ছয় মাস ধরে ভুল নম্বরে যাচ্ছে প্রতিবন্ধী ও বিধবাদের ভাতা
ছয় মাস ধরে ভুল নম্বরে চলে যাচ্ছে দুই শতাধিক ভাতাভোগীর টাকা। এতে করে বিপাকে পড়েছেন ভাতাভোগী এসব অসহায় মানুষ। তাদের অভিযোগ, অক্টোবর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত তারা ভাতার টাকা পায়নি। খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছে এই ছয় মাস ভাতার টাকা গেছে অন্যের মোবাইল নম্বরে।
সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনির আওতায় বিভিন্ন ভাতাভোগীর টাকা সরাসরি তাদের মোবাইল নম্বরে নগদ এর মাধ্যমে প্রদানের লক্ষে সম্প্রতি নেত্রকোনার মদন উপজেলাতেও ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম (এমআইএস) কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
আর এ কার্যক্রম সম্পন্ন করতে গিয়েই ঘটেছে নানা বিপত্তি। নগদ অ্যাকাউন্ট খোলার সময় এজেন্টদের উদাসীনতায় ভুল মোবাইল নম্বর এন্ট্রির কারণে প্রায় দুই শতাধিক ভাতাভোগীর টাকা চলে গেছে অন্যের মোবাইল নম্বরে।
ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে ভাতার টাকা তুলতে গিয়ে ভাতাভোগীদের কাছে এমন অসঙ্গতি ধরা পড়ছে। আর এ অসঙ্গতি সমাধানের জন্য প্রতিদিনই মদন উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের সামনে ভিড় করছেন অসহায় ভুক্তভোগী ও তাদের স্বজনরা।
এ অবস্থায় নিজের দেয়া মোবাইল নম্বরের পরিবর্তে অন্যদের মোবাইল নম্বর দেখে হতাশ হচ্ছেন এবং ভাতার টাকা না পেয়ে মন খারাপ করে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন তারা।
এদিকে ভাতাভোগীরা সমাজসেবা কার্যালয়ে ছুটে এসে সংশ্লিষ্টদের কাছে কাকুতি মিনতি করলেও টাকা ফেরত পাবেন কীনা এর কোনো সুরাহা করতে পারছেন না কর্তৃপক্ষ। তবে এ বিষয়ে সমাজসেবা অফিস বলছে, সুবিধাভোগীদের নগদ অ্যাকাউন্ট নগদ এজেন্টের লোকজন করেছেন। এছাড়া অনেক ভাতাভোগী নিজেরাই ভুল মোবাইল নম্বর দিয়েছেন এ কারণে এমন হয়েছে। এতে পৌরসভাসহ উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের প্রায় দুই শতাধিক বয়স্ক, বিধবা, প্রতিবন্ধী ও স্বামী পরিত্যক্তা সুবিধাভোগীদের ৬ মাসের ভাতার টাকা অন্যদের মোবাইল নম্বরে চলে গেছে।
মদন উপজেলা সমাজসেবা কাযালয় সূত্রে জানা গেছে, পৌরসভাসহ উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের মোট ভাতাভোগীর সংখ্যা রয়েছে ১০ হাজার ৯৮৯ জন। তাদের নগদ অ্যাকাউন্ট খোলা প্রায় শেষ পর্যায়ে। সরকার চলতি বছরে বয়স্ক, বিধবা, স্বামী পরিত্যক্তা ও প্রতিবন্ধীদের ভাতার টাকা ব্যাংকের পরিবর্তে নগদ অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে দিচ্ছে।
