এগিয়ে এল না কেউ, করোনায় মৃত নারীকে গোসল করালেন ইউএনও
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান রিনা বেগম (৫৫) নামে এক নারী। মঙ্গলবার (১৩ জুলাই) বিকেলে হাসপাতাল থেকে তার মরদেহ গ্রামের বাড়ি সোনাতলা উপজেলার জোড়গাছা ইউনিয়নের কুশিহাটায় নিয়ে যান স্বজনরা। কিন্তু করোনায় মারা যাওয়ায় মরদেহ গোসল করাতে রাজি হচ্ছিলেন না কেউ।
বিষয়টি জানতে পেরে মধ্যরাতে কুশিহাটা গ্রামে ছুটে যান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাদিয়া আফরিন। রাত ২টায় তিনি মৃত রিনা বেগমকে গোসল করিয়ে কাফন পরিধান করান। তারপর ১৫ জন মুসল্লি জানাজায় অংশ নেন।
বিজ্ঞাপন
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সোনাতলা উপজেলার কুশিহাটা গ্রামের বাসিন্দা মোতালেব হোসেন ও তার স্ত্রী রিনা বেগম বেশ কয়েকদিন ধরে করোনা আক্রান্ত হয়ে নিজ বাড়িতে চিকিৎসাধীন ছিলেন। মঙ্গলবার সকালে বাড়িতে রিনা বেগমের অবস্থা গুরুতর হলে তাকে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বিকেল ৩টার দিকে রিনা বেগম মারা যান। মারা যাওয়ার পর তার মরদেহ নিয়ে স্বজনরা গ্রামের বাড়িতে আসেন।
এ সময় গ্রামের মরদেহ গোসল করানো নারীরা রিনা বেগমকে গোসল করাতে রাজি হননি। আশপাশের আর কেউও রাজি হচ্ছিল না। এ খবর পৌঁছায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাদিয়া আফরিনের কাছে। খবর পেয়ে তিনি মধ্যরাতেই কুশিহাটা গ্রামে রিনা বেগমের বাড়িতে হাজির হন। ওই বাড়িতে পৌঁছে রাত ২টার দিকে তিনি রিনা বেগমকে গোসল করিয়ে কাফন পরিয়ে দেন।
এ সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাদিয়া আফরিনের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন সোনাতলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রেজাউল করিম রেজা, পরিদর্শক (তদন্ত) কামাল হোসেন, জোড়গাছা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রোস্তম আলী মণ্ডলসহ আরও অনেকে।
জোড়গাছা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রোস্তম আলী মণ্ডল বলেন, রাত ৯টার দিকে খবরটি জানার পর এলাকায় অনেকের সঙ্গে কথা বলি। এর একপর্যায়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে বিষয়টি অবগত করি। তারপর রাতে তিনি এলাকায় আসেন। পাশের একজন নারীকে সঙ্গে নিয়ে নিজেই করোনায় মারা যাওয়া রিনা বেগমকে গোসল করিয়ে, কাফনের কাপড় পরিয়ে জানাজার জন্য প্রস্তুত করে দেন।
গ্রামের মানুষ করোনা নিয়ে খুব ভীত। তাই যারা মরদেহ সৎকারের কাজ করেন তারা ভয়ে কাছে আসেননি ও গোছল করাতে রাজি হননি। তবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গোসল করিয়ে দেয়ার পর আমরা ১৫/২০ জন রাতেই জানাজায় অংশ নিয়ে দাফন কাজ শেষ করি।
এ বিষয়ে বুধবার (১৪ জুলাই) দুপুরে কথা হয় সোনাতলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাদিয়া আফরিনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘‘করোনায় মারা যাওয়া রিনা বেগমকে ‘গোসল করাতে কেউ রাজি নয়’ খবরটি পাওয়ার পর নিজে গোসল করানোর মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে ওই গ্রামে যাই। সেখানে গিয়ে দেখি, মৃত নারীর কোনো মেয়ে নেই, অন্য নিকটাত্মীয় নারীরাও গোসল করাতে রাজি নয়। তারপর আমি তাকে গোসল করিয়ে দিই। আমি এটিকে মানবিক দায়িত্ব মনে করেছি। আর ‘মরদেহ থেকে করোনা ছড়ায় না’- এটা সবাইকে জানানোটাও দরকার ছিল।’’
সোনাতলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রেজাউল করিম রেজা বলেন, ‘আমি সত্যিই অবাক হয়েছি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মহোদয় নিজেই রিনা বেগমকে গোসল করিয়ে জানাজার জন্য প্রস্তুত করেছেন।’
সাখাওয়াত হোসেন জনি/আরএআর/জেএস