রাত ৩টার দিকে ঘরের দরজায় ঠকঠক শব্দ। দরজা খুলতেই সামনে সাদা পোশাক পরা দুই নারী। তারা বলতে থাকেন, ‘তোর ছেলেকে দে, পানি খাওয়াব।’ ছেলেকে কোলে দেওয়ার পর দুই নারী বলেন, ‘তোর ছেলেকে এখনই দিয়ে যাব।’ এরপর নবজাতককে নিয়ে চলে যান দুই নারী। কিন্তু অনেক সময় পেরিয়ে গেলেও ছেলেকে নিয়ে না ফেরায় তিনি চিৎকার শুরু করেন।

ময়মনসিংহের তারাকান্দায় ২২ দিন বয়সী নবজাতকের নিখোঁজ হওয়ার পর পুলিশের কাছে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এভাবেই রূপকথার গল্প শোনান মা সাবিকুন্নাহার। এ ঘটনায় নবজাতকের বাবা থানায় অজ্ঞাতনামা মামলা করেন।

তবে শেষ রক্ষা হয়নি মায়ের। শনিবার (৭ আগস্ট) বিকেলে বাড়ির পাশের পুকুর থেকে নবজাতকের মরদেহ উদ্ধারের পর রোববার (৮ আগস্ট) দুপুর পর্যন্ত পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে ঘটনার মূল রহস্য।

পুলিশ জানায়, সন্তানের বয়স ২২ দিন হলেও বুকে দুধ না আসায় খাওয়াতে পারেননি মা সাবিকুন্নাহার। তার শ্বশুর-শাশুড়িই নবজাতককে কাছে রাখতেন ও দেখাশোনা করতেন। সন্তানকে বুকের দুধ না খাওয়াতে পারা ও কাছে না পাওয়ার হতাশা থেকেই সন্তানকে রাতের আঁধারে পুকুরে ফেলে দেন।

নবজাতকের বাবা হুমায়ুন মিয়ার করা মামলায় রোববার বিকেলে আদালতে সোপর্দ করা হলে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দেওয়ান মনিরুজ্জামানের আদালতে সন্তান হত্যার দায় স্বীকার করে এভাবেই স্বীকারোক্তি দেন সাবিকুন্নাহার। এ সময় তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন বলে আদালত সূত্রে জানা গেছে।

জানা গেছে, তারাকান্দা উপজেলার বিসকা ইউনিয়নের লালমা গ্রামের দেড় বছর আগে বিয়ে হওয়া দম্পতি হুমায়ুন মিয়া ও সাবিকুন্নাহারের ঘরে ২২ দিন আগে জন্ম নেয় নবজাতক নাঈম মিয়া। শুক্রবার রাতের শেষ ভাগে শিশুটির নিখোঁজ হওয়া নিয়ে মা সাবিকুন্নাহার ওই গল্প সাজান।

খোঁজাখুঁজির এক পর্যায়ে শনিবার বিকেলে বাড়ির পাশে পুকুরে ভেসে ওঠে নবজাতকের মরদেহ। খবর পেয়ে পুলিশ এসে মরদেহ উদ্ধার করে। কিন্তু শনিবার রাতভর ও রোববার দুপুর পর্যন্ত মা সাবিকুন্নাহারকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে থাকে পুলিশ।

এদিকে নবজাতক সন্তানকে হত্যায় বাবা হুমায়ুন অজ্ঞাতনামা আসামি করে রোববার সকালে একটি হত্যা মামলা করেন। পরে ওই মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করলে হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দেন মা।

তারাকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল খায়ের বলেন, নিজের সন্তানকে হত্যার বিষয়ে স্বীকারোক্তি শেষে আদালতের নির্দেশে মা সাবিকুন্নাহারকে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।

উবায়দুল হক/এনএ