প্রজনন উপযোগী পরিবেশে বদলে গেছে রংপুর চিড়িয়াখানা
করোনার থাবায় বদলে গেছে রংপুর চিড়িয়াখানা। দর্শনার্থীদের প্রবেশপথে ঝুলছে তালা। বন্ধ রয়েছে মানুষের আনাগোনা। ভেতরে কোলাহলমুক্ত প্রাকৃতিক পরিবেশ। যেন গাছগাছালিতে ভরা বনজঙ্গলের পরিবেশ ফিরে পেয়েছে প্রাণীগুলো। নীরব, নিস্তব্ধ পরিবেশে খাঁচাবন্দী পশু-পাখির বেড়েছে প্রজনন ক্ষমতা। অনেক প্রাণীর ঘরে এসেছে নতুন অতিথি। সন্তানের মুখ দেখার অপেক্ষায় রয়েছে কুমির, জলহস্তি, সিংহ ও ঘড়িয়ালসহ আরও বেশকিছু প্রাণী।
চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ বলছে, করোনাকালে ভেতরের পরিবেশ অনেকটাই বদলে গেছে। খাঁচাবন্দী পশু-পাখির জন্য এই পরিবেশ বেশ উপভোগ্য। দর্শনার্থীর হৈ-হুল্লোড় ও কোলাহলমুক্ত পরিবেশে বাচ্চা দিয়েছে বেশকিছু প্রাণী। এখন খাঁচাবন্দী পশু-পাখিগুলো আনন্দে খুনসুঁটিতে মেতে আছে। মানুষের ভিড় থাকলে প্রাণীকূলে এমন উচ্ছ্বাস দেখা যায় না। বরং অনেকেই আছেন যারা পশু-পাখিদের বিরক্তের কারণ।
বিজ্ঞাপন
জানা গেছে, উন্মুক্ত পরিবেশে ডিম দেওয়া মদনটেক এবার বন্দীদশায় ডিম পেড়েছে। সেই ডিম থেকে বাচ্চাও হয়েছে। ঘরে নতুন অতিথি এসেছে ঘোড়া, হরিণ, গাঁধা, বানর, ময়ূরসহ আরও বেশকিছু প্রাণীর। এর মধ্যে গাধা একটি, বানর দুটি, হরিণ পাঁচটি, ময়ূর আটটি করে বাচ্চা দিয়েছে।
কুমির ও ঘড়িয়ালেরও সময় হয়েছে ডিম দেওয়ার। সারাক্ষণ পানিতে খেলা করা জলহস্তিটিও মা হতে চলেছে। সিংহির বাচ্চা দেওয়ার সুযোগ থাকলেও বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে বয়স্ক সিংহ। আর উটপাখি সাতটি ডিম দিলেও পুরুষ সঙ্গীর অভাবে ডিমগুলো ফোটানো সম্ভব হয়নি।
নতুন অতিথিদের দেখভালে ব্যস্ত চিড়িয়াখানার কর্মচারীরা। তারা বলছেন, চিড়িয়াখানা এখন দর্শনার্থী শূন্য। সুনসান নীরবতা আর স্নিগ্ধ পরিবেশে ভিন্ন ভিন্ন রূপ-বৈচিত্র্যের প্রাণীগুলো রয়েছে বেশ ফুরফুরে মেজাজে। দীর্ঘ সময় ধরে এমন কোলাহলমুক্ত পরিবেশ খুব কমই পেয়েছে এসব প্রাণী। নতুন বাচ্চার সঙ্গে খুনসুঁটিতে ব্যস্ত সবাই।
চিড়িয়াখানার কেয়ারটেকার আনিস বলেন, আমরা খুবই আনন্দিত। অনেকগুলো নতুন অতিথি এসেছে। ইতোমধ্যে ঘোড়া, হরিণ, গাধা, বানর, ময়ূরসহ আরও বেশকিছু প্রাণীর বাচ্চা হয়েছে। আরও কিছু পশু-পাখির সম্ভাবনা রয়েছে। তিন মাস আগে মা উটপাখি ডিম দিয়েছিল। কিন্তু পুরুষ উটপাখির অভাবে ডিমগুলো অফুটন্ত থাকায় নষ্ট হয়ে গেছে।
রংপুর বিনোদন উদ্যান ও চিড়িয়াখানার কর্মকর্তা ডা. এইচ এম শাহাদাৎ শাহিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে সরকারি নির্দেশনায় চিড়িয়াখানাতে দর্শনার্থী প্রবেশ নিষিদ্ধ রয়েছে। এখন কোলাহলমুক্ত পরিবেশে পশু-পাখিদের প্রজনন ক্ষমতা বেড়েছে। স্বাভাবিক সময়ে এ রকম সুযোগ খুবই কম হয়।
চিড়িয়াখানার ডেপুটি কিউরেটর আম্বর আলী তালুকদার ঢাকা পোস্টকে বলেন, পশু-পাখিরা নীরব নিস্তব্ধ পরিবেশে থাকতে চায়। এখন সেই পরিবেশ বিরাজ করছে। নিরাপদ প্রজননের জন্য এটা ভালো পরিবেশ। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি প্রাণী ১৪টি বাচ্চা দিয়েছে। আরও কিছু প্রাণীর ডিম দেওয়ার সময় হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, রংপুর চিড়িয়াখানায় নতুন করে একটি মেয়ে হনুমান, একটি পুরুষ উটপাখি, জিরাফ, জেব্রা, একজোড়া কেশওয়ারি, একজোড়া বাঘসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে অল্প সময়ের মধ্যে আরও কিছু নতুন প্রাণী বাড়বে।
প্রসঙ্গত, দেশে দুটি সরকারি চিড়িয়াখানার মধ্যে রংপুরে একটি। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের শাসনামলে রংপুর নগরীর হনুমানতলা এলাকায় ১৯৮৯ সালে রংপুর চিড়িয়াখানাটি গড়ে ওঠে। এটি দর্শনার্থীদের জন্য ১৯৯২ সালে খুলে দেওয়া হয়। প্রায় ২২ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত চিড়িয়াখানাটিতে ৩৩ প্রজাতির ২৬০টি প্রাণী রয়েছে। এর মধ্যে সিংহ, বাঘ, জলহস্তী, হরিণ, অজগর সাপ, ইমু পাখি, উটপাখি, বানর, কেশওয়ারি, গাধা, ঘোড়া, ভাল্লুক উল্লেখযোগ্য।
আরএআর