বাঁশের মাচায় ঝুলছে থোকায় থোকায় রসালো সুস্বাদু আঙুর। সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে ঝুলে থাকা হালকা সবুজ রঙের মিষ্টি এই রসালো ফলের পরিচর্যায় ব্যস্ত চাষি। এমন দৃশ্যের দেখা মিলবে ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার যোগীহুদা গ্রামের কৃষক আব্দুর রশিদের আঙুর বাগানে।

বাংলাদেশেও যে সুস্বাদু ও মিষ্টি আঙুর চাষ করে সফলতা পাওয়া যায়, তারই প্রমাণ দিয়েছেন ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার প্রান্তিক কৃষক আব্দুর রশিদ। ১০ কাঠা জমিতে ছমছম, সুপার সনিকা ও কালো জাতসহ ৭৫টি আঙুরগাছ লাগিয়ে তিনি পেয়েছেন সফলতা।

আঙুরের গন্ধ, আকার, ওজন ও সুস্বাদু এবং ফলন ভালো হওয়ায় আবাদে আগ্রহ দেখাচ্ছেন ঝিনাইদহ ও অন্যান্য জেলার অনেক কৃষক। মিষ্টি আঙুর চাষে সাফল্য দেখে ঝিনাইদহসহ আশপাশের জেলায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

আঙুরচাষি কৃষক আব্দুর রশিদ ঢাকা পোস্টকে জানান, ৮ মাস আগে শখের বশে নিজের ১০ কাঠা জমিতে আঙুর চাষ শুরু করেন। এতে তার খরচ হয়েছিল ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত ও ইতালি থেকে সংগ্রহ করেন ছমছম, সুপার সনিকা, কালো জাতসহ কয়েকটি জাতের ৭৫টি আঙুর চারা। চারা রোপণের ৮ মাসের মধ্যে পেয়েছেন ফলন। দৃষ্টিনন্দন আর সুস্বাদু হওয়ায় প্রতিনিয়ত আঙুর বাগান দেখতে দূরদূরান্ত থেকে ছুটে আসছে মানুষ।

তিনি জানান, দেশের বাইরে মিষ্টি আঙুর উৎপাদন হলেও বাংলাদেশের মাটিতেও আবাদ করা সম্ভব, এই আত্মবিশ্বাসে শুরু করেন আঙুর চাষ। চলতি মৌসুমে প্রতি গাছে ১০ থেকে ১৫ কেজি হারে ফলন হয়েছে। যা পাইকারি দরে বিক্রি হয়েছে ২০০ টাকা কেজি দরে। এতে প্রায় ২ লাখ টাকার মতো বিক্রি হবে। আগামী ৩ থেকে ৪ বছরের মধ্যে প্রতিটি গাছ থেকে ৪ মণের বেশি ফল উৎপাদন হবে বলে আশা করছেন তিনি। এর আবাদ ছড়িয়ে দিতে অন্য কৃষকদের সহযোগিতার আশ্বাসও দেন তিনি।

প্রতিবেশী নাসির উদ্দিন জানান, তারা সবাই খুব সন্দেহে ছিলেন আঙুর মিষ্টি হবে কি না। কিন্তু এখন দেখলেন আঙুরের গন্ধ, আকার, ওজন এবং খেতেও খুব সুস্বাদু হয়েছে। এখন দূরদূরান্ত থেকে মানুষজন এই আঙুর দেখতে ও কিনতে আসছেন।

যশোর চৌগাছা থেকে বাগান দেখতে আসা মো. হানেফ মোল্লা জানান, তাদের নিজেদের পেয়ারা, কুল, মাল্টা, কমলা, ড্রাগন বাগান আছে। অনলাইনে দেশের মাটিতে রশিদের আঙুর বাগান দেখতে পান। এরপর এই আঙুরের প্রতি তার আগ্রহ বাড়ে। তাই তিনি সরেজমিনে দেখতে এসেছেন। বাগান দেখে আঙুর খেয়ে তিনিও এখন ভাবছেন এই আঙুর বাগান করে আব্দুর রশিদের মতো সাফল্যের মুখ দেখবেন।

যোগীহুদা গ্রামের মো. আবুল হোসেন জানান, তার নিজের বিভিন্ন ধরনের ফলের বাগান আছে। আব্দুর রশিদের কাছ থেকে আঙুর চাষের পরামর্শ নিতে এসেছেন। তিনি নিজেও এক বিঘা জমিতে এই আঙুরের চাষ করবেন। তিনি আরও আধুনিকভাবে চাষ করবেন। যাতে এই বাগান থেকে ফলন ও মিষ্টি আরও বেশি পরিমাণে হয়।

মহেশপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাসান আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, উদ্যোক্তা আব্দুর রশিদ ছমছম ও সুপার সনিকা জাতের আঙুর দেশে চাষ করেছেন। কৃষি অফিস থেকে চাষিদের আঙুর উৎপাদনে জৈব বালাইনাশক সার দেওয়ার পরামর্শ দেওয়াসহ নানা সহযোগিতা করা হচ্ছে। ফলন ভালো হওয়ায় আবাদে আগ্রহ দেখাচ্ছেন জেলার অনেকেই।

তিনি বলেন, আমরা রশিদকে তিন দিনের প্রশিক্ষণ দিয়েছি কলম তৈরি (গ্যাপটিং) করার জন্য, যাতে এখান থেকেই তিনি চারা উৎপাদন করতে পারেন। সেই সঙ্গে উৎসাহিত করা হচ্ছে অন্য কৃষকদেরও, যাতে এই চাষটা দ্রুত বিস্তার লাভ করে।

এনএ