চুক্তি অনুযায়ী নগদ কোম্পানি এন্ট্রিকৃত মোবাইল নম্বরে ভাতাভোগীদের টাকা পাঠায়। কিন্তু নগদ কোম্পানির এজেন্টের লোকজনের উদাসীনতায় সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি ওয়েবসাইটে ভাতাভোগীদের মোবাইল নম্বর ভুল এন্ট্রি করা হয়েছে। ফলে উপজেলার প্রায় দুই শতাধিক ভাতাভোগীর অক্টোবর থেকে মার্চ মাসের ভাতার টাকা চলে গেছে অন্যদের মোবাইল নম্বরে। তবে যেসব মোবাইল নম্বরে টাকা গেছে সেইসব নম্বর বন্ধ দেখাচ্ছে বলে ভুক্তভোগীরা জানান।
প্রতিবন্ধী ভাতাভোগী মদন উপজেলার বাঘমারা গ্রামের শরিফা আক্তারের মা বলেন, আমার মেয়ের ভাতা পাওয়ার জন্য গ্রামীণ নম্বর দেই। কিন্তু অফিসে এসে দেখি আমার মেয়ের ভাতা গেছে বাংলালিংক নম্বরে। তাও আবার বন্ধ।
উপজেলার দক্ষিণ বালালী গ্রামের প্রতিবন্ধী সেকুল মিয়ার ভাই হানিফ মিয়া জানান, আমার ভাইসহ আরো দুই বাচ্চা প্রতিবন্ধী। তাদের টাকাও চলে গেছে আরেকজনের মোবাইলে। ফোন করলে বন্ধ পাই। এখন কীভাবে এর সমাধান হবে তাও জানি না।
এদিকে বয়স্ক ভাতাভোগী উপজেলার কাইকুড়িয়া গ্রামের কল্পনা আক্তার, আব্দুল বারেক, নারী ভাতাভোগী উষা রানী বিশ্বশর্মা জানান, আমরা অফিসে যে নম্বর দিছি এ নম্বরে কোনো টাকা আইছে না। অফিসে আইয়া দেহি টাকা গেছেগা আরেকজনের মোবাইল নম্বরে। সরকারের দেয়া এই ভাতাডার দিকে চাইয়া তাহি। অফিসে কয়েকদিন ধইরা আইতাছি কোনো সমাধান হইতাছে না। সামনে ঈদ ভাতা না পাইলে কেমনে ঈদ করব? যারার ভুলে এমনটা হইছে তারাই আমরারে টাকা দিতে হইবে।
এ বিষয়ে কথা হলে উপজেলার তিয়শ্রী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ফকর উদ্দিন আহমেদ জানান, নগদ এজেন্ট নিয়োগ করেছে সমাজসেবা অফিস। এজেন্টরাই মূলত এমন কাজটি করেছে। আমার ইউনিয়নে বেশ কয়েকজন ভাতাভোগীর এমন সমস্যা হয়েছে। বিষয়টি সমাজসেবা অফিসে জানিয়েছি।
মদন উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা শাহজামান আহমেদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা হলে তিনি বলেন, নগদের অফিসের লোকজন এমনটি করেছে। যে ভুল নম্বরগুলোতে টাকা গেছে কিন্তু বন্ধ রয়েছে ওই নম্বরগুলো পেরোল দেওয়া হয়েছে। সেই টাকা ফেরত আসবে, দিতে পারব। আর যে নম্বরের টাকা উত্তোলন করেছে, সেটার কিছু করতে পারব না। এ নিয়ে প্রথম পর্যায়ে অনেক জটিলতা থাকবে। সারাদিন কাজ করছি। ভুলে যাদের টাকা চলে গেছে তাদের বিষয়টি নগদের অফিসে ও আমাদের নেত্রকোনা অফিসে প্রেরণ করেছি। দেখা যাক কি করা যায়।
বিষয়টি নিয়ে কথা হলে মদন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বুলবুল আহমেদ জানান, টাকা না পাওয়া কয়েকজন ভাতাভোগী আমার অফিসে এসেছিল। তাদের কাছ থেকে বিষয়টি জেনেছি। এ বিষয়ে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছি বিষয়টি নিয়ে। প্রয়োজন হলে জেলা প্রশাসক স্যারের সঙ্গে কথা বলব এবং নগদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি দ্রুত সামাধানের চেষ্টা করা হবে।
এমএএস