সাভারের আশুলিয়ায় ডায়িং কারখানায় বয়লারের পানিতে দগ্ধ রাশেদুল (২৪) নামের আরও এক শ্রমিক মারা গেছেন। এ নিয়ে দগ্ধ পাঁচ শ্রমিকের দুজনের মৃত্যু হলো। স্বজনের দাবি, চিকিৎসায় অবহেলার কারণেই তাদের মৃত্যু হয়েছে।

বুধবার (৯ জুন) রাত দেড়টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শেখ হাসিনা বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্য হয়। রাত ২টার দিকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন নিহত রাশেদুলের ভাই সাইদুল ইসলাম।

নিহত রাশেদুল কুড়িগ্রাম জেলার কাউনিয়া থানার সদরা গ্রামের আব্দুল খালেকের ছেলে। তিনি প্রায় দুই বছর ধরে ওই কারখানায় কাজ করতেন।

সাইদুল ইসলাম অভিযোগ করে ঢাকা পোস্টকে বলেন, সাভারে চিকিৎসায় বেশি টাকা খরচের দোহাই দিয়ে কারখানা কর্তৃপক্ষ রাশেদুলকে ঢাকা মেডিকেলে নেয়। এখানে আসার পর থেকে কারখানা কর্তৃপক্ষ আর দেখা করে নাই। আমি ধারদেনা করে ২০ হাজার টাকা নিয়ে এসে চিকিৎসা করেছি। চিকিৎসায় অবহেলায় আমার ভাইয়ের মৃত্যু হয়েছে। আমি এর বিচার চাই।

তিনি আরও বলেন, রাশেদুলের সহকর্মী হাসানও গতকাল একই দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। কারখানার লোকজন হাসানের মৃত্যুর খবর পেয়ে মেডিকেলে আসে। তারপরও আমার ভাইকে দেখতে পর্যন্ত আসেনি।

কারখানার ফ্লোর ইনচার্জ শফিকুল ঢাকা পোস্টকে জানান, ঘটনার দিন থেকেই তিনি ভুক্তভোগীদের পাশে থেকে চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার চেষ্টা করেছেন। এর আগে হাসান মারা গেলে আজ (বুধবার) দুপুরে তাদের টাকাপয়সা দিয়ে বিদায় করা হয়েছে। এখন শুনছি রাশেদুলও মারা গেছে। তবে চিকিৎসায় অবহেলার বিষয়টি সঠিক নয়।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ বস্ত্র ও পোশাক শিল্প শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক সারোয়ার হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রথমত, কারখানা কর্তৃপক্ষ তাদের বয়লার মেশিনটি সার্ভিসিং না করিয়ে দিনের পর দিন শ্রমিকদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে। আবার দগ্ধ হলে তাদের চিকিৎসাতেও অবহেলা করেছে, যা সত্যিই অমানবিক। হাসানের পরিবারকে তার ক্ষতিপূরণ দেড় লাখ টাকা দিতে চেয়ে পরে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা দিয়ে বিদায় করেছে। আর এক দিন যেতে না যেতেই রাশেদুলেরও মৃত্যু হলো। প্রশ্ন রেখে বলেন, মানুষের জীবনের মূল্য কি দেড় লাখ টাকা?

তিনি বলেন, যে কারণে তাদের মৃত্যু হলো, তা তদন্ত করে দোষীদের আইনের আওতায় আনার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আবোদন জানাচ্ছি। একই সঙ্গে শ্রমিকদের আইনগত ক্ষতিপূরণ প্রদানের দাবি জানাচ্ছি।

উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার (৩ জুন) আশুলিয়ার কুটুরিয়া এলাকায় এসডিএস ইয়ার্ন ডায়িং কারখানার বয়লার মেশিনের ত্রুটিজনিত কারণে ৫ শ্রমিক ওই মেশিনের পানিতেই দগ্ধ হন। পরে তাদের মধ্যে ওয়াশিম (৩৫) নামের এক শ্রমিককে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে গুরুতর ৪ জনকে সাভারের এনাম মেডিকেলে ভর্তি করা হয়।

মাহিদুল মাহিদ/এনএ