এক পরিবারের তিন ভাইয়ের সবার হাত-পা শুকিয়ে যাচ্ছে
ঠাকুরগাঁও হরিপুর উপজেলার ৩নং বকুয়া ইউনিয়নের বলিহন্ড গ্রামের বাদুল সিংহ ও তার স্ত্রী কাজলী রানীর ঘরে জন্ম হয়েছে তিন ছেলের। তিন ছেলেকে নিয়ে এ দম্পতির সুখের বহু স্বপ্ন থাকলেও বিরল এক রোগ কেড়ে নিয়েছে তাদের সব আশা-আকাঙ্ক্ষা।
এ দম্পতির স্বপ্ন ছিল পড়ালেখা করে বড় হয়ে বাবা-মাকে দেখবে ছেলেরা, পরিবারের অভাব দূর হবে। কিন্তু কী এক অসুখে তাদের তিন সন্তানই এখন পঙ্গু। যত বড় হচ্ছে তাদের হাত-পা সব শুকিয়ে যাচ্ছে। এখন আর চলাফেরা করতে পারে না তারা। বাবা-মায়ের সাহায্য ছাড়া কোনো কাজই করার ক্ষমতা নেই তাদের।
বিজ্ঞাপন
এ দম্পতি জানায়, জন্মের পর অন্যান্য শিশুর মতো স্বাভাবিক জীবন ছিল তাদের। স্কুলে যেত,ঘুড়ে বেড়াতো,খেলতো আবার বাবার কাজেও সহযোগিতা করতো। কিন্তু সব এলোমেলো হয়ে গেল। অভাবের সংসারে তিনজনের চিকিৎসার সামর্থ্যও নেই তাদের।
বাদুল-কাজলীর তিন সন্তানের প্রথমজন রমাকান্ত, বয়স ১৪ বছর। দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় সে প্রথম রোগে আক্রান্ত হয়। এরপর দ্বিতীয় সন্তান জয়ন্ত, বয়স ১২। বড় ভাইয়ের মতো সেও একই রোগে আক্রান্ত হয়। আর তৃতীয় সন্তান হরিদ্রও (৮) সেই রোগে আক্রান্ত হওয়ার পথে। তিন ছেলেকে নিয়ে পরিবারটি এখন পথে বসেছে।
মঙ্গলবার তাদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বারান্দায় বসে রয়েছে তিন ভাই। বাসার কাজের পাশাপাশি সন্তানদের নিয়ে ব্যস্ত থাকছেন মা। সন্তানেরা নিজেরা চলাফেরা করতে পারে না। তাদের সব কাজেই মাকে সহযোগিতা করতে হচ্ছে। তিন সন্তানকে নিয়ে বড় সমস্যায় রয়েছেন তাদের মা। খাওয়া-দাওয়া থেকে শুরু করে গোসল, মল-মূত্র ত্যাগ, মা ছাড়া কিছুই করতে পারে না তারা।
দিনমজুরের কাজ করে বাবা যা আয় করেন তাই দিয়ে সন্তানের খাওয়া দাওয়া ও পরিবারের খরচ চলে। তাদের চিকিৎসা করানোর মতো টাকা-পয়সা নেই বাবার কাছে। কোনো ধরনের সরকারি সহযোগিতাও পান না তারা।
তিন শিশুর ছবি তুলতে গেলে অনেকটা ক্ষোভ নিয়েই দিনমজুর বাবা বলেন, কী হবে এসব ছবি তুলে। কেউ তো আমাদের দিকে তাকায় না। বাচ্চাগুলাকে নিয়ে আছি মহাসমস্যায়।
বাদুলের প্রতিবেশি জয়নাল, রহমত, আজমতসহ কয়েকজন বলেন, জন্মের পরেই ভালো ছিল শিশুরা। কিন্তু বয়স বাড়ার সাথে সাথেই হাত-পা শুকিয়ে যাচ্ছে। বড় ছেলেকে চিকিৎসা করাতে গিয়ে তাদের বাবার সব শেষ হয়েছে। শেষে চিকিৎসক জানিয়েছেন এই রোগের কোনো চিকিৎসা নেই। পরের দুই সন্তানের আর কোনো চিকিৎসা করানো হয়নি। চিকিৎসা করানোর ক্ষমতাও নেই দিনমজুর বাবার। তাই এভাবেই কষ্ট করে দিন চলছে তাদের। কারও কোনো সহযোগিতাও পায়নি পরিবারটি।
বাদুল সিংহ বলেন, অসুস্থ সন্তানদের ভালোমন্দ খাওয়াতে পারি না। তিন বেলা খাবার জোটানোই কষ্ট আমার জন্য, আর চিকিৎসা করাবো কীভাবে। আমি দিনমজুরের কাজ করে যা পাই তা দিয়ে কোনোরকম দিন চলে। আমার নিজের কোনো জমি নেই। মানুষের জমিতে কাজ করি। এই তিন ছেলে ছিল আমার স্বপ্ন। বড় হয়ে তারা আমাদের অভাব দূর করবে। কিন্তু গরিবের স্বপ্ন তো আর পূরণ হলো না। এখন সন্তানদের বাঁচিয়ে রাখতে সমাজের বিত্তবানদের কাছে সহযোগিতা চাই। আমাকে একটু সহযোগিতা করলে বাচ্চাগুলোকে নিয়ে খেয়ে-পড়ে বাঁচতে পারি।
হরিপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, এটি একটি বিরল জেনেটিক রোগ। রোগের নাম হচ্ছে দ্যুশেন মাসকিউলার ডিসট্রফি (ডিএমডি)। এ রোগের এখন পর্যন্ত কোনো চিকিৎসা আবিষ্কার হয়নি। তবে তাদের তৃতীয় সন্তানটি এখনও সেভাবে এই রোগে আক্রান্ত হয়নি। প্রাথমিক ভাবে চিকিৎসা করা গেলে তার তৃতীয় সন্তানটি সুস্থ ভাবে বেচেঁ থাকতে পারবে।
এ ব্যাপারে কেউ সহযোগিতা করতে চাইলে তিন শিশুর বাবা বাদুল সিংহের সঙ্গে এই নাম্বারে (০১৭৫০৫২৪৯৮৪) যোগাযোগ করতে পারবেন।
মো. নাহিদ রেজা/এনএফ