পরকীয়ার জেরে স্ত্রী-সন্তানসহ তিনজনকে খুন করেন এএসআই
সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) সৌমেনের দ্বিতীয় স্ত্রী আসমা খাতুনের সঙ্গে নিহত শাকিলের বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক ছিল। সেই পরকীয়ার জেরে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া লেগে থাকত। সৌমেন আসমাকে নির্মমভাবে নির্যাতনও করতেন।
এই অনৈতিক সম্পর্ক মেনে নিতে না পেরে সরকারি অস্ত্র দিয়ে প্রকাশ্যে স্ত্রী আসমা, আসমার ছেলে রবিন ও প্রেমিক শাকিলকে গুলি করে খুন করেছেন সৌমেন।
বিজ্ঞাপন
রোববার (১৩ জুন) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কুষ্টিয়া শহরের কাস্টমস মোড় এলাকার নাজ ম্যানশন মার্কেটের একটি বিকাশের দোকানের সামনে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় পুলিশ সৌমেনকে ঘটনাস্থল থেকে অস্ত্র, গুলি ও ম্যাগজিনসহ আটক করেছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার (এসপি) খায়রুল আলম।
পুলিশ ও নিহতের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, এএসআই সৌমেনের কর্মস্থল বদলি হওয়ার পর থেকেই বিকাশকর্মী শাকিলের সঙ্গে সম্পর্কে জড়ান আসমা। তবে এ সম্পর্ক মেনে নিতে পারেননি সৌমেন। আসমার প্রতি ক্ষোভ জমিয়ে রাখেন মনে।
সেই ক্ষোভ থেকেই দিনদুপুরে তিনজনকে গুলি করে হত্যা করেন সৌমেন। এ সময় স্থানীয় জনগণ ও ব্যবসায়ীরা সৌমেনকে আটক করেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায় এবং অভিযুক্ত সৌমেনকে অস্ত্র ও গুলিসহ আটক করে।
স্থানীয়রা জানায়, আসমার দ্বিতীয় স্বামীর সন্তান ছিল রবিন। স্বামীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ির পর সৌমেনের সঙ্গে সম্পর্কে জড়ান তিনি। এরপর তারা বিয়ে করেন। কিন্তু কর্মস্থল বদলি হওয়ার পর সৌমেনকে ছেড়ে বিকাশকর্মী শাকিলের সঙ্গে সম্পর্কে জড়ান আসমা। পরকীয়া প্রেমের সম্পর্কের জেরে তিনটি তাজা প্রাণ ঝরে গেল। ক্ষোভ থেকেই এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন সৌমেন।
নিহতরা হলেন এএসআই সৌমেনের স্ত্রী আসমা (২৫), তাদের ছেলে রবিন (৫) এবং পরকীয়া প্রেমিক শাকিল (২৮)। আসমা কুমারখালী উপজেলার পান্টি ইউনিয়নের নাতুড়িয়া গ্রামের আমির আলীর মেয়ে।
রবিন আসমার দ্বিতীয় স্বামীর সন্তান। আর নিহত শাকিল বিকাশের ডিস্ট্রিবিউশন সেলস অফিসার পদে (ডিএসও) চাকরি করতেন। শাকিল কুমারখালী উপজেলার চাপড়া ইউনিয়নের শাওতা গ্রামের মেসবাহ আলীর ছেলে। আসমা ও শাকিলের বাড়ি একই উপজেলায়।
আর সৌমেন খুলনার ফুলতলা থানায় সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) হিসেবে কর্মরত আছেন। তার গ্রামের বাড়ি মাগুরা জেলার শালিখা উপজেলার কসবা গ্রামে। আগে তিনি কুমারখালী থানায় কর্মরত ছিলেন।
আসমার ভাই হাসান আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, আপু আসমার আগে দুই জায়গায় বিয়ে হয়েছিল। নিহত রবিন তার দ্বিতীয় স্বামীর সন্তান। সৌমেন আপুর তৃতীয় স্বামী। সৌমেনেরও একটি সংসার রয়েছে। সেই স্ত্রীর ঘরে এক ছেলে ও এক মেয়েসন্তান রয়েছে। সৌমেন সংসার নিয়ে খুলনায় চাকরি করেন। আপু আমাদের সঙ্গে কুষ্টিয়ার বাবরআলী গেট এলাকায় ভাড়াবাসায় বসবাস করেন।
তিনি বলেন, মাঝেমধ্যেই সৌমেন আমাদের বাসায় এসে থাকতেন। প্রায়ই আপুর সঙ্গে খারাপ ব্যবহার ও মারধর করতেন সৌমেন। কিছুদিন আগেও সৌমেন এসেছিলেন। সেদিনও মারধর করে চলে গেছেন খুলনায়।
আসমার মা হাসিনা খাতুন ঢাকা পোস্টকে বলেন, পাঁচ বছর আগে সৌমেন কুমারখালী থানায় কর্মরত ছিল। সেই সময় আমরা একটি মামলায় পড়েছিলাম। সেই সূত্রে আমার মেয়ের সঙ্গে সোমেনের প্রেমের সম্পর্ক হয়। পাঁচ বছর আগে আমার মেয়ের সঙ্গে সৌমেনের বিয়ে হয়। এরপর কর্মস্থল চেঞ্জ করে চলে যায়। প্রথম থেকেই আমার মেয়ে আমার সঙ্গে থাকত।
তিনি বলেন, হঠাৎ খুলনা থেকে সকালে সৌমেন আমাদের শহরের বাড়িতে আসে। তখন আসমা গ্রামের বাড়িতে ছিল। সে ফোন দিয়ে আসমাকে শহরে নিয়ে আসে এবং তাকে মাগুরায় যেতে হবে বলে রেডি হতে বলে। সকাল ১০টার দিকে আমাদের বাড়ি থেকে বের হয়। পরে জানতে পারি আমার মেয়ে ও নাতিকে অস্ত্র দিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।
এ বিষয়ে কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমরা বিষয়টি তদন্ত করে দেখছি। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার (এসপি) খায়রুল আলম জানান, শাকিলের সঙ্গে আসমার পরকীয়া সম্পর্কের জেরে এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। হত্যায় ব্যবহৃত পিস্তলটি জব্দ করা হয়েছে। আইন সবার জন্য সমান। অপরাধীর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।
খুলনার এসপি মোহাম্মদ মাহবুব হাসান বলেন, আটক সৌমেন রায় ফুলতলা থানার এএসআই। আজ সকাল থেকে তাকে পাওয়া যাচ্ছিল না। তিনি ছুটি না নিয়ে আনঅফিশিয়ালি কুষ্টিয়ায় চলে গেছেন। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
রাজু আহমেদ/এমএসআর