের আবাদ করি। এতে খরচ হয় ১০ হাজার টাকা। বর্তমান বাজারে প্রতি মণ মরিচ সাড়ে ৫ থেকে ৬ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আরও এক-দেড় মাস তুলতে পারবেন। ওই জমি থেকে আরও লক্ষাধিক টাকার মরিচ বিক্রির আশা অপুর।
ঘাসিয়ারা গ্রামের মরিচ তোলা নারীশ্রমিক শিপ্রা রাণী বলেন, সংসারের কাজ সেরে মরিচ তোলার কাজ করি। এক মৌসুমে মরিচ তুলে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা আয় করি। কিন্তু এখন সেটা আর হচ্ছে না। কারণ খেতের বেশির ভাগ মরিচ অতি বৃষ্টিতে গাছ মরে গেছে।
বাংলাদেশ কৃষি ভান্ডার স্বত্বাধিকারী রাহিনুর ইসলাম রায়হান ঢাকা পোস্টকে বলেন, কৃষিপ্রধান জেলা নওগাঁ। এখানে আবহাওয়ার সঙ্গে প্রতিনিয়ত কৃষকদের সংগ্রাম করতে হয়। অতি বৃষ্টিতে সবজির ফুল নষ্ট হয়ে যায়। কয়েকদিন ধরে খুব বৃষ্টি হচ্ছে। মরিচের দাম বেশি হওয়ার কারণ বাজারে আমদানিও কম। দেশব্যাপী জেলার মরিচের চাহিদা বেশি কিন্তু আমদানি কম হওয়ায় দাম ওঠানামা করছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক সামছুল ওদাদুদ ঢাকা পোস্টকে জানান, চলতি বছর জেলায় ১০৫০ হেক্টর জমিতে কাঁচা মরিচের চাষ হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বাম্পার ফলন হয়েছে। বাজারদরও ভালো থাকায় বেশ মুনাফা পাচ্ছেন চাষিরা। উঁচু অঞ্চলের মরিচ খেত আরও এক মাস বা আরও অধিক সময় ফলন দেবে। সবমিলে লাভবান হচ্ছেন চাষিরা।
তিনি আরও বলেন, আমরা প্রতিটি প্রান্তিক চাষিকে সার বীজসহ বিভিন্ন ধরনের সহায়তা করেছি। বেশি করে মরিচ চাষে উদ্বুদ্ধ করতে কৃষি বিভাগ চাষিদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করায় ব্যাপক সফলতা এসেছে।
শামীনূর রহমান/এমএসআর