বুদ্ধি প্রতিবন্ধী শিশু বিল্লাল হোসেন মিলন (বাঁয়ে) ও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাইন উদ্দিন (ডানে)

বুদ্ধি প্রতিবন্ধী শিশু বিল্লাল হোসেন মিলন (১০)। দুষ্টুমিতে মাতিয়ে রাখে পাড়া-প্রতিবেশীসহ স্বজনদের। তার দুষ্টুমি অনেকেই স্বাভাবিকভাবে নিলেও কিছু লোক তাকে নিয়ে ঠাট্টা-মশকরা করেন। এতে তার স্বাভাবিক জীবন-যাপন কিছুটা ব্যাহত হয়। 

গত সোমবার (১২ জুলাই) গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়নের নিজ মাওনা গ্রামে নিজের বাড়ির পাশেই খেলছিল শিশু মিলন। এ সময় জ্বলন্ত চুলা থেকে লাকড়ি তুলে তার হাত ঝলসে দেন স্থানীয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাইন উদ্দিন। তার এমন কাণ্ডে ক্ষুব্ধ হয়েছেন স্থানীয়রা।

অভিযুক্ত মাইন উদ্দিন শ্রীপুর উপজেলার নগরহাওলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। তিনি নিজ মাওনা গ্রামের আব্দুল মজিদের ছেলে। ভুক্তভোগী বিল্লাল হোসেন একই গ্রামের মো. বুলবুলের ছেলে। বুদ্ধি প্রতিবন্ধি হওয়ায় সে স্বাভাবিকভাবে কথা বলতে পারে না।

মিলনের হাত ঝলসে দেওয়ার বিষয়ে তার মা নাছিমা আক্তার বলেন, সোমবার দুপুরে বাড়ির নির্মাণ কাজ করছিলেন মাইন উদ্দিন। মিলন তার নির্মাণকাজ দেখতে যায় এবং বালির ওপর খেলতে শুরু করে। এ ঘটনায় প্রধান শিক্ষক ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে কালারবাড়ী মোড়ের রফিজ উদ্দিনের চায়ের দোকানের সামনে নিয়ে যায়। পরে দোকানের চুলা থেকে জ্বলন্ত পলিথিনযুক্ত লাকড়ি দিয়ে তার হাত ঝলসে দেন। শিশুটির কান্নায় পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে। পরে স্থানীয়রা এসে ক্ষতস্থানে পানি লাগিয়ে শিশুটিকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। 

ঘটনার সময় পাশের ওই দোকানে বসে চা পান করছিলেন জুলহাস উদ্দিন ও আব্দুল করিম। তারা জানান, শিক্ষক শিশুটিকে নিয়ে দোকানের সামনে চুলার কাছে আসেন। তারা কিছু বুঝে উঠার আগেই জ্বলন্ত চুলা থেকে আগুনযুক্ত লাকড়ি দিয়ে শিশুটির ডান হাত ঝলসে দেন। এমন অমানবিক কাজে আমরা তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ করলে ওই শিক্ষক ঘটনাস্থল থেকে দ্রুত চলে যান।

অভিযুক্ত শিক্ষক মাইন উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে চাইলেও তা সম্ভব হয়নি। তার মুঠোফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। বাড়িতে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। 

এ বিষয়ে শ্রীপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার কামরুল হাসান বলেন, এ বিষয়ে আমি জানতাম না। এ খবর শোনা মাত্রই সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নুরুন্নাহারকে ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়েছে। তিনি ঘটনার বিস্তারিত তদন্ত করে জানাবেন।

শ্রীপুর উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নুরুন্নাহার জানান, ওই শিশুর বাড়িতে গিয়ে তার মা, বাবা, প্রতিবেশী ও ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে ঘটনার সত্যতা মিলেছে। প্রধান শিক্ষক মাইন উদ্দিনের কাছে তার বক্তব্য লিখিত আকারে জানতে চাওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোফাজ্জল হোসেন বলেন, প্রাথমিকের শিক্ষকদের দায়িত্বই হচ্ছে কোমলমতি শিশুদের আদর ভালোবাসার মাধ্যমে শিক্ষা দেওয়া। তবে একজন শিক্ষক যদি শিশুকে হাতে আগুনের ছ্যাঁকা দিয়ে থাকেন, তা হলে তা নিন্দনীয়। এ ঘটনায় সম্পৃক্ততা পেলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খোন্দকার ইমাম হোসেন বলেন, এ বিষয়ে আমি কোনো অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

শিহাব খান/আরএইচ