উত্তরবঙ্গের হাজার হাজার গরু ব্যবসায়ী ঈদুল আজহা উপলক্ষে কোরবানির গরু নিয়ে গিয়েছিলেন রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্তে। ভেবেছিলেন একটু লাভের মুখ দেখবেন। বাড়িতে ফিরে মা-বাবা, স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে ঈদ উদযাপন করবেন। কিন্তু সে আশার গুড়ে বালি। প্রায় এক সপ্তাহ ধরে ঢাকায় থেকেও বিক্রি করতে পারেননি সিংহভাগ গরু। তাই একবুক ভাঙা স্বপ্ন নিয়ে ঈদের দিন সকালে বাড়ির পথ ধরেছেন তারা।

ঈদুল আজহার দিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত মহাসড়কে ঘুরে দেখা গেছে, শত শত ট্রাক-পিকআপে হাজার হাজার গরু অবিক্রীত অবস্থায় উত্তরবঙ্গে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। ক্রেতা কম ও করোনাভাইরাসের কারণ উল্লেখ করলেও অনলাইনে গরু বিক্রিকেও কারণ হিসেবে দেখছেন তারা। তবে সবচেয়ে বড় দোষ দিচ্ছেন নিজেদের ভাগ্যকেই।

ঢাকা-উত্তরবঙ্গের হাটিকুমরুল-বনপাড়া মহাসড়কের চলনবিল-অধ্যুষিত ৮ নং সেতুর ওপর দুপুর ৩টার দিকে কথা হয় চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুর পৌরসভার জনতা স্কুল এলাকার গরু ব্যবসায়ী মো. আব্দুল মান্নান, আনিসুর রহমান ও বক্কার আলীর সঙ্গে।

এ কদিনে ধকল তো আর কম যায়নি। তাই সড়কে গাছের ছায়ায় শুয়ে বিশ্রাম নিচ্ছেন তারা। তাদের সঙ্গে আরও অনেককেই দেখা যায় মলিন মুখে বসে আছেন। হতাশা ও দীর্ঘদিনের অক্লান্ত কষ্টের ছাপ সবার চেহারায়। যেন ইচ্ছে করলেও পারছেন না প্রকাশ করতে, পারছেন না সইতেও।

ব্যাপারী আব্দুল মান্নান ঢাকা পোস্টকে বলেন, চাঁপাইয়ের রহনপুর থেকে গত ১৫ জুলাই ২২টা গরু নিয়ে গিয়েছিলাম ঢাকার উত্তরায়। ঈদের আগের সারা রাত পর্যন্ত অপেক্ষা করে মাত্র ৫টা গরু বিক্রি করতে পেরেছি। সেখানেও লস দিতে হয়েছে ৩০ হাজার টাকা। আর বাকি ১৭টাই ফিরিয়ে নিয়ে যাচ্ছি বাড়িতে। কম করে ২ লাখ টাকা লাভের স্বপ্ন নিয়ে রাজধানীতে গেলেও ফিরছি ট্রাক ভাড়াসহ প্রায় দেড় লাখ টাকা লস দিয়ে। সঙ্গে ১৭টি গরু।

তিনি আরও বলেন, শুধু উত্তরবঙ্গেরই অন্তত ১০ হাজার গরু অবিক্রীত রয়ে গেছে। শত শত ট্রাকে গরু ফিরিয়ে আনছেন ব্যবসায়ীরা। এই অপূরণীয় ক্ষতি কবে পুষব, জানা নেই। 

একই এলাকার মো. জেলানুর রহমান বলেন, ১২টা গরু নিয়ে গিয়েছিলাম ঢাকায়। গরু বিক্রি করে কিছু লাভ হবে, বাড়িতে ফিরে সবাইকে নিয়ে ঈদ করব, এই আশাতেই এসেছিলাম। কিন্তু পরিবার-পরিজন তো দূরে, রাস্তায় রাস্তায় দিন যায় আমাদের। ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় একটি গরুও বিক্রি হয়নি। এদিকে গাড়ি ভাড়া ও থাকা-খাওয়ার খরচ তো খাড়া। আসলে ভাগ্যই আমাদের সহায় হয় না।

ঈদুল আজহার দিন সিরাজগঞ্জের মহাসড়কে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ফাঁকা রাস্তায় দেখা গেছে, শোঁ শোঁ করে আসছে একটার পর একটা ঢাকাফেরত গরুভর্তি ট্রাক। ব্যাপারীদের কেউ কেউ গরুর পাশে দাঁড়িয়ে তাকিয়ে আছেন সুদূর পানে। চোখে রাজ্যের হতাশা। হয়তো হিসাব কষছেন, কীভাবে কাটিয়ে উঠবেন এ ক্ষতি?

এনএ