পবিত্র ঈদুল আজহাকে ঘিরে ঢাকার সাভারে জমতে শুরু করেছে পশুর হাট। এসব হাটে দূর-দূরান্ত থেকে বছরের পর বছর লালন-পালন করা ভালোবাসার পশু নিয়ে ভির জমাচ্ছেন অনেকেই। ভালো দামের আশায় ঢাকায় গরু-ছাগল বিক্রির জন্য এনেছেন খামারি ও গৃহস্থরা।

এমনই একজন গৃহস্থ মিলন রাজবাড়ী থেকে দুটি ছাগল এনেছেন সাভারের রেডিও কলোনি হাটে। দীর্ঘ দুই বছর ১০ মাস ছাগল দুটিকে পালন করেছে ছোট্ট শিশু সাগর। ছাগল দুটি ঢাকায় আনার সময় কাউকে কিছু না বলেই গাড়িতে উঠে বসে সাগর। অবশেষে তাকে হাঁটে আনতে বাধ্য হয়েছেন বাবা মিলন।

শুক্রবার (১৬ জুলাই) সাভারের রেডিও কলোনি স্কুল মাঠের গরু-ছাগলের হাটে বিশাল আকৃতির দুটি ছাগল দেখা যায়। ছাগল দুটি সুদূর রাজবাড়ীর গোপিনাথপুর এলাকা থেকে ট্রাকে করে এই হাটে এনেছেন মিলন। ছাগল দুটির প্রত্যেকটির ওজন আনুমানিক ১২০ কেজি করে। উচ্চতা প্রায় ৪ ফুট ও দৈর্ঘ্য ৫ ফুট। দাম হাঁকছেন তিন লাখ টাকা। 

ছাগলের মালিক মিলন ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রায় দুই বছর ১০ মাস ধরে দুটি ছাগলকেই ঘরে তোলা ও বের করা থেকে শুরু করে খাবার দিয়েছে সাগর। সে ছোটবেলা থেকেই ছাগল দুটিকে দেখাশোনা করেছে। খুব ভালোবাসে ছাগল দুটিকে। সে ছাগল বিক্রি করতে দেবে না। কান্নাকাটি শুরু করেছে। কাল যখন হাঁটে নেওয়ার জন্য ছাগল গাড়িতে তুলেছি তখন কাউকে কিছু না বলে সেও গাড়িতে উঠে বসে। শুধু একটা শার্ট পড়ে সে বাজারে এসেছে। 

ছোট্ট শিশু সাগর বলে, আমি যখন আরও ছোট ছিলাম তখন থেকেই ছাগল দুটিকে খাবার দেই। ঘরে তুলে আবার খাবার দিয়েছি। কাঁঠালের পাতা বিভিন্ন গাছ থেকে পেরে খাওয়াই। আব্বু ছাগল বিক্রি করে দিচ্ছে। আমাকে আবার ছাগল কিনে দিতে চেয়েছেন। ছাগল বিক্রি করে টাকা আমি গুনে পকেটে রাখবো। আমাকে আবার ছাগল কিনে দিলে আবার খাওয়াবো।

মিলনের চাচা বলেন, আমরা সাগরসহ চারজন দুটি ছাগল নিয়ে এই হাটে এসেছি। ছাগল দুটি অনেক বড়। প্রায় ১২০ কেজি ওজন, দাম চেয়েছি তিন লাখ টাকা। ক্রেতারা দুটোর দাম বলেছে দুই লাখ টাকা। আমরা তিন লাখ টাকা হলে ছাগল দুটি বিক্রি করবো।

ক্রেতা রুবেল ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি ছাগল কেনার জন্য আমিনবাজার থেকে এসেছি। এখানে অনেক বড় বড় ছাগল প্রতিবারই ওঠে। সেই বিশ্বাস নিয়েই এসেছি। দুটি ছাগল পছন্দও হয়েছে। কিন্তু দাম একটু বেশি। দুটি ছাগল দুই লাখ টাকা বলেছি। তারা তিন লাখ না হলে দিচ্ছেন না। আরেকটু দাম বাড়িয়ে দিলে যদি তারা বিক্রি করতো তবুও নিতাম।

হাটের ইজারাদার সাইফুর রহমান সুমন বলেন, আমাদের হাটে শতভাগ স্বাস্থ্যবিধির দিকে নজর দেওয়া হচ্ছে। গেটেই জীবানুনাশক টানেল, হাত ধোয়ার জায়গা ও ফ্রি বিতরণের জন্য ১৫ হাজার মাস্ক আনা হয়েছে। আমাদের হাট আজ উদ্বোধন হবে। উদ্বোধনের আগেই গরু-ছাগল আসা শুরু হয়েছে। আরও অনেক গরু ছাগল আসবে। অনেক বড় বড় পশু এই হাটে পাওয়া যাবে বলে আশা প্রকাশ করছি। কারণ আমাদের হাটে খামারি ও ব্যবসায়ীদের স্বাস্থ্যসম্মত থাকার জায়গা ও শৌচাগারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া ৪০টি সিসি ক্যামেরা দিয়ে পুরো হাট নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। 

মাহিদুল মাহিদ/আরএআর