ড. সরকার সুজিত কুমার

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. সরকার সুজিত কুমারকে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়েছে। এই অধ্যাপকের অভিযোগ, নাটোর-২ আসনের সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুলের হয়ে সন্ত্রাসীরা তাকে এ হুমকি দিয়েছেন। এ নিয়ে নিরাপত্তা চেয়ে নগরীর বোয়ালিয়া মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন তিনি।

গবেষক ড. সরকার সুজিত কুমার পরিবার নিয়ে রাজশাহী নগরীর কুমারপাড়া এলাকায় বসবাস করেন। এই ঘটনায় নিজের এবং পরিবারের নিরাপত্তায় উদ্বেগ জানিয়েছেন তিনি। ২৯ জুলাই এই জিডির পর নগরীর বোয়ালিয়া মডেল থানা পুলিশ তার সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছে।

জিডিতে ওই অধ্যাপক উল্লেখ্য করেন, মহান মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক তার রচিত চারটি গ্রন্থের মধ্যে একটি ‘নাটোর জেলার ইতিহাস এতিহ্য ও মুক্তিযুদ্ধ’ অন্যতম। ২০০৮ সালে এই গ্রন্থটি প্রকাশ করা হয়। পরের বছর ২০১০ সালে গ্রন্থটি প্রথম সংস্করণ প্রকাশ পায়। এরপর ২০২১ সালের বই মেলায় প্রকাশ পায় দ্বিতীয় সংস্করণ।

প্রথম গ্রন্থ প্রকাশের ৩১০ পৃষ্ঠায়, প্রথম সংস্করণের ৩৬১ পৃষ্ঠায় এবং দ্বিতীয় সংস্করণের ৬০০ পৃষ্ঠায় রাজাকার হাসান আলীর নাম মুদ্রিত হয়েছে। বীর মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ ও স্বাধীনতাবিরোধীদের নাম মাঠপর্যায়ে ৩ বছর যোগাযোগ করে নাটোর জেলার গ্রামগঞ্জে ঘুরে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে সাক্ষাৎকার নিয়ে ছবি তুলে তথ্য সন্নিবেশিত করেছেন তিনি।

একাধিক সাক্ষাৎকারদাতা নাটোর কান্দিভিটার (পুরাতন কোর্টপাড়া) হাসান আলী একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় একজন ‘কুখ্যাত রাজাকার’ ছিল বলে তথ্য দিয়েছেন।

ড. সরকার সুজিত কুমার জানান, রাজাকার হাসান আলী সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুলের পিতা, এটি তিনি জানতেন না। কিন্তু বর্তমানে নাটোর জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ গঠন নিয়ে নিজেদের মধ্যে মতবিরোধ সৃষ্টি হলে এই বইটি আলোচনায় আসে।

এরপর এমপি শিমুলের পক্ষ নিয়ে ইতিমধ্যেই আমাকে কিছু অপরিচিত সন্ত্রাসী জীবননাশের হুমকি বারবার দিয়ে যাচ্ছেন। তিনি আরও বলেন, তিনি একজন নিরস্ত্র শিক্ষক। এখন তিনি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে তিনি সাধারণ ডায়েরি করেছেন।

অভিযোগ বিষয়ে জানতে কয়েক দফা চেষ্টা করেও সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুলের মোবাইলে সংযোগ পাওয়া যায়নি। তবে তার ব্যক্তিগত সহকারী আকরামুল ইসলাম জানান, সংসদ সদস্যের বাবা রাজাকার তো ছিলেনই না, তিনি নানাভাবে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা করেছেন।

তিনি আরও জানান, ২৮ জুলাই সংবাদ সম্মেলন করে জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড ইউনিট এমন তথ্যের প্রতিবাদ জানিয়েছে। কিন্তু সংসদ সদস্য এর কোনো প্রতিক্রিয়া জানাননি। তার হয়ে ওই অধ্যাপককে কেউ হুমকিও দেননি। এটি ষড়যন্ত্র। পুলিশ তদন্ত করে প্রকৃত অপরাধীদের খুঁজে বের করবে।

এ বিষয়ে জিডির তদন্তকারী কর্মকর্তা নগরীর বোয়ালিয়া মডেল তানার উপপরিদর্শক (এসআই) নাদিম উদ্দিন বলেন, তদন্ত করে হুমকির সত্যতা যাচাই করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ জন্য তিনি বাদী এবং বিবাদীসহ সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলবেন।

ফেরদৌস সিদ্দিকী/এমএসআর