‘আমি তানভীর ইমাম। সিরাজগঞ্জ-৪ উল্লাপাড়ার এমপি। আমি এইচ টি ইমামের ছেলে। গুলশান আরা খানম আমার বোন। আপনারা ওনার কাজটা করে দিলে খুব খুশি হব। প্লিজ, অলমাইটি আল্লাহ।’

সিরাজগঞ্জ-৪ (উল্লাপাড়ার) আসনের এমপি ও প্রধানমন্ত্রীর প্রয়াত রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমামের ছেলে তানভীর ইমামের পরিচয় দিয়ে এক ব্যক্তি এভাবেই ফোন করতেন বিভিন্ন দফতরের কর্মকর্তাদের, করতেন নানা তদবির। আর তাতে পুলিশ ও প্রশাসনের কর্মকর্তারাও হতেন বিভ্রান্ত।

নানারকম তদবিরের জন্য ফোনকারী এই ‘এইচটি ইমামের ছেলে’র নাম জহির উদ্দিন বাবুল। শেষ পর্যন্ত তিনি ধরা খেয়েছেন পুলিশের হাতে।

রাজধানীর ফকিরেরপুল এলাকার হোটেল ‘শেল্টার’-এ তিন বছর ধরে অবস্থান করে এমপি তানভীর ইমাম সেজে অনেক রকম প্রতারণা করে আসছিলেন জহির উদ্দিন বাবুল। সবশেষ ময়মনসিংহ জেলা গোয়েন্দা পুলিশের কাছে একটি তদবির করতে গিয়ে ধরা পড়েছেন এই ‘ভুয়া এমপি’। 

তাকে আটকের পর তার সহযোগী ময়মনসিংহ নগরীর সেনবাড়ি এলাকার গুলশান আরা খানমকেও (৪৫) আটক করা হয়েছে। তিনি চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে টাকা হাতিয়ে নিতেন এবং খালি চেক নেওয়ার পর তাতে টাকার অঙ্ক বসিয়ে দিতেন। পরে টাকা উদ্ধারের জন্য অভিযোগ নিয়ে যেতেন বিভিন্ন দফতরে।

বুধবার (২৩ জুন) সকালে ঢাকার ফকিরেরপুল থেকে জহির উদ্দিন বাবুল এবং ময়মনসিংহের সেনবাড়ি এলাকা থেকে গুলশান আরা খানমকে আটক করে ডিবি পুলিশ।

জহির উদ্দিন বাবুল (৫৫) কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর উপজেলার হালিমপুর গ্রামের প্রয়াত ডা. মাহতাব উদ্দিন আহাম্মদের ছেলে।

বুধবার দুপুরে ময়মনসিংহ জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ কামাল আকন্দ এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। 

তিনি জানান, দীর্ঘদিন ধরে শুলশান আরা খানম মাঠপর্যায়ে সহজ-সরল নারীদের ফাঁদে ফেলে তাদের আত্মীয়স্বজন ও ছেলে-মেয়েদের চাকরি দেওয়ার কথা বলে ‘ভুয়া এমপি’ জহির উদ্দিনের সঙ্গে কথা বলিয়ে দিতেন। এতে সাধারণ মানুষ চাকরির আশায় শুলশান আরা খানমকে টাকার অঙ্ক ছাড়াই চেক প্রদান করতেন। পরে গুলশান আরা চেক-এ ইচ্ছেমতো টাকার অঙ্ক বসিয়ে উত্তোলনের জন্য সরকারি বিভিন্ন অফিসে অভিযোগ করতেন। আর জহির উদ্দিন বাবুল এমপি পরিচয়ে ফোন দিয়ে সেসব অভিযোগ গুলশান আরার পক্ষে নিষ্পত্তি করতে তদবির করতেন। 

ডিবির এই ওসি জানান, এ চক্রটি সম্প্রতি ছয়জনের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছে সাড়ে ৯ লাখ টাকা। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া ৮টি চেকে বসানো হয়েছে ৪৪ লাখ ৩৩ হাজার টাকার অঙ্ক।

প্রতারণার শিকার আফরোজা আক্তার ডালিয়া নামে এক নারী বলেন, গুলশান আরা খানমের সঙ্গে আমাদের ভালো সম্পর্ক ছিল। তার বাসায় যাতায়াত ছিল। সেই পরিপ্রেক্ষিতে আমার ভাসুরের ছেলে ও মেয়েকে সেনাবাহিনীর সিভিলে চাকরি দেওয়ার কথা বলেছিল সে। বলেছিল তানভীর ইমাম এমপি তার খালাতো ভাই। আমরা তাকে বিশ্বাস করি এবং ১৭ লাখ টাকার চুক্তি করি।

আফরোজা বলেন, তার কথামতো ৬ লাখ টাকা নগদ দিই। একইসঙ্গে ৫টি চেক নেয় সে। কিন্তু চাকরি ও টাকা ফেরত না দিয়ে ব্ল্যাংক চেকে ২০ লাখ টাকা বসিয়ে সে আমাদের উকিল নোটিশ পাঠায় এবং আমাদের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ করে। আমরা টাকা ফেরত চাই এবং এই প্রতারকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।

জেলা পুলিশ সুপার মোহা. আহমার উজ্জামান বলেন, এই প্রতারক চক্রটি মূলত নারীদের টার্গেট করে। চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে তাদের কাছ থেকে চেক নেয়। পরে সেটি তাদের পাওনা টাকা বলে দাবি করে এবং না দিলে পুলিশের সহযোগিতা চায়।

পুলিশ সুপার বলেন, প্রতারক বাবুল আমাদের কাছে এমপি পরিচয়ে ফোন দিয়ে তদবির করেন। এতে আমাদের সন্দেহ হয়। পরে আমরা বিষয়টি অনুসন্ধান করি। অনুসন্ধানে জানতে পারি, এমপি পরিচয় দানকারী আসলে ভুয়া ব্যক্তি। এরপর তাকে ঢাকা থেকে আটক করে নিয়ে আসি। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি স্বীকার করেছেন, অধিক অর্থ উপার্জন করার লোভে তিনি অভিনব এই প্রতারণা করে আসছেন।

উবায়দুল হক/এনএ/জেএস