একদিন পরেই পবিত্র ঈদুল আজহা। সবাই ছুটছেন বাড়ির পথে। পোশাক কারখানাগুলোও ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। কর্মরত শ্রমিকরাও নেমেছেন রাস্তায়। ফলে তীব্র যানজট দেখা দিয়েছে সাভার-আশুলিয়া সড়কে। এ সড়কের প্রায় ৫২ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে স্থির হয়ে পড়ে আছে সব ধরনের পরিবহন।

ঢাকা পোস্টের সাভার প্রতিনিধি জানান, সোমবার সকাল থেকে এ সড়কের ওপর চাপ বাড়তে থাকে। ধীরে ধীরে গাড়িগুলো চললেও বিকেলে এসে তা যেন থমকে যায়। সর্বশেষ রাত ১০টার দিকে গাড়িগুলোকে স্থির দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। সাভার-আশুলিয়ার ৫২ কিলোমিটার সড়কজুড়ে এমন পরিস্থিতিতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গগামী লাখ লাখ মানুষ।

সরেজমিন দেখা যায়, সাভার থানাস্ট্যান্ড থেকে চন্দ্রা পর্যন্ত অল্পকিছু অংশ বাদ দিয়ে ২৬ কিলোমিটার যানজট, এছাড়া নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের মোজারমিল এলাকা থেকে বাইপাইল-আশুলিয়া হয়ে আব্দুল্লাহপুর পর্যন্ত প্রায় ২০ কিলোমিটার সড়কে এক চুল পর্যন্ত নড়ছে না কোনো বাহন। তীব্র এ যানজটের প্রভাব পড়েছে আশুলিয়ার অভ্যন্তরীণ সড়কগুলোতেও। আশুলিয়া বাজার থেকে বিরুলিয়া রোডের আক্রান পর্যন্ত ছয় কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যানজট লক্ষ করা গেছে।

মারাত্মক এ গাড়ির জটে শিডিউল বিপর্যয়ে পড়েছে গণপরিবহনগুলো। চার থেকে ছয় ঘণ্টা দেরি করে কাউন্টারে পৌঁছাচ্ছে বিভিন্ন রুটের গাড়ি। টিকিট কেটে কাঙ্ক্ষিত গাড়ির অপেক্ষায় বসে থাকতে দেখা যায় হাজার হাজার যাত্রীকে। এরই মধ্যে বয়ে গেছে এক ঝাপটা বৃষ্টি। বৃষ্টির পর ভ্যাপসা গরমে নাজেহাল রাস্তায় নামা মানুষগুলো।

বাইপাইল কাউন্টারে গাড়ির জন্য বিকেল ৫টা থেকে অপেক্ষা করছিলেন কাউয়ুম আলী। ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, সপরিবারে রংপুর যাব। টিকিট আগেই কাটা ছিল। ৬টায় গাড়ি আসার কথা। কিন্তু এখন রাত ১০টা বাজে। গাড়ি কখন আসবে— কাউন্টার থেকে তা বলতে পারছে না।  ‘আমরাও দেখতেছি, সেই সন্ধ্যা থেকে জ্যামের কারণে অল্প অল্প করে এগোচ্ছে গাড়ি। অপেক্ষায় আছি। বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে গরমের মধ্যে খুব কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু কিছুই করার নেই।’ 

সেখানে গাড়ির অপেক্ষায় ছিলেন মধ্যবয়সী শায়লা বেগম। যাবেন বগুড়ায়। ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, ‘কয়দিন ছুটি দেবে, জানতাম না। তাই আগে টিকিট কাটতে পারিনি। আজ সন্ধ্যায় এসে কোনো সিট ফাঁকা পাচ্ছি না। কীভাবে যাব বুঝতেছি না। মাইক্রোবাস আছে, কিন্তু ভাড়া চাচ্ছে প্রচুর। ভাড়া ঠিক করতে না করতেই যাত্রীরা ঠেলে উঠে পড়ছে। অপেক্ষায় আছি, যা পাই তাতেই উঠে পড়ব’— বলেন এ পোশাক শ্রমিক।

এদিকে, হাট থেকে গরু কিনে রাস্তা পার হওয়ার অপেক্ষায় ছিলেন বগাবাড়ি এলাকার মনির হোসেন। বলেন, এত গাড়ির ভিড়ে গরু নিয়ে আসা মুশকিল। রাস্তাই পার হতে পারছি না। মিনিট বিশেক ধরে অপেক্ষা করছি। থেমে থাকা গাড়ির ফাঁক দিয়ে যাওয়ারও সুযোগ নেই। গরু নিয়ে এভাবে কি দাঁড়িয়ে থাকা যায়?

তীব্র এ যানজট প্রসঙ্গে সাভার হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাজ্জাদ করিম বলেন, কয়েকদিন ধরে গরুর গাড়ির কারণে সড়কে অতিরিক্ত চাপ রয়েছে। আজ (সোমবার) কারখানা ছুটি হওয়ার পর যাত্রীবাহী গাড়ির চাপও বেড়েছে। আমরা আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। তবে গাড়িচালকদের বেপরোয়া ব্যবহারের কারণে জট লেগেই থাকছে। আশা করছি দ্রুতই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসবে।

জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও সড়কে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। তারপরও যানজট নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খাচ্ছে স্থানীয় প্রশাসন।

মাহিদুল মাহিদ/এমএআর/