১১ বছর আগে কুড়িয়ে পাওয়া মেয়ের বিয়ে দিলেন ইউপি চেয়ারম্যান
সাভারের বলিয়ারপুর টেকেরবাড়ি থেকে নাসিমাকে কুড়িয়ে পেয়েছিলেন তেঁতুলঝোড়া ইউপি চেয়ারম্যান ফকরুল আলম সমর। সে সময় নাসিমাকে লালনপালনের দায়িত্ব দিয়েছিলেন চান্দুলিয়া এলাকার কোহিনুর বেগমের কাছে। তবে খোঁজ-খবর রেখেছেন মেয়ের মতোই। অবশেষে বিয়ে দিয়ে বাবার দায়িত্ব পালন করলেন।
শনিবার (১৯ জুন) সন্ধ্যায় তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের অফিসে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিয়ের আয়োজন করা হয়। বিয়ে দেন কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারীর ছোবহান আলীর ছেলে শাহজালালের (২৭) সঙ্গে। শাহজালাল পৌর এলাকার গেন্ডা মহল্লায় ভাড়া থেকে সাভার পৌরসভায় চাকরি করেন।
বিজ্ঞাপন
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রায় ১১ বছর আগে আট বছর বয়সী নাসিমা আক্তারকে কুড়িয়ে পান চেয়ারম্যান। তখন তিনি ঢাকা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছিলেন। নাসিমা তার ঠিকানা বলতে পারতেন না। শুধু নিজের নাম ও বাবা-মায়ের নাম জানতেন। সেখান থেকে তুলে নিয়ে তেঁতুলঝোড়া চান্দুলিয়া এলাকার কোহিনুর বেগম নামে এক নারীকে লালন-পালনের দায়িত্ব দেন। অবশেষে বিয়ের সব ধরনের আয়োজন করে উপযুক্ত পাত্রের হাতে তুলে দেন।
শাহজালাল ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি এমন একজনকে জীবনসঙ্গী হিসেবে পেয়ে সত্যিই গর্বিত। যার কোনো পরিচয় নেই। তাকেই পরিচয়সহ পেলাম স্ত্রী হিসেবে। আমি আসলেই ধন্য। মানবতার ফেরিওয়ালার মতো এমন বাবার সংস্পর্শ আসলেই ভাগ্যের ব্যাপার।
নাসিমা বলেন, আমার কোনো পরিচয় ছিল না। রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে এসে তিনি আমাকে দিয়েছেন বাবার ভালোবাসা। জীবনের যে সময় সবচেয়ে বেশি ভূমিকা পালন করেন একজন বাবা। সেই সময়ে বাবা না থেকেও আমি বাবার যে ভালোবাসা পেয়েছি তা নিজের বাবার চেয়ে কোনো অংশেই কম নয়। তিনিই আমার বাবা, যিনি আমার সমস্ত দায়িত্ব নিয়ে বড় করে তুলে আমাকে বিয়ের পিঁড়িতে দিয়েছেন।
তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়নের বাসিন্দা মনির ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি এমন মানুষ জীবনে খুব কম দেখেছি। এতো বড় পরিবারের মানুষ হয়েও তিনি গরিবদের জড়িয়ে ধরেন। দেখলেই প্রাণটা জুড়িয়ে যায়। তিনি আসলেই গরিবের বাবা।
এ ব্যাপারে ফকরুল আলম সমর বলেন, আমি এসব কাজে অনেক তৃপ্তি পাই। নাসিমাকে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে ১১ বছর দেখাশোনা করেছি। মেয়ের স্বীকৃতি দিয়েছি। আজ বিয়ে দিয়ে দিলাম। বাবা হিসেবে আমার দায়িত্ব কমে গেল। আল্লাহ যেন বাকি সময়টা এভাবেই মানুষের সেবা করার সুযোগ করে দেন।
মাহিদুল মাহিদ/এসপি