রামেক হাসপাতালে জুনে করোনায় ৪০৫ জনের মৃত্যু
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের করোনা ইউনিটে গত ৪৮ ঘণ্টায় প্রাণ হারিয়েছেন ৪৭ জন। জুন মাসজুড়ে হাসপাতালে প্রাণ হারিয়েছেন ৪০৫ জন। করোনা ধরা পড়ার পর গত বছরের মে থেকে এই বছরের জুন পর্যন্ত হাসপাতালে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড এটি।
এই ১৪ মাসে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৭ হাজার ১৬১ জন রোগী। এরমধ্যে সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়ে গেছেন ৫ হাজার ৯২৭ জন। করোনায় হার মেনেছেন ১ হাজার ৭৮ জন। রামেক হাসপাতাল পরিচালকের দফতর এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।
বিজ্ঞাপন
সূত্রটি জানিয়েছে, করোনা আইসোলেশন ওয়ার্ড চালুর পর গত বছরের এপ্রিল থেকে রোগী ভর্তি শুরু হয়। প্রথম মাসে ভর্তি হন ২৫ জন। এরমধ্যে ২৩ জনই সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়ে যান। ওই মাসে কেউ মারা যাননি হাসপাতালে।
পরের মাস জুনে ভর্তি হন ১৯৭ হন। ওই মাসে ১৮১ জন হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেলেও মারা যান ৫ জন। এক মাস পরই ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে করোনা। গত বছরের জুনে হাসপাতালে আসেন ৫২৪ জন। এর মধ্যে প্রাণ হারিয়েছেন ৩৭ জন। ওই মাসে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র নিয়েছেন ৪১৪ জন।
গত বছরের জুলাইয়ে করোনা সংক্রমণ এবং মৃত্যু সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায়। ওই মাসে হাসপাতালে ভর্তি ৭৭৫ জনের মধ্যে প্রাণ হারান ১১১ জন। হাসপাতাল ছেড়ে যান ৬৭৫ জন। পরের মাস আগস্টে ভর্তি হন আরও ৭৫৪ জন রোগী। ওই মাসে মারা যান ৯৭ জন। এর মধ্যে ২৬ জনের মৃত্যুর কারণ করোনা। ওই মাসে হাসপাতাল ছেড়ে যান ৬৭১ জন।
গত বছরের সেপ্টেম্বরে সংক্রমণ কিছুটা কম ছিল। ওই মাসে হাসপাতালে ভর্তি হন ৪০৩ জন। একই মাসে ৩৭৪ জন হাসপাতাল ছেড়ে যান। ওই মাসে মারা যান ৫০ জন, যার ১৩ জনই মারা যান করোনায়। এরপর থেকে ক্রমেই কমেছে সংক্রমণ ও মৃত্যু।
এই বছরের ফেব্রুয়ারিতে হাসপাতালে ভর্তি হন ২০১ জন। একই মাসে হাসপাতাল ছেড়ে যান ১৯৩ জন। ওই মাসে প্রাণ যায় ১৭ জনের। এরমধ্যে একজনের মৃত্যুর কারণ করোনা।
এরপর থেকে ফের বাড়তে শুরু করে করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যু। গত মার্চে রামেক হাসপাতালে ভর্তি হন ৩৩৪ জন। একই মাসে হাসপাতাল ছেড়ে যান ২৭২ জন। ওই মাসে মোট ৩১ জনের মৃত্যু হয় হাসপাতালে, যার মধ্যে ৩ জন মারা যান করোনায়।
ঈদুল ফিতরের পর থেকে এই অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে করোনার ভারতীয় ধরন। এতে দ্রুত বাড়তে থাকে সংক্রমণ। গত এপ্রিলে ভর্তি এবং মৃত্যু দাঁড়ায় দ্বিগুণে। গত এপ্রিলে হাসপাতালে ভর্তি হন ৬৫৪ জন। একই মাসে হাসপাতাল ছেড়ে যান ৫২০ জন। গত এপ্রিলে মারা যান ৭৯ জন। এরমধ্যে ৩৬ জনের মৃত্যু হয়েছে করোনায়।
গত মে মাসে হাসপাতালে মারা গেছেন ১২৪ জন। এরমধ্যে ৫৩ জন মারা গেছেন করোনায়। ওই মাসে হাসপাতালে ভর্তি জন ৮০৮ জন রোগী। একই মাসে হাসপাতাল ছেড়ে যান ৬১৭ জন।
সর্বশেষ গত জুনে হাসপাতালে মৃত্যু পৌঁছায় চূঁড়ায়। এই মাসে মারা গেছেন ৪০৫ জন। এরমধ্যে করোনায় মারা গেছেন ১৮৯ জন। জুনে হাসপাতালে ভর্তি হন ১ হাজার ৩৯৭ জন। একই মাসে হাসপাতাল ছেড়ে যান ৯৮৫ জন।
গত জুনে হাসপাতালে মৃত্যুর ব্যাপকতা জানতে চাইলে হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী বলেন, গত জুনে এই অঞ্চলে করোনার ভারতীয় ধরন ছড়িয়ে পড়েছে। তাছাড়া আক্রান্তদের শতকরা ৮০ শতাংশ গ্রামের বাসিন্দা।
তিনি বলেন, করোনা রোগীর জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন অক্সিজেন। সংক্রমণে ফুসফুস মারাত্মকভাবে আক্রান্ত হওয়ায় রোগী অক্সিজেন সংকটে ভোগেন। অক্সিজেন সেচুরেশন ৯২ এ নামলেই হাসপাতালে নিতে হবে। গ্রামের লোকজন এই বিষয়টি জানেন না।
তিনি আরও বলেন, ১ জুন সকাল ৯টা পর্যন্ত ৪০৫ শয্যার রামেক হাসপাতালের করোনা ইউনিটে ভর্তি রয়েছেন ৪৬২ জন রোগী। এর মধ্যে আইসিইউতে ভর্তি রয়েছেন ২০ জন। করোনা নিয়ে এ পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ১৯৫ জন। ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৬৬ জন। এই একদিনে হাসাপাতল ছেড়েছেন ৪৬ জন।
ফেরদৌস সিদ্দিকী/এমএসআর