করোনা প্রতিরোধে সর্বাত্মক লকডাউনের দ্বিতীয় দিন শুক্রবারেও বরিশালে বিভিন্ন অজুহাতে বের হচ্ছে মানুষ। শুধু বরিশাল শহর নয়, উপজেলা সদরগুলোতেও একই চিত্রের খবর পাওয়া গেছে। 

স্থানীয় প্রশাসন থেকে জানানো হয়েছে, লকডাউন সফল করতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান, পুলিশের চেকপোস্ট ও মানুষকে ঘরের বাইরে বের হতে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিকে জরিমানা করা হলেও লকডাউন অমান্যকারীদের আটকের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।

বরিশাল নগরীর নথুল্লাবাদ, রূপাতলী, বাংলাবাজার, সদর রোড, পোর্ট রোড, নতুন বাজার, হাটখোলা, চকবাজার ও লঞ্চঘাট ঘুরে দেখা গেছে যাত্রী পরিবহনের থ্রি-হুইলার, মোটরচালিত রিকশা, মাইক্রোবাস বন্ধ রয়েছে। তবে পায়ে চালানো রিকশা ও মোটরসাইকেল চলাচল করছে। চেকপোস্টের মুখে পড়লে রিকশা ও মোটরসাইকেলের যাত্রীরা বিভিন্ন অজুহাতের কথা বলেন।

সকাল থেকে মাছ ও সবজি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করেই জমে উঠেছে বাজার। বাজারে চা-সিগারেটের দোকানগুলো খোলা রয়েছে। বিশেষত চায়ের দোকানের সামনে পর্দা টানিয়ে ভেতরে খোশগল্পও করছেন অনেকে। 

কোতয়ালী মডেল থানার এসআই আসাদ জানান, উদ্দেশ্যহীনভাবে ঘরের বাইরে বের হওয়া কয়েকজনকে সতর্ক করে বাসায় পাঠানো হয়েছে। এছাড়া চেকপোস্টে সবাইকে ঘর থেকে বের হওয়ার কারণ ও গন্তব্য জানতে চাওয়া হচ্ছে।

এদিকে পায়ে চালিত রিকশা চলাচলের অনুমতি থাকায় সুযোগ বুঝে অস্বাভাবিক ভাড়া আদায় করছেন চালকরা। লকডাউনের আগে রূপাতলী থেকে পুলিশ লাইন্স পর্যন্ত ৪০ টাকা ভাড়া হলেও বর্তমানে ৭০ টাকা, রূপাতলী থেকে লঞ্চঘাট ৫০ টাকা আগের ভাড়া হলেও বর্তমানে ১২০ টাকা রাখা হচ্ছে, রূপাতলী থেকে নথুল্লাবাদ ৫০ টাকা ভাড়া হলেও বর্তমানে ১০০ টাকা আদায় করা হচ্ছে।

স্থানীয় একটি দৈনিকের বার্তা সম্পাদক এইচকে রোকন জানিয়েছেন, প্যাডেল চালিত রিকশাওয়ালারা মাত্রাতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছেন। লকডাউনে প্রয়োজনীয় কাজ বা হাসপাতালে যেতে এদের হাতে জিম্মি নগরবাসী।

আরেক যাত্রী রোকসানা কলি ঢাকা পোস্টকে বলেন, এক ঘণ্টা অপেক্ষা করে রোগী নিয়ে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাচ্ছি এক রিকশায়। ভাড়ার চুক্তি হয়েছে ৮০ টাকা। অথচ আগে এই আধা কিলোমিটারের একটু বেশি পথ পায়ে চালিত রিকশায় যেতাম ৩০/৪০ টাকায়। তার দাবী লকডাউনে যেসব যানবাহন চলাচল করতে পারবে তাদের ভাড়া নির্ধারণ করে দেওয়া উচিত।

বাসস্ট্যান্ডগুলো ঘুরে দেখা গেছে, মোটরসাইকেলে করে আজও ঢাকার পথে যাচ্ছে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ। নথুল্লাবাদ থেকে মাওয়া পর্যন্ত জনপ্রতি ৩ হাজার টাকা নিচ্ছে মোটরসাইকেল চালকরা। 
কৌশল করে যাত্রী নিয়ে দূরের গন্তব্যে রওয়ানা হন বলে জানিয়েছেন মোটরসাইকেল চালক বিপ্লব। তিনি জানান, পরিচিত এক ক্লিনিক মালিকের কাছ থেকে একটি প্রেসক্রিপশন এনেছেন রোগীর নামের স্থান খালি রেখে। ওই প্রেসক্রিপশনে ওষুধ লেখা রয়েছে। পাশাপাশি রোগীতে ঢাকা রেফার্ড করার কথাও লেখা রয়েছে। চেকপোস্টে সেই প্রেসক্রিপশন দেখিয়ে পার হন বলে জানান বিপ্লব। তিনি বলেন, প্রতি ট্রিপে মূল প্রেসক্রিপশনের একটি ফটোকপি করে রোগীর নামের স্থানে যাত্রীর নাম বসিয়ে নেন।

জেলা প্রশাসন থেকে জানানো হয়েছে, নগরীতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জাবেদ হোসেন চৌধুরী ও মুশফিকুর রহমানের নেতৃত্বে দুটি ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালাচ্ছে। এছাড়াও ১০টি উপজেলায় নির্বাহী কর্মকর্তারা (ইউএনও) ও সহকারী কমিশনারদের (ভূমি) লকডাউন সফল করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তারা নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে দ্বিতীয় দিনেও কাজ করছেন।

এর আগে বৃহস্পতিবার (০১ জুলাই) লকডাউনের প্রথম দিনে নির্দেশনা অমান্য করায় ৫৬ ব্যক্তিকে ৩৭ হাজার টাকা জরিমানা করে জেলা প্রশাসন। এর মধ্যে বরিশাল নগরীতে ৩৪ জনকে ১৯ হাজার ১০০ টাকা এবং জেলার ১০ উপজেলায় ২২ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ১৭ হাজার ৯০০ টাকা জরিমানা করা হয়।

জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দিন হায়দার জানিয়েছেন, সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে জেলা প্রশাসন থেকে সর্বাত্মক চেষ্টা চালানো হচ্ছে। মানুষকে ঘরের বাইরে বের হতে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। যারা নিয়ম মানছেন না তাদের বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগ করছে প্রশাসন। পর্যায়ক্রমে এই তৎপরতা আরও জোরালো করা হবে বলে জানান তিনি।

সৈয়দ মেহেদী হাসান/ওএফ