বগুড়ায় ফেলে দেওয়া হলো ১৪ হাজার পশুর চামড়া
বগুড়ায় কোরবানির ছাগলের চামড়া যাচ্ছে ভাগাড়ে। সেইসঙ্গে নিম্নমানের গরুর চামড়াও। রাস্তার পাশে স্তূপ আকারে পড়ে থাকা চামড়াগুলো ট্রাকে করে নিয়ে শহরের অদূরে ভাগাড়ে ফেলছেন পৌরসভার পরিচ্ছন্নকর্মীরা।
চাহিদা অনুযায়ী ব্যবসায়ীরা তাদের প্রয়োজনীয় চামড়া সংগ্রহ করতে পারেনি বলেও জানিয়েছে সাধারণ চামড়া ব্যবসায়ী সমিতি। বৃহস্পতিবার (২২ জুলাই) দুপুরে বগুড়া পৌর এলাকার বাদুরতলা, চক সুত্রাপুর, চামড়াগুদাম লেন এলাকার রাস্তার পাশে বিভিন্নস্থানে স্তূপ আকারে কোরবানি পশু ছাগল, গরু ও গরুর কান ও মাথার চামড়া ফেলে দিয়েছে ব্যবসায়ীরা।
বিজ্ঞাপন
সেগুলো পচে গন্ধ বের হচ্ছে। তবে ফেলে যাওয়া চামড়ার মধ্যে ছাগলের চামড়ার সংখ্যা বেশি। গরুর চামড়াও রয়েছে তবে সেগুলো নিম্নমানের বলে জানালেন ব্যবসায়ীরা। বগুড়া পৌরসভার পরিচ্ছন্নকর্মীরা জানান, সকাল ৬টা থেকে শহরের বিভিন্নস্থান থেকে কোরবানির পশুর বর্জ্য অপসারণে কাজ করছেন তারা। তবে বগুড়া শহরের অন্যান্য এলাকায় কোরবানির পশুর বর্জ্য পরিষ্কার করতে কাজ করছি।
তিনি আরও জানান, বাদুরতলা, চকসুত্রাপুর, চামড়াগুদাম এলাকায় কোরবানির পশুর বর্জ্য নেই। তবে এখানে ফেলে রাখা হয়েছে স্তুপ আকারে ছাগল ও গরুর চামড়া। সঙ্গে রয়েছে গরুর কান, লেজ ও মাথার চামড়া। এগুলো পচে গেছে। বিধায় খুব গন্ধ বের হচ্ছে। তাই এগুলো নিয়ে গিয়ে ভাগাড়ে ফেলা হচ্ছে।
চামড়া ব্যবসায়ী ছারোয়ার সাজ্জাদ জানান, রাস্তার পাশে বেশির ভাগই কোরবানির পশু ছাগলের চামড়া রয়েছে। সঙ্গে অনেক নিম্নমানের গরুর চামড়াও রয়েছে। এবার কোনো ব্যবসায়ী তার চাহিদা মতো চামড়া কিনতে পারেনি। ছাগলের চামড়ার চাহিদা প্রতিবারই কম থাকে। তবে এবার মৌসুমী ব্যবসায়ীরা যারা ছাগলের চামড়া কিনেছে তারা বেশির ভাগই লোকসানের মুখ দেখেছে। কারণ ছাগলের চামড়ার দাম ১০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৩০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আর ব্যবসায়ীরা তা কিনতে গিয়ে কম দাম দিয়েছে। অনেকে রাগ করে চামড়া ফেলে দিয়ে গেছে। আর সেইসব চামড়া রাস্তার পাশে পড়ে আছে। আজ পৌরসভার ট্রাকে করে ফেলে যাওয়া চামড়াগুলো তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
