সরকারি কোষাগারে ২৫ লাখ টাকা ফেরত দিয়ে প্রশংসায় ভাসছেন ইউএনও
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে সারাদেশে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য স্থায়ী পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করেছে সরকার। ‘আশ্রয়ণের অধিকার, শেখ হাসিনার উপহার’ স্লোগানে প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় যাদের জমি নেই, ঘর নেই, তাদের পুনর্বাসনে সরকারি খাস জমিতে নির্মাণ করে দেওয়া হচ্ছে আধাপাকা বাড়ি। দুঃখ-কষ্ট, বঞ্চনায় ভরা ভূমিহীন-আশ্রয়হীন মানুষগুলো প্রধানমন্ত্রীর উপহারের এসব বাড়ি পেয়ে আনন্দিত, আপ্লুত।
ইতোমধ্যে সারাদেশে দু’দফায় ১ লাখ ১৮ হাজার পরিবারকে লাল-সবুজের আধাপাকা বাড়ি হস্তান্তর করা হয়েছে। একসঙ্গে এত ঘর উপহার, বিশ্বে অনন্য নজির। প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত এ প্রকল্পটি বেশ সুনাম কুড়ালেও কিছু অনিয়মের কারণে হচ্ছে সমালোচনাও। বিভিন্ন স্থানে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া ঘর কয়েক দিন যেতে না যেতেই ভেঙে পড়ছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা সরাসরি জড়িত থাকায়, তাদের অনেকের দিকে অনিয়মের আঙ্গুল তোলা হচ্ছে। দোষারোপ করা হচ্ছে, মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা ও অসাধু ঠিকাদারদেরও।
বিজ্ঞাপন
সমালোচনাময় এ পরিস্থিতিতে আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাড়ি নির্মাণের পর উদ্বৃত্ত টাকা সরকারি কোষাগারে ফেরত দিয়ে অনন্য দৃষ্টান্ত তৈরি করেছেন রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মেহেদী হাসান। যার প্রশংসা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে উঠে এসেছে। দায়িত্ববোধ ও স্বচ্ছতার জায়গায় মেহেদী হাসান এখন অনন্য উদাহরণ।
জানা গেছে, বদরগঞ্জ উপজেলায় ২৯৬ জন ভূমি ও গৃহহীন পরিবারকে দুই শতক জমিসহ বাড়ি বরাদ্দ দেওয়া হয়। প্রথম পর্যায়ে প্রত্যেক বাড়ি নির্মাণের জন্য ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা ব্যয়ে ২৮৬টি বাড়ির বরাদ্দ পান বদরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেদী হাসান। দ্বিতীয় পর্যায়ে ১ লাখ ৯১ হাজার টাকা ব্যয়ে আরও ১০টি বাড়ি নির্মাণে অর্থ বরাদ্দ পান।
এ ছাড়া জায়গা আছে ঘর নেই- এমন ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীদের জন্য ৩০টি বাড়ি এবং ঘূর্ণিঝড় আম্পানে ক্ষতিগ্রস্ত ৮টি পরিবারের জন্য ৮টি বাড়ি নির্মাণে বরাদ্দ পান। এসব বাড়ি ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা ব্যয়ে নির্মাণের বরাদ্দ পেলেও কম খরচে নকশা ও পরিকল্পনা অনুযায়ী দুই শতক জায়গায় একটি পরিবারের জন্য স্বাস্থ্যসম্মত শৌচাগার, টিনের ছাউনিসহ বারান্দা, বসবাসের জন্য দুটি পাকা কক্ষ, রান্নাঘর ও আসবাব রাখার কক্ষ নির্মাণ করে দেন।
সব মিয়ে বাড়ি নির্মাণে বদরগঞ্জে ৫ কোটি ৭৩ লাখ ১৪ হাজার টাকার বরাদ্দ দেন সরকার। সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) দফতর থেকে এসব বাড়ি করে দেওয়া হয়। কিন্তু বাড়িগুলো নির্মাণের পর উদ্বৃত্ত থেকে যায় ২৫ লাখ টাকা। সেই টাকা সরকারি কোষাগারে ফেরত দেন ইউএনও মেহেদী হাসান।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মেহেদী হাসান বলেন, আমার নেতৃত্বে বাড়ি নির্মাণে পাঁচ সদস্যের কমিটি ছিল। আমি কাজ শুরু করার আগে কমিটির সদস্যদের নিয়ে বসেছিলাম। ওইদিন সদস্যদের বলেছিলাম, যদি বাড়ি নির্মাণ করে টাকা বেঁচে যায়, তাহলে বেঁচে যাওয়া টাকা সরকারকে ফেরত দেব। তারা আমার সঙ্গে একমত ছিলেন।
তিনি আরও বলেন, বাড়িগুলো তৈরিতে তুলনামূলক ভালো ইট ও বালু কিনেছি কম দামে। এখানে মিস্ত্রি খরচও কম লেগেছে। এ কারণে নির্ধারিত নকশা ও প্রাক্কলিত মূল্যে বাড়িগুলো নির্মাণের পরও ২৫ লাখ টাকা অবশিষ্ট থাকে। সেই টাকা গত অর্থবছরে সরকারি কোষাগারে ফেরত দিয়েছি। এটা কোনো বাহাদুরি নয়। দায়িত্ববোধ ও স্বচ্ছতার জায়গা থেকে এটা করা হয়েছে। এ জন্য খুব ভালো লাগছে।
এ বিষয়ে বদরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আহসানুল হক চৌধুরী বলেন, সরকারি টাকা ইচ্ছে মতো ব্যয় না করে ইউএনও সঠিকভাবে কাজে লাগিয়েছেন। স্বচ্ছতার সঙ্গে বরাদ্দের চেয়ে কম মূল্যে বাড়িগুলো নির্মাণের চেষ্টা করেছেন। ইউএনও সাহেব তার আন্তরিকতা ও জবাবদিহিতার জায়গায় অনন্য উদাহরণ। প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাড়ি নির্মাণের পর বেঁচে যাওয়া টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দিয়ে তিনি অনন্য দৃষ্টান্ত দাঁড় করিয়েছেন।
এসব বাড়ি নির্মাণ ও নির্মাণকাজ তদারকির জন্য ইউএনও মেহেদী হাসানকে সভাপতি করে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির সদস্যসচিব ছিলেন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও)। সদস্য ছিলেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি), উপজেলা প্রকৌশলী ও সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান।
রংপুরের আট উপজেলায় ভূমিহীন ও গৃহহীনসহ ১ হাজার ৯৮৮ পরিবারকে ২ শতক জমিতে বসতবাড়ি নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে জেলার ভূমিহীন ও গৃহহীনদের এ প্রকল্পের আওতায় নিয়ে আসা হবে বলেও জানান জেলা প্রশাসক আসিব আহসান।
মেহেদী হাসান সম্প্রতি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক হিসেবে পদোন্নতি পেয়েছেন। শিগগিরই তিনি দিনাজপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে যোগ দেবেন বলে জানা গেছে। এর আগে ২০২০ সালের ৩১ মে কুড়িগ্রামের রাজিবপুর উপজেলা থেকে বদলি হয়ে বদরগঞ্জ উপজেলায় ইউএনও হিসেবে যোগদান করেন তিনি। তার গ্রামের বাড়ি ঠাকুরগাঁও জেলা সদরে।
ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এসপি