ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সোর্সকে গ্রেফতার করলেন এসআই
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হওয়া সাম্প্রতিক তাণ্ডবের মামলায় জড়ানোর ভয় দেখিয়ে পুলিশের এক সোর্সের টাকা নেওয়ার ঘটনায় সেই সোর্সকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার (১০ জুন) সন্ধ্যায় সদর উপজেলার বুধল ইউনিয়নের নন্দনপুর থেকে মো. আবুল হোসেন (৪৫) নামের ওই সোর্সকে গ্রেফতার করেন সদর মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. রফিকুল ইসলাম।
যদিও সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ এমরানুল ইসলাম জানিয়েছেন, আবুল হোসেন নন্দনপুর ও সুহিলপুর এলাকায় হেফাজতের তাণ্ডবের ঘটনায় জড়িত।
বিজ্ঞাপন
শুক্রবার (১১ জুন) ওই এলাকার আবদুল হেকিমের ছেলে আবুল হোসেনকে তার বাড়ি থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে জেলা শহরের বিরাসারের গ্যাস ফিল্ড কার্যালয়ে হামলা মামলায় চালান দেওয়া হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বুধল ইউনিয়নের কলামুড়ি গ্রামের তাজুল ইসলামের দুই ছেলে মনির হোসেন ও সাদ্দাম হোসেন স্থানীয় নন্দনপুর বাজারে মুদি ব্যবসা করেন। গত ২৭ মার্চ হেফাজতে ইসলামের কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে নন্দনপুর এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এতে অন্তত ছয়জন মারা যান। সংঘর্ষের সময় ভিডিও ফুটেজে সাদ্দামকে দেখা গেছে জানিয়ে তাকে মামলা থেকে রক্ষা করার কথা বলে টাকা দাবি করেন এলাকায় পুলিশের সোর্স হিসেবে পরিচিত আবুল হোসেন।
বুধল ইউনিয়ন বিট পুলিশের ইনচার্জ ও সদর থানার এসআই রফিক ও সুহিলপুর ইউনিয়ন বিট পুলিশের ইনচার্জ এসআই জাহাঙ্গীর আলমকে টাকা দিতে হবে জানালে মামলায় ফেঁসে যাওয়ার ভয়ে আবুল হোসেনকে টাকা দিতে রাজি হন সাদ্দামের বড় ভাই মনির। সে জন্য ১০ থেকে ১৫ দিন আগে আবুল হোসেনকে ৪৫ হাজার টাকা দেন বলে জানান মনির।
কিন্তু কথামতো টাকা দিয়েও কাজ হয়নি। সপ্তাহখানেক আগে পুলিশ পরিচয়ে দুজন মনিরের মুদি দোকানে গিয়ে সাদ্দামের খোঁজ করেন। এরপর নাম-ঠিকানা নিয়ে মনিরের ছবি তোলেন। টাকা দেওয়ার পরও ‘পুলিশ’ কেন এসেছে জানতে চেয়ে আবুল হোসেনকে টাকা ফেরত দিতে বলেন মনির।
এ ঘটনা জানাজানি হলে বুধবার রাতে টাকা ফেরত দেন আবুল হোসেন। সোর্সের এই টাকা লেনদেন-কাণ্ডে ‘ফেঁসে যাওয়ার ভয়ে’ বৃহস্পতিবার (১০ জুন) আবুল হোসেনকে গ্রেফতার করেন এসআই রফিক। পরে তাকে হেফাজতের তাণ্ডবের সময় গ্যাস ফিল্ড কার্যালয়ে হামলা মামলায় চালান দেওয়া হয়।
এ ব্যাপারে মনির হোসেন জানান, ঘটনার দিন (২৭ মার্চ) তিনি দোকানে ছিলেন না। তার ছোট ভাই সাদ্দাম দোকান বন্ধ করে দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তখন হয়তো কেউ ভিডিও করেছে। আবুল হোসেন এসে বলেন, পুলিশের কাছে থাকা ভিডিও ফুটেজে সাদ্দামকে দেখা গেছে। টাকা দিলে এটি সমাধা করে দেবেন জানিয়ে ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন। পরে আবুল হোসেনকে ৪৫ হাজার টাকা দেন তিনি।
মনির বলেন, টাকা দেওয়ার পরও সপ্তাহখানেক আগে দুজন পুলিশ দোকানে এসে সাদ্দামকে খুঁজেত থাকেন। নাম-ঠিকানা ও আমার ছবি তুলে নিয়ে যায়। পরে আবুল হোসেনকে বলি, পুলিশকে টাকা নিয়ে দেওয়ার পরও পুলিশ এসেছে। যদি কাজ না হয়, তাহলে আমার টাকা ফেরত দেন। তখন আবুল হোসেন বলেন, তিনি অন্য একজনকে টাকা দিয়েছেন। পরে আবুল হোসেন নিজেই টাকা ফেরত দিয়ে যান।
বুধল ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও আবুল হোসেনের মামা আবদুল হক বলেন, আবুল হোসেন তাণ্ডব মামলার এক আসামির কাছ থেকে এসআইয়ের কথা বলে টাকা নিয়েছিল বলে শুনেছি। ঘটনাটি জানাজানি হলে গতকাল পুলিশ এসে তাকে ধরে নিয়ে গেছে। তবে সে তাণ্ডবের ঘটনায় জড়িত বলে মনে হয় না। তাকে ভাঙচুর করতে দেখিনি। শুনেছি আবুল হোসেন এসআই রফিকের সোর্স।
এ ব্যাপারে বক্তব্য জানতে এসআই রফিকুল ইসলামের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।
তবে অভিযোগ সঠিক নয় দাবি করে সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ এমরানুল ইসলাম বলেন, আবুল হোসেন সুহিলপুর ও নন্দনপুরে এলাকায় হেফাজতে ইসলামের তাণ্ডবের ঘটনায় জড়িত।
আজিজুল সঞ্চয়/এনএ