করোনায় মা-বাবাকে হারিয়ে ডাক্তারি ছাড়ার ঘোষণা!
ডা. জাকি উদ্দিন। করোনা মহামারিতে নিজের জীবন বাজি রেখে শত শত মানুষকে সুস্থ করে তুলেছেন। তবে ৬ মাসের ব্যবধানে সেই করোনায় কেড়ে নিল জন্মদাতা মা-বাবাকে। শত চেষ্টা করেও তাদের বাঁচাতে পারেননি কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের করোনা ইউনিটের এই চিকিৎসক। বাবা-মায়ের আস্থা ছিল সন্তান তাদের সুস্থ করে তুলবে। তাইতো মৃত্যুর জন্য নিজেকে দায়ী করে ডাক্তারি পেশা ছেড়ে দেওয়া উচিত বলে মনে করছেন তিনি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নিজের ক্ষোভ ও অভিমান নিয়ে দিয়েছেন আবেগঘন স্ট্যাটাস।
বুধবার (০৭ জুলাই) রাতে বাবা হারানোর পর ফেসবুকে আবেগঘন স্ট্যাটাসে তিনি লিখেন, ‘আমার বাবা-মায়ের জন্য দোয়া করবেন। কোভিড রোস্টারে রাতে ডিউটিতে ছিলাম। আব্বুর অবস্থা খারাপ শুনে ডিউটি থেকে অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে হাসপাতালে নিয়ে আসি। কিন্তু আটকাতে পারলাম না। জ্ঞান থাকা অবস্থায় বলতেছিল, বড় বাবু ব্যবস্থা করবে। আমি আব্বু-আম্মুর খুব সুন্দর ব্যবস্থা করে দিছি। একদম এতিম হয়ে গেছি ছয় মাসের ভেতর। কোভিড দিয়ে মেরে ফেলছি। কোনো বাবা-মায়ের যেন আমার মতো সন্তান না থাকে। আমি আমার বাবা-মাকে ছয় মাসের মধ্যে মেরে ফেলছি। আমার এই পেশা ছেড়ে দেওয়া উচিত বলে মনে হয়।’
বিজ্ঞাপন
জানা গেছে, বুধবার (০৭ জুলাই) রাতে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে ড. জাকির তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তার বাবা সালাউদ্দিন (৬৬)। করোনায় আক্রান্ত হয়ে মাস ছয়েক আগে মারা যান তার মা জাহানারা নাসরিনও (৫৬)। সে সময় মা-বাবা, ভাই-বোন, স্ত্রী সবাই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ হাসপাতালে করোনার চিকিৎসা নেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেখানে আইসিইউতে থাকা অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন তার মা।
কুমিল্লা মেডিকেলের করোনা ইউনিটের কর্মরত চিকিৎসক ফরহাদ আবেদীন জানান, করোনা ইউনিটে ডা. জাকি উদ্দিন রোগীদের বাঁচানোর জন্য অপ্রাণ চেষ্টা করে আসছেন। ছেলের সামনে এমন মৃত্যুর বিষয়টি মেনে নিতে পারেননি। এমন একজন পরিশ্রমী ডাক্তারের সঙ্গে এমন ঘটনায় আমারও শোকাহত। ছয় মাসের ব্যবধানে বাবা-মাকে হারিয়ে উনি অনেকটা ভেঙে পড়েছেন। তবুও তিনি দেশের স্বার্থে চিকিৎসাসেবা চালিয়ে যাচ্ছেন।
এ বিষয়ে জানতে ডা. জাকি উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলো তাকে পাওয়া যায়নি। তবে তার সহকর্মীরা জানান, আমাদের বিশ্বাস তিনি অভিমান থেকে এমন কথা বলেছেন। ডাক্তারি পেশা ছাড়বেন না।
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা. রেজাউল করিম জানান, জাকি উদ্দিন কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ থেকে পাস করার পর এক বছর আগে ৩৯তম বিসিএসের মাধ্যমে আবার এই হাসপাতালেরই করোনা ইউনিটে চিকিৎসক হিসেবে যোগদান করেন। কুমিল্লা নগরীর রেসকোর্সে একটি ভাড়া বাসায় পরিবারের সবাইকে নিয়ে থাকতেন তিনি। তাদের গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহ জেলার গফরগাঁওয়ে। তার বাবা-মায়ের মৃত্যুতে আমরা দুঃখ প্রকাশ করছি।
তবে তার সহকর্মীরা বলেন, করোনা চিকিৎসকদের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন বন্ধ করে দেওয়ার পর তিনি বিভিন্ন সময় বাসাতেই কোয়ারেন্টাইন পালন করতেন। যে কারণে জাকি উদ্দিন হয়তো বলতে চেয়েছেন- তার মাধ্যমেই তার বাবা-মা করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।
বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন কুমিল্লা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ডা. আতাউর রহমান জসিম জানান, কুমিল্লায়ও করোনা চিকিৎসক ও নার্সদের জন্য আলাদাভাবে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনের জন্য কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে ও কুমিল্লা ক্লাবে ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কিন্তু পরে তা বন্ধ হয়ে যায়। প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনের ব্যবস্থা থাকলে করোনা চিকিৎসকদের পরিবার বা স্বজনরা করোনার ঝুঁকি থেকে অনেকটাই মুক্ত থাকেন।
এসপি