‘আমি টাকাগুলো বান দিয়া রাখিছি। ছেলেটা টেকা থাপা দিয়া নিয়া দৌড় মাইরেছে। আমি চাল রেখে পিছনে গেছি, ধরতে পারলাম না। ছেলে দৌড়ে চলে গেছে। আমি ডাক্তারের কাছে বাকি করে ওষুধ খায়েছি। আগের টেকা দেব। পরে আবার ওষুধ কিনব। আমি এখন ডাক্তারের টেকা দিব কোথা থেকে?’

ভিক্ষা করে সংগ্রহ করা সব টাকা হারিয়ে কাঁদতে কাঁদতে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন অসহায় ভিক্ষুক নিছারন বেগম। 

সোমবার (২৬ জুলাই) সকালে চুয়াডাঙ্গার সদর উপজেলার সরোজগঞ্জ বাজারের একটি তেলপাম্পের অদূরে ষাটোর্ধ্ব ভিক্ষুক নিছারনের টাকা নিয়ে পালিয়ে যায় এক প্রতারক। টাকাগুলো হারিয়ে তিনি এখন পথে পথে কাঁদছেন আর বিচার চাইছেন।

নিছারন বেগম চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার শংকরচন্দ্র ইউনিয়নের কিরনগাছী গ্রামের মৃত তজির উদ্দীনের স্ত্রী।

স্থানীয়রা জানান, নিছারন বেগম মানুষের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে ভিক্ষা করেন। এতে চাল-ডাল যা পান, সেগুলো থেকে কিছু বিক্রি করে সেই টাকা দিয়ে সবজি কেনেন এবং চিকিৎসায় ব্যয় করেন। সোমবার সকালে জমানো টাকাগুলো সরোজগঞ্জ বাজারে তেলপাম্পের অদূরে বসে টাকাগুলো গুনছিলেন নিছারন বেগম। এ সময় এক যুবক এসে টাকাগুলো নিয়ে পালিয়ে যায়। মানুষ কতটা নিচু মনের মানুষ হলে এমন কাজটি করতে পারে বলে মন্তব্য করেন তারা। তাকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিরও দাবি করেন তারা।

নিছারন বেগম বলেন, প্রায় ১০ বছর আগে আমার স্বামী মারা যায়। এরপর থেকে আমি ভিক্ষাবৃত্তি করে জীবিকা নির্বাহ করছি। অনেক কষ্টে খেয়ে না খেয়ে টাকাগুলো জমিয়েছিলাম চিকিৎসার খরচের জন্য। এখন আমি কী করব। আমার চিকিৎসা কীভাবে হবে? আমি বড় অসহায় হয়ে গেলাম বলে আবার কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।

এদিকে নেছারন বেগমের বয়স ৬৫ বছর হলেও তার ভাগ্যে জোটেনি বিধবা কিংবা বয়স্ক ভাতার কার্ড। এ প্রসঙ্গে স্থানীয় ইউপি সদস্য লিটন শেখ টিটন ঢাকা পোস্টকে বলেন, বয়স্ক ভাতার কার্ড পাওয়ার জন্য তার উপযুক্ত বয়স এখনো হয় নাই। তবে বিধবা ভাতার একটি কার্ড করে দেওয়া হবে তাকে।

সরোজগঞ্জ পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ (এসআই) নিখিল চন্দ্র অধিকারী ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। তার সঙ্গে যেটা ঘটেছে, এটা খুবই দুঃখজনক। আমার কাছে এখনো কেউ কোনো অভিযোগ করেনি। অভিযোগ করলে বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখা হবে।

আফজালুল হক/এনএ