করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে নাটোর ও সিংড়া পৌর এলাকায় বুধবার (০৯ জুন) থেকে শুরু হওয়া সাত দিনের কঠোর লকডাউনের প্রথম দিন চলছে। সকাল থেকেই শহরের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নিয়েছে পুলিশ। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে সড়ক ও পৌর এলাকার অলিগলি। যান চলাচল বন্ধ থাকায় সড়কগুলো জনমানবশূন্য। 

সকালে নিচাবাজার এলাকায় পাইকারি-খুচরা বিক্রেতা ও ক্রেতাদের উপস্থিতি খুবই কম ছিল। ওষুধের দোকান, কাঁচাবাজার ছাড়া বন্ধ রয়েছে হোটেল-রেস্তোরাঁসহ সব ধরনের দোকান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। জরুরি পণ্যবাহী যান ছাড়া বন্ধ রয়েছে অভ্যন্তরীণ সব ধরনের যান চলাচল। তবে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।

শহরের ছায়াবানী মোড়, মাদরাসা মোড় ও বড়হরিশপুর বাইপাস মোড়সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে পুলিশ দেখা গেছে। প্রশাসনসহ ভ্রাম্যমাণ আদালত কাজ করছে।

চেকপোস্ট বসানোর পাশাপাশি টহল দিয়ে মানুষকে ঘরে রাখতে পুলিশ কাজ করছে। শহরের গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে চেকপোস্ট বসিয়ে প্রবেশ বা চলাচলে বাধা দেওয়া হচ্ছে। জরুরি সেবা ছাড়া ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে সকল যানবাহন। কঠোর লকডাউন ঘোষণার পর মাইকিং করে জানিয়ে দেওয়া হয়। ফলে অন্যান্য লকডাউনের চেয়ে এবার মানুষ তুলনামূলক বেশি সচেতন রয়েছে।

অপরদিকে সিংড়া পৌরসভা এলাকাতেও একই চিত্র চোখে পড়েছে। সকাল থেকেই রাস্তার মোড়ে মোড়ে পুলিশি তৎপরতায় রাস্তা ফাঁকা দেখা গেছে। চেকপোস্ট বসানোর পাশাপাশি টহল দিয়ে মানুষকে ঘরে রাখতে পুলিশ কাজ করছে। শহরের গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে চেকপোস্ট বসিয়ে প্রবেশ বা চলাচলে বাধা দেওয়া হচ্ছে। জরুরি সেবা ছাড়া ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে সকল যানবাহন।

নাটোর পৌরসভার বাসিন্দা রিয়াজ হোসেন বলেন, এর আগে অনেক লকডাউন দেখেছি, তবে এমন লকডাউন কখনো হয়নি। মাইকিং করার কারণে মানুষের মাঝেও ভয় কাজ করছে। তেমন জরুরি না হলে কেউ বাইরে বের হচ্ছে না। এ ছাড়া পুলিশ সদস্যরা লকডাউন নিশ্চিত করতে মোড়ে মোড়ে ঘুরছেন।
 
এক ফার্মেসি মালিক ঢাকা পোস্টকে জানান, ছায়াবানীর মোড়ে সব সময় যানজট লেগে থাকে। তবে আজ তেমন কোনো গাড়ি লক্ষ্য করছি না। সচেতনতা বা ভয় যাই হোক না কেন মানুষ ঘরে থাকছে। মাঝে মধ্যে দু-একটা ভ্যান রাস্তায় চলাফেরা করছে, তাও ভয়ে ভয়ে। শহরে পুলিশের ব্যাপক তৎপরতা রয়েছে বলেও জানান তিনি।

সিভিল সার্জন ডা.কাজী মিজানুর রহমান বলেন, ‘আশা করি লকডাউন দেওয়ার পর করোনা সংক্রমণ অনেক কমবে।’

পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা ঢাকা পোস্টকে বলেন, করোনা দীর্ঘ সময় থাকায় জনসাধারণ আগের তুলনায় অনেক বেশি সচেতন হয়েছে। পৌর এলাকাজুড়ে কঠোর লকডাউন বাস্তবায়ন করতে পুলিশের চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাইরে বের হলে পুলিশ তাদের ঘরে ফেরত পাঠাচ্ছে। তবে জরুরি সেবা, পণ্যবাহী যানবাহন ও আম পরিবহনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পরিবহন কঠোর লকডাউনের আওতায় থাকবে না। 

জেলা প্রশাসক মো. শাহরিয়াজ বলেন, করোনার বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবিলায় জেলা প্রশাসন সব সময় জনগণের পাশে আছে। আমরা মাইকিংসহ নিয়মিত মনিটরিং ও ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছি। প্রশাসনের সকল বিভাগ একযোগে মাঠে রয়েছে। জনগণকে বিষয়টি বুঝতে হবে এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলাফেরা করতে হবে।
 
এদিকে নাটোরে বুধবার করোনায় আক্রান্ত হয়ে দিলীপ কুমার চক্রবর্তী (৬২) ও রমজান আলী (৯০) নামে আরও দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে জেলায় মোট মারা গেলেন ৩০ জন। মৃত্যুবরণকারীরা শহরের আলাইপুর এবং সদর উপজেলার দত্তপাড়ার মোকরামপুর এলাকার বাসিন্দা। 

এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ৮৮ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ৪৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। অন্যদিকে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৪১ জন।

তাপস কুমার/এসপি