রংপুরে সড়কে বেড়েছে মানুষের আনাগোনা, ঘরে ফেরাচ্ছে প্রশাসন
করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে সরকার ঘোষিত সাতদিনের কঠোর বিধিনিষেধের তৃতীয় দিনে রংপুরে বৈরী আবহাওয়ার মধ্যেই ব্যাপক তৎপরতা চালাচ্ছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হওয়া মানুষজনকে ঘরে ফেরানোসহ অহেতুক ঘোরাঘুরি বন্ধে পরিচালনা করা হচ্ছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।
মহানগরসহ জেলার হাটে বাজারে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে মাঠে সেনাবাহিনী, বিজিবি, র্যাব, পুলিশ ও আনসার সদস্যদের টহল অব্যাহত রয়েছে। তবে গত দুদিনের তুলনায় শনিবার (০৩ জুলাই) সড়কে মানুষের আনাগোনা যেমন বেড়েছে, তেমনি অলিগলিতে বন্ধ হয়নি জটলা।
বিজ্ঞাপন
সকাল থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টিতে ভিজেই সাধারণ মানুষদের বাইরে বের হতে দেখা গেছে। প্রশাসনের মুখোমুখি হলে কারও কারও ছিল নানা অযুহাত। কারণে-অকারণে বের হওয়া এসব মানুষদের বেশিরভাগই বিধিনিষেধ মানছেন না। গত দুইদিনের মতো তৃতীয় দিনেও রংপুর নগরের গুরুত্বপূর্ণ ২০টি পয়েন্টে পুলিশের চেকপোস্টে তল্লাশি অব্যাহত রয়েছে। অহেতুক বের হওয়া লোকজনকে আটক করে জেরা করছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
রংপুর সিটি করপোরেশন ও জেলা প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে রংপুর মহানগর ছাড়াও জেলার প্রতিটি উপজেলায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে শতাধিক মামলা করা হয়েছে। নিয়মিত চেকপোস্টের বাইরে পাড়া-মহল্লায় জটলা করে আড্ডা ও ঘোরাঘুরি বন্ধে মাইকিং করে সতর্ক করছে মেট্রোপলিটন পুলিশ ।
সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত নগরীর পায়রা চত্বর, জিলা স্কুল মোড়, সিটি বাজার, জাহাজ কোম্পানি, শাপলা চত্বরসহ বেশ কিছু এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, যারা স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। বিশেষ করে বৃষ্টিতে ভিজে র্যাব-১৩ এর অধিনায়ক রেজা আহমেদ ফেরদৌস, মেট্রোপলিটন পুলিশের সিনিয়র সহকারী কমিশনার ফারুক আহমেদ, কোতোয়ালি থানার ওসি আব্দুর রশিদ, জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ রায়হানুল ইসলাম, মাহমুদ হাসান মৃধা, সিটি করপোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ফিরুজুল ইসলামসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মত। রাস্তায় বের হওয়া লোকজনদের কাজ শেষে দ্রুত বাড়ি ফিরতে বলছেন তারা। পাশাপাশি যারা স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা না করে চলাফেরা করছেন, তাদের বিরুদ্ধে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে।
শুক্রবারের চেয়ে শনিবার সড়কে রিকশার পাশাপাশি অটোরিকশার দৌরাত্ম্য বেড়েছে। বিধিনিষেধ মেনে শপিংমল, বিপণী বিতান, মার্কেট বন্ধ রেখেছেন ব্যবসায়ীরা। তবে পাড়া-মহল্লার ভেতরে ও অলিগলিতে থাকা দোকানপাট ও হোটেল রেস্তোরাঁ খোলা রয়েছে। দুপুরে জিলা স্কুল মোড়ে অভিযান পরিচালনা করে মাস্ক পরিধান না করা, অহেতুক বাইরে বের হওয়া, ভুয়া পরিচয়পত্র ব্যবহারকারী বিভিন্ন বয়সী ১৫ জনকে আটক করে র্যাব-১৩ এর টহল টিম। এছাড়াও বিভিন্ন স্থানে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে মামলা দিয়ে জরিমানা আদায় ও বিভিন্ন মেয়াদে দণ্ডাদেশ দেওয়া হয়।
নগরীর মেডিকেল মোড়, ডিসির মোড়, কাচারী বাজার, টাউন হল চত্বর, সুপার মার্কেট মোড়, প্রেসক্লাব মোড়, গ্র্যান্ড হোটেল মোড়, লালবাগ, বিশ্ববিদ্যালয় মোড়, মডার্ন অর্জন মোড়সহ বিভিন্ন এলাকায় পুলিশের চেকপোস্ট দেখা গেছে। এসব স্থানে দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা বিধিনিষেধের আওতার বাইরে থাকা যানবাহন চলাচলে বাধা দিচ্ছেন। বিশেষ করে কাগজপত্র ছাড়া বের হওয়া মোটরসাইকেল, প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস, সিএনজি ও অটোরিকশার চালকদের জরিমানাও করা হচ্ছে।
এদিকে গত দুদিনের তুলনায় শনিবার সড়কে পণ্যবাহী ট্রাক, পিকআপ ভ্যানসহ হালকা যানবাহন চলাচল বেড়েছে। বিভিন্ন সড়কে হাঁড়িভাঙ্গা আম ফেরি করে বিক্রি করতে আসা আম চাষি ও ব্যবসায়ীদের উপস্থিতিও ছিল লক্ষ্য করার মতো। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে টহলের পাশাপাশি বিনামূল্যে মাস্ক বিতরণ করা হচ্ছে। তবে জরিমানার চেয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি ও করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি রোধে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে মানুষজনকে উদ্বুদ্ধ করছে প্রশাসন।
রংপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, কঠোর বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে রংপুর সিটি করপোরেশন এলাকায় দুই প্লাটুন বিজিবি চারটি ভাগে বিভক্ত হয়ে টহল দিচ্ছে। রংপুরের আট উপজেলায় আটটি এবং সিটি করপোরেশন এলাকায় সেনাবাহিনীর একটি টহল টিম কাজ করছে। এছাড়াও পুলিশ, র্যাব, আনসারের পক্ষ থেকে জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে মাইকিংসহ টহল অব্যাহত রয়েছে। গত দুইদিনে জেলায় প্রায় ৭০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। মামলা হয়েছে দেড় শতাধিকের মতো।
ফরহোদুজ্জামান ফারুক/আরএআর