লুঙ্গির অভাবে স্ত্রীর ওড়না পরে থাকেন শতবর্ষী সুলতান
'ভিক্ষা করে মানুষের বাসার পানি দেয়া ভাত আনি। ভাত শুকিয়ে চাল বানাই। সেই চাল আবার রান্না করে খাই। দুই বেলা ভাত জোটে না, লুঙ্গি কোথায় পাব? টাকার অভাবে বউয়ের ওড়না পরে থাকি।'
কথাগুলো বলছিলেন পটুয়াখালী শহরের ১ নম্বর ওয়ার্ডের প্রথম লেন বোহালগাছিয়া এলাকার শতবর্ষী সুলতান ডাক্তার ও সত্তরোর্ধ্ব সকিনা বেগম ভিক্ষুক দম্পতি।
বিজ্ঞাপন
জানা গেছে, সদর উপজেলার আউলিয়াপুর এলাকার বাসিন্দা মৃত গ্রাম্য ডাক্তার মোছলেমের একমাত্র ছেলে সুলতান। সুলতান ডাক্তার এবং একই এলাকার বাসিন্দা ডাক্তার নূর মোহাম্মদের মেয়ে সকিনা বেগমের পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। এই দম্পতির দুই ছেলে। মোস্তফা ও মোশাররফ।
শতবর্ষী সুলতান ডাক্তার বলেন, করোনার কারণে তিন মাস ঘর থেকে নামতে পারি নাই। করোনার মধ্যে আল্লাহ চালাইছে। মানুষ কিছু কিছু দিছে তা দিয়ে চলছি। মানুষের কাছে ভিক্ষার জন্য গেলে দুই টাকা দিয়ে এক টাকা ফেরত চাই। দিনে ৪০ টাকার ওষুধ লাগে। ওষুধ না খেলে বিছানা থেকে ওঠা দায়। বউকে খাওয়ানোর কথা ছিল কিন্তু এখন বউ আমাকে ভিক্ষা করে খাওয়ায়।
তিনি আরও বলেন, দুই বেলা ভাত খাওয়ার টাকা পাই না। লুঙ্গি কিনমু ক্যামনে? আমার পড়ার মতো লুঙ্গি নেই। পুরান লুঙ্গির সব জায়গায় ছেঁড়া। তাই ঘরে বউয়ের ওড়না পরে থাকি। আমরা একশ টাকা দিয়ে মুন্সিবাড়ির জব্বার দারোগার বাসায় থাকি। তিনি অনেক ভালো মানুষ, আমাদের কষ্ট দেখে থাকতে দিয়েছেন। ঘরে কোনো বিদ্যুৎ নেই। বৃষ্টির দিনেও পানি পড়ে।
স্ত্রী সকিনা বেগম বলেন, আমরা ভিক্ষা করে খাই। স্বামী সুলতান ডাক্তার যৌবনে বড় গাড়ি চালাইছে। তখন সুখের দিন ছিল। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তিনি এখন আর কোনো কাজ করতে পারে না। আমি ভিক্ষা করে যা পাই তা দিয়ে ওষুধ কিনতে চলে যায়। সরকারি কোনো সহায়তা পাই না। বয়স্ক ভাতার জন্য মেম্বার (পটুয়াখালী পৌরসভার ১ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর নিজাম উদ্দিন) অনেক আগে নাম নিয়েছে। কিন্তু এখনও বয়স্কভাতার কোনো খবর নেই।
তিনি আরও বলেন, মানুষের বাসা থেকে পানি দেয়া ভাত ভিক্ষা করি। সেই ভাত শুকানোর পর যখন চাল হয় তখন সেই চাল আবার রান্না করে আমরা খাই। মানুষের বাসার একদিনের তরকারি না ফেলে আমাদের দেয়। তা জ্বাল দিয়ে লাল হলে আমরা সেটা খাই।
এমন খাবার কেন খান, প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, চাল-তরকারি কেনার টাকা নেই। ভিক্ষা করে যে টাকা পাই তা দিয়ে কেরোসিন, বুড়াবুড়ির ওষুধ আর ঘর ভাড়ার পেছনে চলে যায়। সরকার থেকে আমাদের একটু ভাতার ব্যবস্থা করলে ভালোভাবে খেতে পারতাম।
পটুয়াখালী পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর নিজাম উদ্দিন ওরফে কসাই নিজামের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।
এসপি