শিকলমুক্ত হলো রবিউল, যুক্ত হলো পাবনা মানসিক হাসপাতালে
১৫ বছরের শিকলে বাঁধা জীবনের অবসান ঘটল ফরিদপুরের বোয়ালমারীর রবিউলের। চিকিৎসার জন্য তাকে পাঠানো হলো পাবনায় অবস্থিত মানসিক হাসপাতালে। মঙ্গলবার (৩ আগস্ট) বিকেলে ওই হাসপাতালে ভর্তি করা হয় রবিউলকে।
এদিন সকাল ৭টার দিকে একটি মাইক্রোবাসে করে রবিউলকে প্রশাসনের উদ্যোগে পাবনার হেমায়েতপুরে পাঠানো হয়। এসময় তার সঙ্গে গেছেন বাবা নুরুল মোল্লা ও ফুফু সাজেদা বেগম।
বিজ্ঞাপন
বোয়ালমারী উপজেলার নির্বাহী অফিসার ঝোটন চন্দের উদ্যোগে উপজেলা সমাজ সেবার অর্থায়নে রবিউলকে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়। এছাড়াও বোয়ালমারী থানা পুলিশের ওসি মোহাম্মদ নুরুল আলম ব্যক্তি উদ্যোগে নগদ অর্থ ও একটি মাইক্রোবাস দিয়ে রবিউলকে পাবনা পাঠানোর ব্যবস্থা করেন।
গতকাল সোমবার (২ আগস্ট) বিকেলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার কার্যালয়ে উপজেলা সমাজসেবা দপ্তরের মাধ্যমে মানসিকভাবে অসুস্থ রবিউল ইসলামের বাবার হাতে ৫ হাজার টাকা, চারটি টি-শার্ট ও চারটি ট্রাউজার তুলে দেন ইউএনও।
রবিউলের চিকিৎসার ব্যবস্থাকারী বোয়ালমারী উপজেলার নির্বাহী অফিসার ঝোটন চন্দ ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিনামূল্যে রবিউলের সুচিকিৎসার জন্য পাবনা মানসিক হাসপাতালে ভর্তির যাবতীয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেই তাকে পাঠানো হয়েছে। পাবনা মানসিক হাসপাতালের পরিচালককে এ সংক্রান্ত একটি চিঠিও দেওয়া হয়েছে। রবিউলের উন্নত চিকিৎসা করা হবে বলে আমরা আশাবাদী।
এ বিষয়ে বোয়ালমারী থানা পুলিশের ওসি মোহাম্মদ নুরুল আলম জানান, রবিউলের খবরটি জানার পরপরই পুলিশ সুপার মো. আলিমুজ্জামানের নির্দেশে তার বাড়ি গিয়ে খোঁজ নিয়েছি। এসময় কিছু আর্থিক সহায়তাও করেছি। যেকোনো প্রয়োজনে ফরিদপুর জেলা পুলিশ তার পাশে থাকবে।
মঙ্গলবার বিকেল ৫টার দিকে মানসিক ভারসাম্যহীন রোগী মো. রবিউলের ভর্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পাবনা মানসিক হাসপাতালের পরিচালক আবুল বাশার মো. আসাদুজ্জামান। তিনি বলেন, বোয়ালমারীর ইউএনও’র একটি দাপ্তরিক চিঠি পেয়ে রোগীকে ভর্তি করা হয়েছে। স্বাভাবিকভাবে ওই রোগীর চিকিৎসা শুরু হয়েছে। কিছুদিন পরে তার চিকিৎসার অগ্রগতি জানাতে পারব। আমরা তাকে তার স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে দিতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।
প্রসঙ্গত, ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার ময়না ইউনিয়নের বাসিন্দা মো. রবিউল মোল্লা (৩৫)। ১৫ বছর ধরে বাড়ির একটি ঘরে তার কোমরে শিকল বেঁধে আটকে রাখা হয়। দীর্ঘদিন তাকে ফরিদপুর ও ঢাকার বিভিন্ন ডাক্তার, কবিরাজ দেখিয়েও অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি।
তার অসহায় জীবনের খবরটি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত ও প্রচারিত হলে প্রশাসনের নজরে আসে। এরই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার রবিউলকে পাবনা মানসিক হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়।
জহির হোসেন/এমএএস