কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলার চার্জ গঠন করেছেন আদালত। একই সঙ্গে ওসি প্রদীপসহ ছয় আসামির জামিন নামঞ্জুর করেন আদালত। 

রোববার (২৭ জুন) কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ ইসমাঈল এ মামলার চার্জ গঠন করেন এবং শুনানি শেষে ছয় আসামির জামিন নামঞ্জুর করেন। 

কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ফরিদুল আলম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, আগামী ২৬, ২৭ ও ২৮ জুলাই বাদী পক্ষের ১০ সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য দিন ধার্য করা হয়েছে। 

বাদী পক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ মোস্তফা ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রমাণ করতে পেরেছি, ওই দিন চেকপোস্টে পরিদর্শক লিয়াকত ও ওসি প্রদীপসহ আসামিরা অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছেন। তাই জামিন চাওয়া হলেও ছয় আসামির জামিন নামঞ্জুর করা হয়েছে। 

বাদী পক্ষের আরেক আইনজীবী মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, গত শুনানিতে আসামি পক্ষের আইনজীবী রানা দাশ গুপ্ত বলেছিলেন, ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে ওসি প্রদীপ জুতা চেপে সিনহাকে হত্যা করেছেন সেই বিষয়টি তদন্ত রিপোর্টে নেই। কিন্তু ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে এই বিষয়টি রয়েছে। কেন তিনি এটা অস্বীকার করছেন আমরা জানি না।

আসামি পক্ষের আইনজীবী রানা দাশ গুপ্ত বলেন, আমরা আদালতকে বলেছি এজাহার এবং চার্জশিটে গরমিল রয়েছে। বিজ্ঞ বিচারক বিষয়টা আমলে নেননি। তাই জামিন নাকচ করেছেন।

উল্লেখ্য, আলোচিত মেজর সিনহা হত্যা মামলায় ২০২০ সালের ১৩ ডিসেম্বর ওসি প্রদীপ কুমার দাসসহ ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দেন তদন্ত কর্মকর্তা র‌্যাব-১৫ এর সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো. খায়রুল ইসলাম।

ওই বছরের ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর চেকপোস্টে গাড়ি তল্লাশিকে কেন্দ্র করে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। 

এ ঘটনায় গত ৫ আগস্ট নিহত সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বাদী হয়ে বাহারছড়া পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের সাবেক ইনচার্জ পরিদর্শক লিয়াকত আলীকে প্রধান আসামি এবং টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাসকে ২ নম্বর আসামি করাসহ নয় পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করেন। আদালত মামলাটি তদন্ত করার আদেশ দেন র‌্যাবকে।

এরপর গত ৬ আগস্ট প্রধান আসামি লিয়াকত আলী ও টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাসসহ ৭ পুলিশ সদস্য আদালতে আত্মসমর্পণ করেন।

মামলায় গ্রেফতার ১৪ আসামিকে র‌্যাবের তদন্তকারী কর্মকর্তা বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। এদের মধ্যে টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাস ও কনস্টেবল রুবেল শর্মা ছাড়া ১২ জন আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

এদিকে সিনহা হত্যার মামলাটি বেআইনি ও অবৈধ দাবি করে ২০২০ সালের ৪ অক্টোবর কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে প্রধান আসামি লিয়াকতের আইনজীবী মাসুদ সালাহ উদ্দিন একটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলার বিশেষ কোনো অগ্রগতি নেই।

মুহিববুল্লাহ মুহিব/এসপি/জেএস