চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন ঠান্ডাজনিত রোগীরা

চুয়াডাঙ্গায় শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সদর হাসপাতালে বাড়ছে ঠান্ডাজনিত রোগীর সংখ্যা। বছরের প্রথম ৬ দিনেই ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগ ও বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিয়েছে ২৪ শতাধিক রোগী। এদের মধ্যে পাঁচ বছরের কমবয়সী শিশুর সংখ্যায় বেশি। গত ৬ দিনে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে নিউমোনিয়া আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ১ শিশু।

সরজমিনে দেখা যায়, চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের ৭ নম্বরের একটি বেডে ১৪ মাস বয়সী সন্তানের সেবায় ব্যস্ত মা। ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হওয়ায় তিন দিন ধরে সন্তানকে নিয়ে আছেন হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে। সেখানেই চিকিৎসা নিচ্ছে তার সন্তান

হাসপাতালের বহির্বিভাগে শিশুবিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কক্ষের সামনে ৪৫ দিনের সন্তান সুরাইয়াকে নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন আল মামুন ও তার স্ত্রী। আলমডাঙ্গা উপজেলার মুন্সিগঞ্জ থেকে এসেছেন তারা। সুরাইয়া ১০ দিন ধরে ঠান্ডাজনিত সমস্যায় ভুগছেন বলে জানালেন আল মামুন।

হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ৯ মাসের শিশু ইয়াছিনকে নিয়ে এসেছেন সীমা আক্তার। তিনি জানালেন, কয়েকদিন থেকেই তার ছেলের সর্দি-কাশি ও হালকা জ্বর আছে। স্থানীয় ফার্মেসি থেকে ওষুধ খাওয়ানো হয়েছিল। কিন্তু কোনো উন্নতি না হওয়ায় সন্তানকে নিয়ে হাসপাতালে এসেছেন।

বুধবার (৬ জানুয়ারি) রাতে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে এমন চিত্রই দেখা গেছে। জেলায় শীতের প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে বিভিন্ন রোগ। জ্বর-ঠান্ডা, নিউমোনিয়া ও কোল্ড ডায়রিয়ার পাশাপাশি শ্বাসতন্ত্রজনিত রোগ বেড়ে গেছে।

হাসপাতালের বহির্বিভাগের শিশুবিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কক্ষের সামনে গিয়ে দেখা যায়, অপেক্ষমাণ রোগীর দীর্ঘ লাইন।হাসপাতালের জরুরি বিভাগেও দেখা যায়, রোগী নিয়ে অপেক্ষা করছেন স্বজনরা।

আবহাওয়া পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে যত শীত বাড়ছে, রোগীর সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিভিন্ন শ্বাসতন্ত্রজনিত রোগের পাশাপাশি নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে রোগীরা আসছেন হাসপাতালে। এ ছাড়াও নাক, কান ও গলার বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আসা রোগীর সংখ্যাও কম নয়। প্রতিদিন ১২০টির অধিক শিশু চিকিৎসা নিচ্ছে শুধু বহির্বিভাগেই।

ডা. মাহাবুবুর রহমান মিলন, চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের শিশুবিশেষজ্ঞ

শিশুদের ঠান্ডা থেকে দূরে রাখার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম হওয়ায় শিশুরা আক্রান্ত হচ্ছে বেশি। শীতকালে বাতাসের আদ্রতা কম থাকায় মুক্ত বাতাসেই উড়ে বেড়ায় জীবাণু। জীবাণু খুব সহজেই শিশুদের আক্রমণ করে। এই জীবাণু শিশুদের শরীরে প্রবেশ করলে নানা রোগের সৃষ্টি হয়।

হাসপাতালের বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী

তিনি আরও বলেন, ঠান্ডা বাতাস শিশুদের শরীরে লাগতে দেওয়া যাবে না, শিশুদের পর্যাপ্ত গরম কাপড় পরাতে হবে। খড়কুটো জ্বালিয়ে আগুন পোহাতে গেলে শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ বাড়তে পারে। এই সময় ফুলের রেণু থেকে দূরে থাকতে হবে। ফুলের রেণু অ্যাজমা পরিস্থিতি খারাপ করে। ৬ মাসের কম বয়সী শিশুকে অবশ্যই মায়ের বুকের দুধ খেতে দিতে হবে।

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. সোহরাব হোসেন বলেন, ‘শীতের প্রকোপ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। কোল্ড ডাইরিয়াসহ শীতজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীর মধ্যে শিশুর সংখ্যা বেশি। প্রতিদিন হাসপাতালের জরুরি বিভাগ ও বহির্বিভাগে গড়ে ২ শতাধিক শিশু চিকিৎসা নিচ্ছে। 

তিনি আরও বলেন, হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ড ও ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ভর্তি থাকছে ৪০ থেকে ৫০ জন শিশু। শীতজনিত রোগের ওষুধ হাসপাতালে পর্যাপ্ত পরিমাণে রয়েছে। তবে কলেরা স্যালাইনের সংকট দেখা দিয়েছে। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য বিভাগকে জানানো হয়েছে। শিগগির এ সংকট মোকাবিলা করতে পারব বলে আশা করছি।’

এদিকে, চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকার বলেন, শীতে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে শীতবস্ত্র বিতরণ অব্যাহত রয়েছে। ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে ২০ হাজারের অধিক কম্বল বিতরণ করা হয়েছে এবং বিতরণ চলমান আছে। এছাড়াও, ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রণালয়ের অধীনে প্রত্যেক উপজেলায় ৬ লাখ টাকা করে কম্বল কেনার জন্য ইউএনওদের কাছে, চার পৌরসভায় মোট ৭ লাখ টাকা মেয়রদের কাছে ও এমপি মহোদয়ের মাধ্যমে বাবদ ৫ লাখ টাকার শীতবস্ত্র বিতরণ করা হবে।

বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, বুধবার ১২টায় চুয়াডাঙ্গায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আকাশে মাঝে মাঝে হালকা মেঘ দেখা গেছে। ১২ জানুয়ারি পর্যন্ত চুয়াডাঙ্গার আবহাওয়া আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারাদেশের আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।

তবে দেশের রংপুর বিভাগের দু-এক জায়গায় গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির শঙ্কা রয়েছে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারাদেশে হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে। সেই সঙ্গে চুয়াডাঙ্গাসহ সারাদেশে রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

এমএসআর