ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ নদীবন্দর থেকে আখাউড়া স্থলবন্দর পর্যন্ত সড়ক চারলেনে উন্নীতকরণের কাজ চলছে পুরোদমে। কিন্তু এই উন্নয়ন কর্মযজ্ঞে বিলীন হয়ে যাচ্ছে মহাসড়ক সংলগ্ন খালগুলো। এতে করে সেচ সুবিধা বন্ধ হওয়ার পাশাপাশি জলাবদ্ধতা সৃষ্টির শঙ্কা দেখা দিয়েছে। 

মহাসড়কের চারলেন প্রকল্পের জন্য খাঁটিহাতা বিশ্বরোড থেকে আখাউড়া পর্যন্ত সড়কের পাশে থাকা খালগুলো ভরাট হয়ে যাচ্ছে। এর ফলে কিছু জায়গায় জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে।

সদর উপজেলার সুহিলপুর গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল মান্নান জানান, খাল ভরাট হওয়ার কারণে কৃষকদের জমির পানি সরবে না। এতে করে ফসলের অনেক ক্ষতি হবে। বাড়ি-ঘরেও জলাবদ্ধতা তৈরি হবে। সবকিছু মিলে সড়কবর্তী এলাকার মানুষকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হবে।

সফর আলী নামে আরেক ব্যক্তি জানান, নতুন খাল না কাটলে পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ হয়ে জলাবদ্ধতা তৈরি হবে। এতে করে স্থানীয়রা দুর্ভোগে পড়বেন। এসব সমস্যার সুরাহা করার জন্য সংশ্লিষ্টদের কাছে দাবি জানিয়েছেন তিনি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আশুগঞ্জ নৌবন্দর থেকে আখাউড়া স্থলবন্দর পর্যন্ত ৫১ কিলোমিটার সড়ক চারলেনে উন্নীত করা হচ্ছে। প্রায় ৩৫শ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে এই কাজে। তিনটি প্যাকেজে ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এফকনস চারলেনের এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে কার্যাদেশ পাওয়ার পর জুলাই মাস থেকে কাজ শুরু করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

প্রথম প্যাকেজে আশুগঞ্জ থেকে বিশ্বরোড পর্যন্ত ১১ কিলোমিটার অংশের কাজ শুরু হলে অস্তিত্ব সংকটে পড়ে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের উত্তর পাশে থাকা বরোপিট খাল। ওই খালটি আশুগঞ্জ পলাশ এগ্রো ইরিগেশন প্রকল্প বা সবুজ প্রকল্পের প্রধান সেচ খাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। খালটি ভরাটের মধ্যদিয়ে মহাসড়কের সম্প্রসারণ কাজ শুরু হয়। যদিও সেচ প্রকল্প সচল রাখতে কাজ শুরুর কয়েক মাস আগেই সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের একটি কমিটি সরেজমিন তদন্ত করে কিছু সুপারিশ তুলে ধরে।

সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (পরিকল্পনা উইং) মো. জাকির হোসেনের নেতৃত্বে করা ৯ সদস্যের ওই কমিটির সুপারিশে সড়ক ও জনপথ বিভাগের বর্ণিত সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের ঢাকা-সিলেট জাতীয় মহাসড়ক অংশের নকশা পরিবর্তন করে প্রস্তাবিত ঢাকা-সিলেট জাতীয় মহাসড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের (এন-২) নকশার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে সড়ক সম্প্রসারণ করতে বলা হয়। তবে তদন্ত কমিটির সুপারিশের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত আসার আগেই কাজ শুরু করে দেয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

এ বিষয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠকে একটি সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন আশুগঞ্জ পলাশ এগ্রো ইরিগেশন প্রকল্পের কর্মকর্তারা। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সম্প্রসারিত সড়ক সীমানার পর সাড়ে ৬ কিলোমিটার অংশে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান টু-ওয়াল নির্মাণ করে দেবে। অপর পাশে ওয়াল এবং খালের তলদেশ পাকা করার কাজ করবে সেচ প্রকল্প কর্তৃপক্ষ।

আশুগঞ্জ পলাশ এগ্রো ইরিগেশন প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী নজরুল ইসলাম জানান, সেচ ক্যানেলের এই কাজের জন্য ৫৮০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প জমা দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটি অনুমোদন হয়ে গেলে আগামী সেচ মৌসুমের আগেই এই কাজ হতে পারে।

তবে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) নির্বাহী প্রকৌশলী পঙ্কজ ভৌমিক জানান, ভরাট হওয়া জায়গাগুলো সড়ক ও জনপথ বিভাগের। এগুলো ১৯৬১-৬২ সালে অধিগ্রহণ করা। সড়ক সম্প্রসারণে প্রাকৃতিক কোনো খাল ভরাট করা হচ্ছে না।

এ বিষয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক হায়াত উদ দৌলা খাঁন বলেন, সবুজ প্রকল্পের খালটি যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয় এবং পানি প্রবাহ ঠিক থাকবে এবং সড়কও থাকবে- সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

এসপি