হাতির ভয় নিয়ে রাত কাটে পাহাড়িদের
হাতি আতঙ্কে প্রতিদিন নির্ঘুম রাত কাটছে শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার ভারত সীমান্তবর্তী পাহাড়বাসীর। পাহাড়ি হিংস্র বন্যহাতির দল কখনো দলবেঁধে হাঁটছে ভারতীয় সীমান্ত দিয়ে আবার কখনো বাংলাদেশের। খাবারের সন্ধানে দল বেঁধে ঢুকে পড়ছে লোকালয়ে।
শস্য, ধান, আম, কাঁঠালসহ বিভিন্ন আবাদ করছে নষ্ট। ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে দিচ্ছে গরিব আদিবাসীদের ঘরবাড়ি। বাধা দিলে পায়ের নিচে পিষ্ট করে মারছে অসহায় পাহাড়িদের।
বিজ্ঞাপন
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, একসময় ভারত সীমান্তবর্তী গহিন এই অরণ্যে ছিল বন্যহাতির আবাসস্থল। হাতির জন্য পাহাড়ে ছিল প্রচুর খাদ্য। ঘন এই বন জঙ্গলে প্রবেশের উপায় ছিল না মানুষের। তখন এসব এলাকায় ছিল হাতির অবাধ বিচরণ।
কিন্তু কিছু লোভী অসাধু ব্যবসায়ী সীমান্ত অঞ্চলের বনের সব গাছ উজাড় করে হাতির আবাসস্থল ধ্বংস করে দিয়েছে। এর ফলে খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে পাহাড়ি বন্যহাতির।
স্থানীয় যুবক শফিকুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, জামালপুরের বকশীগঞ্জের সোমনাথপাড়া থেকে শেরপুরের শ্রীবরদী, ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ী উপজেলার পাহাড়ি অঞ্চল চষে বেড়ায় বন্যহাতির দল। চলতে চলতে খাবার খায় এরা। বিশাল দেহের জন্য প্রয়োজন অনেক খাবার।
এভাবে খেতে খেতে খাবার সরবরাহ কমে গেলে দলবেঁধে পাহাড় থেকে নেমে আসে লোকালয়ে। হামলা চালায় আদিবাসীদের ধানখেতে। বাগানের আম, কাঁঠাল খেয়ে করে সাবাড়। এভাবে হাতির আক্রমণ ও আবাদ বাঁচাতে প্রাণ গেছে অনেক পাহাড়ির। প্রায় ২০ বছর ধরে হাতির অত্যাচারে অতিষ্ঠ শেরপুর জেলার পাহাড়ি জনপদের মানুষ।
নালিতাবাড়ী মধুটিলা অঞ্চলের বন কর্মকর্তা (রেঞ্জার) আব্দুল করিম ঢাকা পোস্টকে বলেন, হাতি একটি বন্যপ্রাণী। আন্তর্জাতিকভাবেই হাতি মারা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। হাতিকে আক্রমণ না করলে হাতি সহজে আক্রমণ করে না। মানুষ যখন হাতিকে আক্রমণ করে তখন রাগান্বিত হয়ে হাতি মানুষের ওপর হামলা চালায়।
তিনি আরও বলেন, সরকারি নির্দেশে ফসল ক্ষতির জন্য ৫০ হাজার, আক্রান্ত ব্যক্তিকে ১ লাখ এবং হাতির আক্রমণে কেউ নিহত হলে সরকার তাকে ২ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়। হাতির প্রচুর খাবার প্রয়োজন। খাদ্যের অভাবের কারণেই হাতি সীমান্তবর্তী অঞ্চলে অবাধে ঘুরে বেড়াচ্ছে। হাতির খাদ্য সংকট নিরসনের ব্যাপারে বর্তমানে কোনো সরকারি উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। তবে প্রচেষ্টা চলছে।
ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের সংগঠন ট্রাইবাল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান লূইস নেংমিঞ্জা বলেন, হাতি ও মানুষ সহবস্থানে থাকতে গেলে সরকারি উদ্যোগে পাহাড়ে কলা, আম, কাঁঠাল গাছ লাগাতে হবে, যেন হাতির পর্যাপ্ত খাবার সেখানে থাকে। এছাড়া পাহাড়ে লেবু, বেতসহ কাঁটাযুক্ত গাছ রোপণ করলে অনেকটা রেহাই পাওয়া যাবে। কারণ হাতি কাঁটাকে ভয় পায়।
জাহিদুল খান সৌরভ/এমএসআর