পল্লী বিদ্যুৎ : ঘাটতি নেই, তবুও লোডশেডিং
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পল্লী বিদ্যুৎ নিয়ে গ্রাহকদের ভোগান্তির শেষ নেই। একটু ঝোড়ো হাওয়া বইলেই শুরু হয় লোডশেডিং। দিনে অন্তত তিন-চারবার লোডশেডিংয়ের কবলে পড়তে হয় গ্রাহকদের। এ ছাড়া মাঝে-মধ্যেই কাটা পড়ে বিদ্যুতের তার। তখন মেরামতে লাগে দীর্ঘ সময়। এতে গ্রাহকদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
তবে পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ বলছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় কোনো লোডশেডিং নেই। ঝড়-বৃষ্টির কারণে গাছ-পালা পড়ে তার ছিঁড়ে গেলে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। এ ছাড়া কারিগরি ত্রুটি এবং লাইনের উন্নয়ন কাজের জন্যও সংযোগ বিচ্ছিন্ন রাখতে হয়।
বিজ্ঞাপন
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলায় পল্লী বিদ্যুতের আওতাধীন এলাকাগুলোতে প্রতিদিন বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে ১৫০ মেগাওয়াট। এর মধ্যে কসবা উপজেলায় প্রতিদিন বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে ৩৪ মেগাওয়াট, বিজয়নগরে ১৫ মেগাওয়াট, সরাইলে ৭ মেগাওয়াট, বাঞ্ছারামপুরে ৩০ মেগাওয়াট এবং নবীনগর উপজেলায় ২০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে।
চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুতের যোগান রয়েছে বলা হলেও দিনে একাধিকবার লোডশেডিংয়ের কবলে পড়তে হয় গ্রাহকদের। সবচেয়ে বেশি লোডশেডিং হয় ভোর, দুপুর এবং সন্ধ্যায়। প্রতিবারই আধা ঘণ্টা থেকে এক ঘণ্টা পর্যন্ত বিদ্যুৎহীন থাকেন গ্রাহকরা।
পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ বলছে, জেলায় চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুতের সরবরাহও রয়েছে। কোনো লোডশেডিং নেই। আবাসিক সংযোগের প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম ৩ টাকা ৭৫ পয়সা আর বাণিজ্যিক প্রতি ইউনিটের দাম ১০ টাকা ৩০ পয়সা।
তবে লোডশেডিংয়ের কারণে আবাসিক ও বাণিজ্যিক- দুই শ্রেণির গ্রাহকদেরই চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েন বাণিজ্যিক গ্রাহকরা।
জেলার বিজয়নগর উপজেলার ভিটিদাউদপুর গ্রামের বাসিন্দা মাঈনুদ্দিন রুবেল জানান, বেশিরভাগ সময় ভোরে এবং দুপুরে লোডশেডিং হয়। ভোরে লোডশেডিংয়ের ফলে ঘুমাতে সমস্যা হয় আর দুপুরের লোডশেডিংয়ে ঘরের নারীরা রান্নাসহ গৃহস্থলির কাজ করতে পারেন না। এ ছাড়া ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে বাতি ও পাখাসহ অন্যান্য বৈদ্যুতিক পণ্যগুলো নষ্ট হয়ে যায়।
নবীনগর উপজেলার বাঙ্গরা গ্রামের বাসিন্দা ওয়াহিদুজ্জামান দিপু জানান, প্রতিদিন অন্তত তিন-চারবার লোডশেডিং হয়। বিশেষ করে ভোরে এবং সন্ধ্যায় বেশি লোডশেডিং হয়। প্রত্যেকবার লোডশেডিংয়ে অন্তত আধা ঘণ্টা করে বিদ্যুৎ থাকে না।
সরাইল উপজেলার অরুয়াইল বাজারের দন্ত চিকিৎসক মো. মনসুর আলী বলেন, আমার ক্লিনিকে যে চেয়ারটিতে বসিয়ে রোগীর চিকিৎসা করি- সেটি বৈদ্যুতিক। বিদ্যুৎ চলে গেলে রোগীর চিকিৎসা কার্যক্রমও বন্ধ রাখতে হয়। অনেক সময় রোগীর চিকিৎসা চলমান অবস্থায় বিদ্যুৎ চলে যায়। দীর্ঘ সময় বিদ্যুৎ না থাকলে চেয়ারেই রোগীকে বসে থাকতে হয়। অনেক সময় রোগীরা বিরক্ত হয়ে চিকিৎসা অসম্পূর্ণ রেখেই চলে যান।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পল্লী বিদ্যৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার প্রকৌশলী শাহজাহান তালুকদার বলেন, আমাদের চাহিদা অনুযায়ী যোগান রয়েছে। কোনো লোডশেডিং নেই। মাঝে-মধ্যে রাস্তার কাজ এবং ঝড়-বৃষ্টির কারণে গাছপালা পড়ে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে যায়। তখন বিদ্যুত থাকে না। এ ছাড়া কোনো কোনো সময় কারিগরি ত্রুটির কারণে বিদ্যুৎ সরবরাহ কার্যক্রম সাময়িক সময়ের জন্য ব্যাহত হয়।
আজিজুল সঞ্চয়/এসপি