১২ বছর কেটেছে রাস্তায়, অবশেষে ঠাঁই হলো বৃদ্ধাশ্রমে
কখনো রাস্তার ধারে, কখনো মাছের বাজারে আবার কখনো চায়ের দোকানে দেখা মিলত। এভাবেই ময়মনসিংহের ত্রিশালে খোলা আকাশের নিচে দিন-রাত কেটেছে এক যুগেরও বেশি সময়। মানুষের দেওয়া খাবার খেয়েই জীবন-ধারণ করে আসছিলেন ৭০ বছর বয়সী মানসিক ভারসাম্যহীন এক বৃদ্ধা। জীবন সায়াহ্নে এসে এবার তার ঠাঁই হয়েছে ভালুকা উপজেলার ‘সাড়া মানবিক বৃদ্ধাশ্রমে’।
শনিবার (০৩ জুলাই) ত্রিশাল উপজেলা ডাকবাংলোর সামনে থেকে তাকে তুলে নিয়ে আশ্রয় দেয় সাড়া মানবিক বৃদ্ধাশ্রম কর্তৃপক্ষ। রোববার (০৪ জুলাই) রাতে ঢাকা পোস্টকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বৃদ্ধাশ্রমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল মালেক।
বিজ্ঞাপন
তিনি বলেন, ‘ত্রিশাল হেল্প লাইন’ নামে একটি ফেসবুক গ্রুপের মাধ্যমে মানসিক ভারসাম্যহীন ওই নারীর ব্যাপারে আমরা জানতে পারি। পরে এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তিনি এক যুগের বেশি সময় ধরে ত্রিশাল উপজেলার ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশে ও বিভিন্ন স্থানে বসবাস করে আসছেন। বৃদ্ধাশ্রমটি শুধুমাত্র রাস্তায় পড়ে থাকা ভাসমান মানুষদের জন্য। তাই বৃদ্ধাশ্রম কর্তৃপক্ষ তাকে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। পরে শনিবার ত্রিশাল থানার ওসি মাইন উদ্দিনের উপস্থিতিতে উপজেলা ডাকবাংলোর সামনে থেকে তুলে বৃদ্ধাশ্রমে নিয়ে আসে আমাদের স্বেচ্ছাসেবকরা।
তিনি আরও বলেন, বৃদ্ধাশ্রমে আনার পর প্রথমে তার জটবাঁধা চুল ও হাত-পায়ের নখ কাটা হয়। তারপর তাকে গোসল করিয়ে খাওয়া-দাওয়া করানো হয়। এই নারীর শারীরিক অবস্থা খুবই খারাপ। তার নিতম্বে এবং গোপনাঙ্গে অনেক ইনফেকশন রয়েছে।
বৃদ্ধাশ্রমেই ওই নারীর সেবা ও চিকিৎসা চলবে জানিয়ে ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, মানসিক ভারসাম্যহীন এই নারীকে থাকা-খাওয়াসহ চিকিৎসাসেবা দেওয়ার পাশাপাশি তার স্বজনদের খোঁজ করার চেষ্টা করা হবে। পরিবারের সন্ধান পেলে তাদের হাতে তুলে দেওয়া হবে।
জানা গেছে, ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার ভান্ডাব এলাকায় দুই বছর আগে প্রতিষ্ঠা করা হয় সাড়া মানবিক বৃদ্ধাশ্রমের। এ পর্যন্ত ৩৮ জন বয়স্ক নারী এবং পুরুষকে রাস্তা থেকে তুলে এনে এই বৃদ্ধাশ্রমে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে পাঁচজনকে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে, আটজন মারা গেছেন এবং মানসিক ভারসাম্যহীন তিনজন রাতের আঁধারে পালিয়ে গেছেন। বর্তমানে এখানে ২২ জন অজ্ঞাত ব্যক্তি রয়েছে। এখানে নিয়ে আসার পর চিকিৎসাসেবা দিয়ে ২৫ জনকে সুস্থ করে তোলা হয়েছে।
এসপি