আইসিইউ সরঞ্জাম দেড় মাস ধরে বাক্সবন্দি
করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরুর পর থেকেই সংক্রমণ বৃদ্ধির কারণে দেশের সীমান্তবর্তী জেলা নওগাঁকে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। প্রতিদিনই জেলায় বেড়ে চলেছে করোনা রোগীর সংখ্যা। আর সংকটাপন্ন করোনা রোগীদের চিকিৎসা দিতে সরকারের দেওয়া দুটি আইসিইউ শয্যা ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম প্রায় দেড় মাস আগে নওগাঁ সদর জেনারেল হাসপাতালে পৌঁছেছে।
কিন্তু আজও চালু করা সম্ভব হয়নি সেই আইসিইউ বা সরঞ্জাম। এতে করোনা রোগীদের ৯০ কিলোমিটার দূরে রাজশাহী অথবা ৪৫ কিলোমিটার দূরের বগুড়ায় চিকিৎসা নিতে গিয়ে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
চিকিৎসা কর্মকর্তারা বলছেন, জেলার কোনো সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) না থাকায় প্রায় প্রতিদিনই তিন থেকে চারজন তীব্র শ্বাসকষ্টের রোগীকে রাজশাহী কিংবা বগুড়ার হাসপাতালগুলোয় যেতে হচ্ছে। এ ছাড়া নওগাঁর অ্যাম্বুলেন্সগুলোয় আধুনিক সুযোগ-সুবিধা না থাকায় জটিল রোগীদের রাজশাহী কিংবা বগুড়ায় ঝুঁকি নিয়ে যেতে হয়। এতে তাদের মৃত্যুর আশঙ্কা আরও বেড়ে যায়।
বিজ্ঞাপন
নওগাঁ সদর জেনারেল হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর থেকে গত ৩০ এপ্রিল নওগাঁ সদর জেনারেল হাসপাতালে স্থাপনের জন্য দুটি আইসিইউ শয্যা ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম পাঠানো হয়। স্পেকট্রা ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দুটি আইসিইউ শয্যা স্থাপনের কথা। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গড়িমসির কারণে দেড় মাসেও হাসপাতালে আইসিইউ শয্যা স্থাপন করা যায়নি।
এদিকে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন বলছেন, আইসিইউ শয্যা স্থাপনের জন্য ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর থেকে প্রশিক্ষিত জনবল না দেওয়ায় তারা আইসিইউ শয্যা স্থাপন করতে পারছেন না।
জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির ডেপুটি সিভিল সার্জন মঞ্জুর-এ মোর্শেদ বলেন, তীব্র শ্বাসকষ্টের রোগীদের আইসিইউতে রেখে চিকিৎসা দিতে ৯০ কিলোমিটার দূরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল অথবা ৪৫ কিলোমিটার দূরে বগুড়ার শহীদ জিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
তিনি বলেন, নওগাঁ সদর হাসপাতাল ছাড়াও জেলার ১০টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকেও সরাসরি রোগীদের রাজশাহী কিংবা বগুড়ার হাসপাতালে পাঠানো হয়ে থাকে।
দীর্ঘদিন নওগাঁ সদর হাসপাতালে আইসিইউ শয্যা ও করোনা পরীক্ষার জন্য আরটিপিসিআর ল্যাব স্থাপনের দাবি জানিয়ে আসছেন নওগাঁ সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন একুশে পরিষদ নওগাঁ। সংগঠনটির সভাপতি ডি এম আবদুল বারী বলেন, ১১ উপজেলা নিয়ে গঠিত নওগাঁ জেলায় বর্তমানে ৩০ লাখের অধিক মানুষের বসবাস। এ জেলায় মানুষের আধুনিক চিকিৎসাসেবার জন্য আইসিইউ বেড নেই, এর চেয়ে দুঃখের খবর আর কী হতে পারে।
তিনি বলেন, দেশের অনেক ছোট জেলার হাসপাতালগুলোয় আইসিইউ শয্যা রয়েছে। নওগাঁ এত বড় জেলা এবং করোনার উচ্চঝুঁকির জেলা হিসেবে চিহ্নিত করা সত্ত্বেও আইসিইউ শয্যা স্থাপনে এত ধীরগতি, এটা মেনে নেওয়া যায় না। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও জনপ্রতিনিধিদের অবহেলার কারণেই নওগাঁয় আইসিইউ বেড স্থাপনে এত দেরি হচ্ছে।
এ বিষয়ে নওগাঁর সিভিল সার্জন ও নওগাঁ সদর জেনারেল হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক এ বি এম আবু হানিফ ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঔষধ প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে স্পেকট্রা ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নওগাঁ সদর হাসপাতালে চারটি আইসিইউ বেড স্থাপন করার কথা। ইতোমধ্যে দুটি আইসিইউ বেড স্থাপনের জন্য সরঞ্জাম এসেছে। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন অজুহাত দেখিয়ে সেগুলো স্থাপন করছেন না।
সিভিল সার্জন বলেন, যে দুটি আইসিইউ শয্যার জন্য সরঞ্জাম এসেছে, সে দুটি স্থাপন করা গেলেও হয়তো এই কয় দিনে দু-একজনের হলেও জীবন বাঁচাতে পারতাম। গতকালও (সোমবার) ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের মহাপরিচালকের সঙ্গে আইসিইউ শয্যা দুটি দ্রুত স্থাপনের বিষয়ে কথা হয়েছে। তিনি আশ্বাস দিয়েছেন, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে আইসিইউ শয্যা দুটি স্থাপনের ব্যবস্থা করে দেবেন।
শামীনূর রহমান/এনএ