ফতেপুর ওভারপাসে স্বস্তি
একটা সময় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনীর ফতেপুর এলাকাসহ কয়েক কিলোমিটার জুড়ে যানজট লেগেই থাকতো। এমনকি ট্রেনের সঙ্গে সংঘর্ষ, দুর্ঘটনার ফলে ব্যাপক প্রাণহানি ঘটতো। কিন্তু রেলওয়ে ওভারপাস হওয়ায় কমে গেছে যানজট, দুর্ঘটনা। ফলে ওভারপাসের সুবিধা পাচ্ছে পুরো দেশবাসী।
জানা গেছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফতেহপুর রেলক্রসিংয়ে যানজট ছিল নিত্যদিনের ঘটনা। এ যানজটের কারণে যানবাহন ও পণ্যবাহী গাড়িগুলোকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকতে হতো। ফেনী থেকে তিন ঘণ্টার পথ অতিক্রম করতে কখনো কখনো ৬-১২ ঘণ্টাও লেগে যেত। এতে মানুষের সময় নষ্টসহ কাঁচামালের ব্যাপক ক্ষতি হতো। রেললাইনের ওপর দিয়ে গাড়ি যাওয়ার সময় ঝাঁকুনির ফলে গাড়ির ইঞ্জিন ও অন্যান্য যন্ত্রাংশের ক্ষতি হতো। দীর্ঘ সময় যানজটে আটকে থাকার কারণে যাত্রীদের ভ্রমণে একঘেয়েমি তৈরি হতো। অনেকেই আবার গাড়িতে অসুস্থ হয়ে যেতেন।
এসব সমস্যা নিরসনে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনীর ফতেপুর রেলক্রসিংয়ে ওভারপাস নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়। ২০১২ সালে ওভারপাস নির্মাণের কাজ শুরু হয়। ২০১৭ সালের ১৪ আগস্ট গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ওভারপাসের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বিজ্ঞাপন
এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, এ ওভারপাস নির্মাণের ফলে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে গাড়িগুলো দ্রুত গন্তব্যে চলে যাচ্ছে। বর্তমানে নেই কোনো যানজট। এতে সময় যেমন সাশ্রয় হয়েছে, তেমনি মানুষের ভোগান্তিও অনেক কমে গেছে।
একাধিক যাত্রী ও চালকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ফতেহপুর ওভারপাস না থাকার কারণে দীর্ঘ প্রায় ৩ থেকে ৪ বছর তীব্র যানজটের শিকার হয়েছে যাত্রীরা। বর্তমানে এটি চালুর মাধ্যমে লাখ লাখ মানুষ ভোগান্তি থেকে রক্ষা পেয়েছেন।
সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফতেপুরে রেলওয়ে ওভারপাসটি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়নের সহায়তায় আল আমিন কনস্ট্রাকশন নামের একটি প্রতিষ্ঠান ৬৮ কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়ন করেছে। ২০১৭ সালের ১৫ ও ২০ মে ফতেপুর ওভারপাসের রাজধানী ঢাকামুখী দুটি লেন খুলে দেয় নির্মাণ কাজে দায়িত্বে থাকা সেনাবাহিনী। এ সময় সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ার-ইন চিফ মেজর জেনারেল সিদ্দিকুর রহমান সরকার, নির্মাণ প্রতিষ্ঠান আল আমিন কনস্ট্রাকশনের চেয়ারম্যান কবির আহমদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
তয়ন নামের স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, একটা সময় এখানে যানজট লেগেই থাকতো। মানুষের ভোগান্তির শেষ ছিল না। এ ওভারপাসটির কারণে মানুষ সে ভোগান্তি থেকে রেহাই পেয়েছে। সেতুটির জন্য ফেনীবাসী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে চির কৃতজ্ঞ থাকবে।
ঘুরতে আসা পর্যটক আবসার জানান, ওভারপাসে দাঁড়িয়ে রেললাইন দেখতে অনেক সুন্দর লাগে। এটি যেমন সুন্দর তেমনি আমাদের অর্থনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
স্টারলাইন পরিবহনের পরিচালক মো. মাঈন উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ওভারপাস হওয়ার আগে এই স্থানে লম্বা সময় বাস আটকে থাকতো। এতে অনেক সময় নষ্ট হতো। মাঝে মাঝে বাসের সিডিউল বিপর্যয় ঘটতো। রেললাইনের ওপর দিয়ে যাওয়ার সময় ঝাঁকুনির ফলে গাড়ির ক্ষতি হতো। এই ক্ষতি সারানোর জন্য অতিরিক্ত অর্থ খরচ হতো। এখন ওভারপাস হওয়ার ফলে এসব সমস্যার সমাধান হয়েছে। যাত্রীরা এখন আনন্দের সঙ্গে ভ্রমণ করেন এবং আমাদের গাড়ি মেরামতে যে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় হতো সেটিও কমে এসেছে।
ফেনী মহিপাল হাইওয়ে থানা পুলিশের ভারপাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আসাদুজ্জামান বলেন, আমাদের এখানে প্রতিনিয়ত যানজট লেগে থাকতো। দুর্ঘটনা হতো, দুর্ঘটনায় মানুষের মৃত্যু হতো। কিন্তু ওভারপাস হওয়ার পরে এখন তা আর হচ্ছে না। আমাদের এখানে দুর্ঘটনার হার কমে গেছে। মানুষ স্বাচ্ছন্দ্যে তার গন্তব্য পৌঁছাচ্ছে।
ফেনী জেলা প্রশাসক মো. ওয়াহিদুজ্জামান ঢাকা পোস্টকে বলেন, এ ওভারপাসটি পুরো দেশবাসীর জন্য আশীর্বাদ। এর উপকার পাচ্ছে সারা দেশবাসী। ওভারপাসটির হওয়ার কারণে এ অঞ্চলে ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কে যানজট নিরসন হয়েছে। পণ্যবাহী গাড়িগুলো দ্রুত সময়ের মধ্য গন্তব্যে পৌঁছাতে পারছে। সর্বোপরি আমাদের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতে এটি ভূমিকা পালন করছে।
উল্লেখ্য, ২০১২ সালে প্রকল্পটি নির্মাণ কাজ শুরু করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘মেসার্স শিপো পিবিএল’। নির্ধারিত মেয়াদে কাজ শেষ না করে কাজ ফেলে চলে যায় প্রতিষ্ঠানটি। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর ২০১৭ সালে কাজটি দেয়া হয় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশনকে। সেনাবাহিনী আল আমিন কনস্ট্রাকশন নামের একটি প্রতিষ্ঠান ৬৮ কোটি টাকা ব্যয়ে এটি বাস্তবায়ন করে। ওভারপাসটির দৈর্ঘ্য ৮৬ দশমিক ৭৯ মিটার, অ্যাপ্রোচ রোড়ের দৈর্ঘ্য ৭৫৫ মিটার, এর মধ্যে ঢাকার দিকে ৩৪৭ মিটার, চট্টগ্রামের দিকে ৪০৮ মিটার, সর্বমোট গার্ডার ৩০টি, পিলার ৮টি, পাইল ৪৯০টি।
এসপি