অসুস্থ বাবাকে উঠানে ফেলে রাখল ছেলেরা, ঠাঁই হলো মেয়ের বাড়িতে
লক্ষ্মীপুরে বার্ধক্যজনিত কারণে শয্যাশায়ী শফিকুল ইসলামকে বাড়ি (স্বপ্ন মহল) থেকে বের করে উঠানে ফেলে রাখেন পাষণ্ড ছেলেরা। শুক্রবার (০৯ জুলাই) দুপুর পর্যন্ত লক্ষ্মীপুর পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের মেঘনা রোডের বাসার সামনে তাকে পড়ে থাকতে দেখা যায়। সারাজীবন কষ্ট করে ছেলেদের প্রতিষ্ঠিত করলেও তাদের অট্টালিকায় ঠাঁই হয়নি অসুস্থ বাবার।
খবর পেয়ে বিকেলে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রাসেল ইকবাল ও রাজীব হোসেন শফিকুলকে উদ্ধার করেন। এ সময় শফিকুলের ছেলেদের সঙ্গে ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। পরে অসুস্থ শফিকুলকে বড় মেয়ে সুরাইয়া বেগমের বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হয়।
বিজ্ঞাপন
কান্নাজড়িত কণ্ঠে সুরাইয়া বলেন, আমার বাবা তিল তিল করে এই সম্পত্তি গড়ে দিয়েছেন। বাবার ঘাম ঝরা উপার্জনে তিন ছেলে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু আমার অসুস্থ বাবাকে তারা পাষণ্ডের মতো ঘর থেকে রাস্তায় ফেলে রেখেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে শফিকুল ইসলাম বার্ধক্যজনিতরোগে শয্যাশায়ী। তিনি ছাপাখানায় কাজ করতেন। দুই বছর আগে তিনি চার ছেলে ও তিন মেয়েকে তার সম্পত্তি ভাগ করে দেন। ছেলেদের মধ্যে শাহ আলম অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য, জাহাঙ্গীর আলম বিজিবি সদস্য, আলমগীর হোসেন প্রবাসী। আরেক ছেলে সোহাগ কয়েক বছর আগে মারা গেছেন। পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডে সবারই বহুতল ভবনের বাড়ি রয়েছে। অসুস্থ শফিকুল তার ছেলে জাহাঙ্গীর আলমের বাসায় ছিলেন। কিন্তু বাবার পরিচর্যা করতে অনীহা দেখিয়ে শুক্রবার সকালে বাসা থেকে বের করে অন্য ছেলে আলমগীর হোসেনের বাসা স্বপ্ন মহলের সামনে উঠানে ফেলে রাখেন। এরপর কোনো ছেলেই অসুস্থ বাবাকে ঘরে তোলেননি। উঠানে শফিকুলকে পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয় এক ব্যক্তি জেলা প্রশাসনকে খবর দেন।
ঘটনাস্থলে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রাসেল ইকবাল ও মো. রাজীব হোসেন পৌঁছে শফিকুলের ছেলেদের সঙ্গে কথা বলেন। কিন্তু কেউই বাবার দায়িত্ব নিতে রাজি হননি। পরে বড় মেয়েসহ স্থানীয়দের সঙ্গে ম্যাজিস্টেটরা কথা বলেন। এ সময় বাবাকে নিতে ইচ্ছে প্রকাশ করায় সরকারি গাড়ি দিয়েই শফিকুলকে বড় মেয়ের বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তি জানান, শফিকুল খুব ভালো মানুষ। ছেলেদের প্রতিষ্ঠিত করতে অনেক কষ্ট করেছেন। তাদের সবারই বিলাসবহুল বাড়ি রয়েছে। কিন্তু সেই ছেলেরাই তাকে অসুস্থ অবস্থায় ঘর থেকে বের করে দিয়েছে। এটি ন্যাক্কারজনক ঘটনা। এ রকম ছেলে যেন কারো না হয়।
এ ব্যাপারে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রাসেল ইকবাল বলেন, অসুস্থ শফিকুলকে তার কোনো ছেলেই রাখতে চায় না। তারা শয্যাশায়ী বাবাকে বাসার বাইরে ফেলে রেখেছিল। শফিকুলকে তার বড় মেয়ের বাসায় পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।
হাসান মাহমুদ শাকিল/আরএআর