একসঙ্গে কোরবানি দেন ৩ গ্রামের মানুষ
কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার পাটুয়াভাঙ্গা ইউনিয়নের জুনাইল, মাইজহাটি ও বিশুহাটি গ্রামের শতাধিক মানুষ দীর্ঘদিন ধরে একই মাঠে কোরবানি দেন। যে কারণে কোরবানির মাংসের জন্য তিন গ্রামের গরিব মানুষদের চিন্তা করতে হয় না। কোরবানির মাঠ থেকেই জবাইকৃত পশুর এক তৃতীয়াংশ মাংস বণ্টনের রীতি এখনো প্রচলিত আছে সেখানে। যাদের কোরবানি দেওয়ার সামর্থ্য নেই তাদের ঘরে ঘরে পৌঁছে যায় মাংস। ফলে তিন গ্রামের গরিব মানুষদের মাংসের জন্য আর অন্য কোথাও যেতে হয় না।
জুনাইল, মাইজহাটি ও বিশুহাটি এ তিন গ্রামের মানুষ একটি পরিবারে মতো। তারা একই সঙ্গে ঈদের আনন্দে মেতে ওঠেন। দেখলে মনে হবে এ তিন গ্রামের সবাই কোরবানি দিচ্ছেন। বহু বছর ধরে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনকে জোরদার করতে ধর্মীয় রীতি মেনে একই মাঠে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য পশু কোরবানি দেন এ তিন গ্রামের সামর্থ্যবানেরা। তিন গ্রামের মানুষের এমন ব্যতিক্রমী কোরবানির আয়োজন চলছে যুগ যুগ ধরে। একসঙ্গে পশু কোরবানি দেওয়া এখানে তিন গ্রামের রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এতে করে সামাজিক হৃদ্যতা বিকশিত হওয়ার পাশাপাশি ভালো কাজে উৎসাহ পাচ্ছে এলাকাবাসী।
এলাকাবাসী জানায়, এই তিন গ্রামের মুসল্লিরা তাদের গরু, ছাগল, মহিষ, ভেড়া কোরবানির দেওয়ার জন্য একই মাঠে এনে জড়ো করেন। কোরবানির পর রীতি অনুযায়ী প্রত্যেকের প্রাপ্ত মাংস থেকে গরিবদের জন্য নির্ধারিত অংশ আলাদা করে একটি নির্দিষ্ট জায়গায় রাখেন। এসব মাংস গ্রামের দরিদ্রদের মাঝে সমহারে বণ্টন করা হয়। গ্রামে এই বণ্টন সরকারি বণ্টন হিসেবে পরিচিত। ওই মাংস তালিকা করে গরিবদের বাড়িতে বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। যুগ যুগ ধরে এ নিয়ম চলে আসছে পাকুন্দিয়ার এ তিন গ্রামে। মাংসের জন্য কাউতে ঘুরতে হয় না কারও দ্বারে দ্বারে। সামাজিক ও ধর্মীয় সম্প্রীতির এই মেলবন্ধন চলছে যুগ যুগ ধরে।
পূর্বপুরুষের ঐতিহ্য ধরে রাখার জন্য সামাজিক এ রীতিকে নতুন প্রজন্ম মেনে আসছে পরম শ্রদ্ধায়। সাম্য, মৈত্রী, ভ্রাতৃত্ব ও সহানুভূতিশীলতার এক উজ্জল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে পাকুন্দিয়ার জুনাইল, মাইজহাটি ও বিশুহাটি গ্রামের বাসিন্দারা।
স্থানীয় বাসিন্দা আফজাল হোসাইন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঈদ মুসলমানদের বৃহত্তম উৎসব। কোরবানির মাঠে একসঙ্গে পশু কোরবানি করা এবং গরিবদের জন্য মাংসের নির্ধারিত অংশ সামাজিকভাবে বণ্টন করার রীতি নতুন প্রজন্মকে ইসলামের সুমহান শিক্ষায় উজ্জীবিত করবে।
এলাকার মুরব্বি আলালউদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, একসঙ্গে বৃহত্তর জামাতে ঈদের নামাজ আদায় করা, কোরবানির মাঠে অসংখ্য মানুষ একসঙ্গে তাদের পশু কোরবানি করার দীর্ঘদিনের রীতি আমাদের এ তিন গ্রামের মানুষ প্রতি বছর মেনে আসছে। তিন গ্রামের সবার মাঝে মাংস বিতরণ করা হয়। তবে কবে থেকে এই রীতি চালু হয়েছে তা আমার জানা নেই। এ রীতি মুসলমানদের মধ্যে ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধন আরও সুদৃঢ় করবে।
স্থানীয় মসজিদের ইমাম মাওলানা নুরুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, মুসলিম জাতির পিতা হজরত ইব্রাহিম (আ.) এর সময় থেকে সামর্থ্যবান মুসলমানরা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য পশু কোরবানি দিয়ে আসছেন। আমাদের তিন এলাকার সামর্থ্যবান মুসলমানরাও দীর্ঘদিন ধরে একসঙ্গে পশু কোরবানি দিয়ে আসছেন। আমিসহ আরও কয়েকজন মাওলানা পশু জবাই করে দিয়ে এ উদ্যোগে সহায়তা করি। পরে এখান থেকে মাংস বণ্টন করে এলাকার সব গরিবদের বাড়িতে পাঠানো হয়। যুগ যুগ ধরে এ নিয়ম চলবে এটাই প্রত্যাশা করি।
এসকে রাসেল/আরএআর
বিজ্ঞাপন