বুধবার (২১ জুলাই) বগুড়ার চামড়া বাজার ঘুরে দেখা গেছে, শহরের থানামোড় থেকে বাদুরতলা হয়ে চকসুত্রাপুর চামড়াগুদাম এলাকা অব্দি বসেছিল। চামড়া বাজারে কোরবানি পশুর চামড়া কেনাবেচা হয়। এবার কোরবানির পশু গরুর চামড়া সর্বনিম্ন ৩০০ টাকা ও সর্বোচ্চ ৮৫০ টাকা ও ছাগলের চামড়া ১০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৪০ টাকা পর্যন্ত কেনাবেচা করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে চকসুত্রাপুর এলাকায় কয়েকটি ছাগলের চামড়া ফেলে দিতে দেখা যায় স্থানীয় এক মাদরাসা ও লিল্লাহ বোর্ডিংয়ের এক হুজুরকে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই হুজুর জানান, ঈদের পরের দিন মাদরাসার জন্য ৭টি গরুর চামড়া ও ১১টি খাসির চামড়া দান হিসেবে পেয়েছেন। গরুর চামড়াগুলো ৭০০ টাকা দরে বিক্রি করেছি। কিন্তু কেউ খাসির চামড়া কিনতে চাইছেন না। বেশ কয়েকটি দোকান ঘুরেছি। কিন্তু কেউ নিবেন না বলে জানান তিনি।
চকসুত্রাপুর এলাকার সেলুনের কর্মী আলিম ও শুবল জানান, সকাল ১০টায় দোকানে আসছি। কয়েকজন খদ্দের মোবাইল ফোনে কল করেছেন চুল দাড়ি কাটাবেন বলে। এসে দেখি দোকানের সামনে শতশত খাসির চামড়ার স্তুপ হয়ে পড়ে আছে। কে রেখে গেছে কিছুই জানিনা। আশপাশের দোকানদাররা জানিয়েছে গতকাল রাতে অনেক চামড়া ব্যবসায়ী এগুলো ফেলে দিয়ে গেছে। পচে দুর্গন্ধ বের হচ্ছে। বেলা ১১টা থেকে পৌরসভার লোকজন ফেলে যাওয়া চামড়াগুলো নিয়ে যাচ্ছে ট্রাকে করে।
চামড়া ব্যবসায়ী তবারক সরকার জানান, এবার চাহিদা ছিল প্রায় ১০ হাজার চামড়ার। ৩ হাজারের কাছাকাছি চামড়া কিনতে পেরেছি। ছাগলের চামড়া একটাও কিনি নাই। কারণ ছাগলের চামড়া কিনলে খরচ বেশি হয়। মানে খাজনার চেয়ে বাজনা বেশি হয়। অনেকেই কিনেছে। কিন্তু চাহিদার বেশি কেউ ছাগলের চামড়া কিনে না। তাই রাস্তায় ছাগলের চামড়া অনেক মৌসুমী ব্যবসায়ি দাম না পেয়ে ফেলে গেছে।
বিকেল ৩টার দিকে বগুড়া সদরের গোকুল এলাকায় ময়লার ভাগাড়ে গিয়ে দেখা যায়, পৌরসভার ট্রাকে করে পরিচ্ছন্নকর্মীরা পচে যাওয়া চামড়াগুলো ফেলে দিচ্ছে। তারা জানায়, পৌর এলাকার ৪ ও ৫নং ওয়ার্ডের বেশির ভাগ কোরবানির পশুর চামড়া এখানে ফেলা হচ্ছে। ১০ থেকে ১২ হাজার খাসির চামড়া ও ২ হাজার গরুর পচা চামড়া ফেলেছেন সকাল থেকে। আর অল্প কিছু রয়েছে।
বগুড়া পৌরসভার মেয়র রেজাউল করিম বাদশা জানান, আমরা চেষ্টা করছি পৌর এলাকার কোরবানির পশুর চামড়া বা বর্জ্য যাই থাকুক না কেন, তা দ্রুত অপসারণ করার। সকাল থেকে পৌর পরিচ্ছন্নকর্মীরা পৌর এলাকার সকল ওয়ার্ডে কাজ করছে বর্জ্য অপসারণে।
সাধারণ চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মতিন সরকার জানান, নিম্নমানের গরুর চামড়া ফেলে দেয়া হচ্ছে পচে যাওয়ার কারণে। ছাগলের চামড়ার চাহিদা কম থাকে। এবার মৌসুমী ব্যবসায়ীরা দাম না পেয়ে তাদের ছাগলের চামড়াগুলো ফেলে দিয়ে গেছে। আমরা চেষ্টা করছি যত দ্রুত সম্ভব চামড়াগুলো অপসারণ করার।
সাখাওয়াত হোসেন জনি/এমএএস