বরিশাল থেকে ১৭ রুটে বাস চলাচল বন্ধ
আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বরিশাল নগরীর রুপাতলী বাস টার্মিনালে দুই গ্রুপ শ্রমিকদের সংঘর্ষে বৃহস্পতিবার (১৫ জুলাই) সকাল থেকে দক্ষিণাঞ্চলের ১৭ রুটে বাস চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এ সময় রুপাতলী উত্তেজনা বিরাজ করছে।
কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুরুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
উভয় পক্ষের শ্রমিকনেতারা দাবি করেছেন, সংঘর্ষের ঘটনায় কমপক্ষে ৬ জন আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে একজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে টার্মিনাল ভবনের নিচতলায় কাউন্টারের সামনে সুলতান মাহামুদ ও সহিদুল ইসলাম টিটু নেতৃত্বাধীন কমিটির শ্রমিকদের সঙ্গে পরিমল চন্দ্র দাস ও আহমেদ শাহারিয়ার বাবুর নেতৃত্বাধীন কমিটির শ্রমকিদের সঙ্গে মারামারির ঘটনা ঘটে। এরপরপরই গোটা বাস টার্মিনাল এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে এবং বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে লকডাউন প্রত্যাহারের পর প্রথম দিনেই যাত্রীরা ব্যাপক ভোগান্তিতে পড়ে।
শ্রমিকরা জানান, বরিশাল জেলা বাস, মিনিবাস, কোচ ও মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের দুটি কমিটি নতুনভাবে গঠিত হয়। এরপর থেকে দুই গ্রুপ শ্রমিক নেতাদের মধ্যে বিভিন্ন সময় ছোটখাটো মারামারি ও উত্তেজনার ঘটনা ঘটে আসছিল।
প্রতক্ষ্যদর্শী বরগুনাগামী আবদুল হক নামের এক যাত্রী জানান, বাসস্ট্যান্ডে কথা-কাটাকাটির জের ধরে দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি হতে দেখেছি এবং এতে একজন রক্তাক্ত জখম হয়েছেন। এরপরই বাস বন্ধ করে দিলে আমরা প্রচণ্ড ভোগান্তির মধ্যে পড়ি।
বরিশাল জেলা বাস, মিনিবাস, কোচ ও মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের একাংশের সভাপতি সুলতান মাহমুদ বলেন, সকালে আমি ধর্মীয় কাজে ব্যস্ত ছিলাম। তখন শুনি বাস টার্মিনালে মারামরির ঘটনা ঘটেছে। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি, আমার কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক বাস চালাতে গেলে তাকে বাধা দেয়। এর কারণ জানতে চাইলে তর্ক বেধে যায়। একপর্যায়ে হাতাহাতি হয়। এতে লাইন সেক্রেটারি হান্নান মৃধা কপালে একটু আঘাত পান।
তিনি বলেন, এ ঘটনায় আমাকে বিনা কারণে দোষারোপ করা হচ্ছে। মূলত তারা একটি অবৈধ কমিটি হয়ে আমাদের স্ট্যান্ড দখল নিতে চায়। তারা যে কমিটি করেছে, তার নেতা পরিমল চন্দ্র দাস ও শাহারিয়ার বাবু তারা কেউ শ্রমিক নন। গঠনতন্ত্র অনুসারে শ্রমিক ছাড়া শ্রমিক ইউনয়নের কমিটি গঠন অবৈধ।
এদিকে বরিশাল জেলা বাস, মিনিবাস, কোচ ও মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের অন্য অংশের সভাপতি পরিমল চন্দ্র দাস ও সাধারণ সম্পাদক শাহরিয়ার বাবু বলেন, রুপাতলী শ্রমিক ইউনিয়নে ২৩ বছর ধরে চাঁদাবাজি দখলদারিত্ব করে আসছিল সুলতান মাহামুদ। এ অবস্থার অবসান ঘটাতে এবং শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকারর ফিরিয়ে দিতে মেয়র মহোদয় নতুন কমিটি গঠন করে দিয়েছেন। সেই কমিটি উৎখাত করতে আজ সকালে অতর্কিতভাবে বাসস্ট্যান্ডে এসে হামলা চালায় সুলতান মাহামুদের লোকজন। এতে আমাদের লাইন সম্পাদক হান্নান মৃধা, মালিক সমিতির সিনিয়র সহসভাপতি নাছির মৃধাসহ কমপক্ষে ৪ জন শ্রমিক আহত হয়।
এ সময় দেখা যায় শ্রমিকরা বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করছে। বাস চলাচল বন্ধ রেখে তাদের একটাই দাবি, সন্ত্রাসী সুলতান মাহামুদকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনতে হবে বলেও জানান তারা।
রুপাতলীস্থ বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কাওসার হোসেন শিপন বলেন, দীর্ঘদিন বাসস্ট্যান্ড দখল করে রাখার পর এখন সুলতান মাহমুদ কমিটি থেকে বাদ পরায় নবগঠিত কমিটির শ্রমিকদের ওপর হামলা চালাচ্ছে। আমাদের দাবি, সুলতান মাহামুদকে গ্রেফতার করতে হবে। গ্রেফতার না করা পর্যন্ত শ্রমিকরা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার কথা বলেছেন।
এ বিষয়ে কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুরুল ইসলাম বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ফোর্সসহ আমি আছি। পারস্থিতি শান্ত রয়েছে, তবে বাস চলাচল শুরু হয়নি। হামলাকারীদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা হবে। তাদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতার করা হবে।
সৈয়দ মেহেদী হাসান/এনএ