৬৫ দিন পর সাগরে নেমেছেন ভোলার উপকূলীয় এলাকার জেলেরা। শুক্রবার (২৪ জুলাই) মধ্যরাত থেকে জাল, ফিশিংবোটসহ অন্যান্য সরঞ্জাম নিয়ে সাগরে মাছ ধরতে নেমেছেন তারা। সাগরে ইলিশ ধরে বিগত দুই মাসের ঋণ পরিশোধের পাশাপাশি ঘুরে দাড়াতে পারবেন-এমন আশায় ছিলেন ভোলার জেলেরা। কিন্তু বর্ষা এলেও ভরা মৌসুমে কাঙ্ক্ষিত ইলিশের দেখা না পাওয়ায় হতাশ তারা। দিনরাত জাল ফেলে ৫/৭টি জাটকা ইলিশ নিয়ে ফিরতে হয়েছে তাদেরকে। 

কথা হয় ভোলার লালমোহন উপজেলার বাতির খাল এলাকার জেলে ওসমান মাঝির সঙ্গে। তিনি বলেন, গত দুই মাস সাগরে মাছ ধরা বন্ধ আছিল, আমরা কেউ মাছ ধরতে যাই নাই। ধার-দেনা কইরা পোলা-মাইয়া লইয়া কষ্টে দিন কাটাইছি। এখন দুইটা ভালোমন্দ খামু, পোলা-মাইয়া লইয়া ভালোভাবে থাকমু ভাবছি। কিন্তু জালে মাছ পড়ে না। কী দিয়া কী করমু বুঝতাছি না।

মনপুরা উপজেলার রামনেওয়াজ মাছ ঘাটের সালাউদ্দিন মাঝি বলেন, ৬৫ দিন পর মাছ ধরতে গেছিলাম, আগের মতো জালে মাছ পড়ে না। দুই মাস অভিযান দিয়া কী লাভ হইলো। অভিযানে আমাগো যেই কষ্ট ছিল এখনও তার চেয়ে কম না। ধারদেনা কইরা জাল কিনছি। এখন নদীতে যাইয়া মাছ পাই না।

দৌলতখান উপজেলার চৌকিঘাটের জেলে মাকসুদ হানিফসহ অন্যরা জানান, তারা সবাই সাগরে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন। ইলিশ ধরায় নিষেধাজ্ঞা থাকায় তাদের অনেকেই মাছ ধরতে যাননি। বৈরী আবহাওয়ার কারণে সাগরে যাননি, আবহাওয়া ভালো হলে সাগরে যাবেন। সাগরে গিয়ে বিগত দিনের ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার আশায় আছেন তারা।

জেলে ও মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি এরশাদ মাঝি বলেন, সাগরে মাছ ধরা শুরুর প্রথমদিনে জেলার ৮০ ভাগ জেলে মাছ ধরতে গেছেন। তারা এই দিনের জন্য অপেক্ষায় ছিলেন। এখন অপেক্ষার অবসান হয়েছে। তবে নদীতে তেমন একটা মাছ না পরলেও আমরা আশা করছি সাগরে ঝাঁকে ঝাঁকে মাছ পড়বে।

জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, সাগরে মাছ ধরেন জেলায় এমন নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ৬৩ হাজার ৯৫৪ জন। এদের মধ্যে সদর উপজেলার ৩ হাজার ৬৯৮ জন, বোরহানউদ্দিনের ৭ হাজার ৬৫০ জন, দৌলতখানের ১১ হাজার ৫৫০ জন, লালমোহনের ৮ হাজার ৮০৪ জন, তজুমদ্দিনের ৪ হাজার ৫০৬ জন, চরফ্যাশনের ১৭ হাজার ৫৬১ জন ও মনপুরা উপজেলার ১০ হাজার ১৮৫ জন রয়েছেন। এর বাইরেও অনেক জেলে রয়েছে।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এসএম আজহারুল ইসলাম জানান, জলবায়ু পরিবর্তনের পাশাপাশি কম বৃষ্টি হওয়ায় নদীতে নোনা পানির পরিমাণ বেড়ে গিয়ে ইলিশের সংখ্যা কমছে। সাগরে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে। এখন জেলেদের জালে কাঙ্ক্ষিত পরিমাণ ইলিশ ধরা পড়বে। নিষেধাজ্ঞার সময়ে জেলেরা মাছ না ধরায় নদী ও সাগরে মাছের উৎপাদন বেড়েছে।

উল্লেখ্য, সাগরে মাছের প্রজনন ও উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে ইলিশসহ সকল প্রজাতির মাছ ধরার ওপর গত ১৯ মে মধ্যরাত থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা ছিল। 

আরএআর