২৪ বছর পর আপন ঠিকানায় ফিরলেন জয়নাল
জয়নাল আবেদীনের বয়স তখন ছয় বছর। মা মেহেরুন বেগমের সঙ্গে একদিন বড় বোনের বাসা ঢাকার দয়াগঞ্জ এলাকায় যান তিনি। সেখানে গিয়ে হারিয়ে যান জয়নাল। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তাকে পায়নি পরিবার।
জয়নাল আবেদীনকে নিয়ে সম্প্রতি আর জে কিবরিয়ার ‘আপন ঠিকানা’ অনুষ্ঠানের একটি ভিডিও ভাইরাল হলে বিষয়টি জয়নাল আবেদীনের পরিবারের নজরে আসে। পরে যোগাযোগ করে শনিবার (২৬ জুন) জয়নাল আবেদীনকে তার পরিবার ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে আসে। দীর্ঘ ২৪ বছর পর হারিয়ে যাওয়া সন্তানকে ফিরে পেয়ে খুশি তার পরিবার।
বিজ্ঞাপন
এদিকে ছোট্ট সেই জয়নাল এখন অনেক বড় হয়েছেন। নিজে পছন্দ করে বিয়েও করেছেন। তিনি এখন এক পুত্র ও কন্যা সন্তানের বাবা। পরিবার ছাড়া জীবন থেকে চলে যাওয়া ২৪টি বছরের কষ্ট এখন তিনি ভুলে গেছেন নিমিষেই।
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার সনমান্দি ইউনিয়নের মামুরদী গ্রামের আব্দুর রহমানের ছেলে জয়নাল আবেদীন (৩০)। ১২ বছর আগে তার বাবা তার শোকে অসুস্থ হয়ে মারা যান।
সরেজমিনে দেখা গেছে, জয়নাল আবেদীন তার ১০ বছরের ছেলে ও তিন বছরের মেয়ে নিয়ে পরিবারের সঙ্গে বেশ আনন্দে সময় কাটাচ্ছেন। তার পরিবারও যে তাকে পেয়ে খুশি, তা সবার আদর-আপ্যায়নে বোঝা যাচ্ছে। তার সন্তানদের আদর করছেন তার চাচা, ভাই ও ভাতিজারাসহ অনেকেই। দীর্ঘ ২৪ বছর পর বাড়িতে ফিরে আসায় তাকে দেখতে বাড়িতে ভিড় করছে গ্রামের মানুষ।
কথা হয় জয়নাল আবেদীনের ছোট ভাই নোয়াব শরীফের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমরা যখন ছোট ছিলাম ঢাকায় বেড়াতে গিয়ে জয়নাল ভাই হারিয়ে যান। এরপর অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
তিনি বলেন, মা মেহেরুন বেগম আমার ভাই জয়নালের জন্য সব সময় কান্নাকাটি করতেন। এখনো জয়নাল ভাইয়ের ব্যবহৃত জামাকাপড়, জিনিসপত্র আমার মা যত্ন করে রেখে দিয়েছেন।
নোয়াব শরীফ বলেন, কিছুদিন আগে জনপ্রিয় রেডিও উপস্থাপক আর জে কিবরিয়ার ‘আপন ঠিকানা’ নামে একটি অনুষ্ঠানে আমার ভাইকে নিয়ে একটা প্রোগ্রাম করা হয়। সেই ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। পরে আমাদের গ্রামের ছেলে মালয়েশিয়া প্রবাসী আবুল কালাম বিদেশে বসে ভিডিওটি দেখে আমাকে খবর দেন। পরিচয় ও হারিয়ে যাওয়ার ঘটনা মিলে যাওয়ায় আমরা তাকে আনতে ঢাকা যাই। শনিবার স্ত্রী সন্তানসহ জয়নাল আবেদীনকে ফিরে পাই। তারপর তাদের বাড়িতে নিয়ে আসি।
দীর্ঘ ২৪ বছর পর বাড়ি ফেরা জয়নাল আবেদীন বলেন, আমি হাঁটতে গিয়ে হঠাৎ মাকে হারিয়ে ফেলি। পরে অনেক কান্নাকাটির পর শামসুল হক নামে একজন রিকশাচালক আমাকে তার বাসায় নিয়ে যান। তার বাড়ি ভোলা জেলায়। পরে ওই রিকশাচালক আমাকে তার গ্রামের বাড়ি ভোলার দৌলতগাঁ উপজেলায় নিয়ে যান। সেখানেই প্রায় ১০ বছর কাটে আমার। তারপর আমাকে আবারও ঢাকায় নিয়ে আসা হয়। ঢাকায় নিয়ে আসার পর ড্রাইভিং শেখানো হয়। পরে একটি কোম্পানিতে গাড়িচালক হিসেবে চাকরি পাই।
তিনি আরও বলেন, ২৪ বছর পর পরিবারকে খুঁজে পাব সেটা ভাবতেও পারিনি। ‘আপন ঠিকানা’ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আমি আমার পরিবারকে খুঁজে পেয়েছি। আল্লাহ আমাদের মিলিয়ে দিয়েছেন। আমার পরিবারকে খুঁজে পাওয়ার জন্য স্মৃতি ছাড়া আমার কাছে কিছুই ছিল না।
জয়নাল আবেদীনের মা মেহেরুন বেগম বলেন, ছয় বছর বয়সে হারিয়ে যাওয়া জয়নালকে আমরা ফিরে পেয়েছি। দীর্ঘ ২৪ বছর পর জয়নাল যেমন পরিবার পেয়ে খুশি, আমরাও তাকে পেয়ে অনেক খুশি।
শেখ-ফরিদ/আরএআর