ময়মনসিংহের বিএফআরআই
এবার পিয়ালি মাছের কৃত্রিম প্রজননে সফলতা
সংকটাপন্ন মাছের তালিকায় যেসব দেশীয় মাছ রয়েছে তার মধ্যে একটি পিয়ালি। যমুনা ও পদ্মা নদীবিধৌত এলাকার মানুষের কাছে পিয়ালি মাছ অতি পরিচিত একটি নাম। কিন্তু দিন দিন পরিবেশগত বিপর্যয় ও অতি আহরণের ফলে এ মাছটিও বর্তমানে তেমন একটা দেখা যায় না।
তবে মাছটিকে টিকিয়ে রাখতে এবার প্রথমবারের মতো কৃত্রিম প্রজনন ও পোনা উৎপাদন কৌশল উদ্ভাবন করেছেন বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএফআরআই) বিজ্ঞানীরা।
বিজ্ঞাপন
বিএফআরআইয়ের ময়মনসিংহস্থ সদর দফতর থেকে জানানো হয়, বগুড়া জেলার সান্তাহার প্লাবনভূমি উপকেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা যমুনা, বাঙ্গালী ও আত্রাই নদীসহ বিভিন্ন উৎস থেকে পিয়ালি মাছের পোনা সংগ্রহ করে উপকেন্দ্রের পুকুরে তা নিবিড়ভাবে প্রতিপালন করেন।
এ সময় পর্যবেক্ষণ করে মাছটির খাদ্যাভ্যাস অনুযায়ী খাবার সরবরাহ করা হয়। পরে দীর্ঘ গবেষণায় এ মাছের প্রজনন ও পোনা উৎপাদন কৌশল উদ্ভাবন করতে সক্ষম হয়েছেন তারা।
ফলে এর পোনা প্রাপ্তি এখন সহজতর হবে এবং চাষের আওতায় আনা যাবে বলে মনে করছে বিএফআরআই। গবেষক দলে ছিলেন উপকেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. ডেভিট রিন্টু দাস, বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান ও মালিহা খানম।
বিএফআরআই জানায়, পিয়ালি মাছ এলাকাভেদে জয়া, পিয়ালি বা পিয়াসি নামে পরিচিত। এর বৈজ্ঞানিক নাম Aspidoparia jaya। এ মাছটি সিপ্রিনিডি (Cyprinidae) পরিবারভুক্ত মিঠাপানির একটি মাছ। বাংলাদেশের পদ্মা ও যমুনা এবং তাদের শাখা নদীতে, ভারতের আসাম, উত্তরাঞ্চল, উত্তর প্রদেশ, নেপাল, ইরান, মায়ানমার, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড ও আফগানিস্থানে এই মাছের বিস্তৃতি রয়েছে।
পিয়ালি মাছ দৈর্ঘ্যে ৫ থেকে ১৭ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। এদের দেহ লম্বা। পরিপক্ক পুরুষ মাছের পেট হলুদাভ থাকে ও স্ত্রী মাছের চেয়ে আকারে অপেক্ষাকৃত বড় হয়। স্ত্রী মাছের পেট ধবধবে সাদা ও হালকা স্ফীতাকার।
গবেষণাকালে একটি ৬ গ্রাম ওজনের পিয়ালি মাছ বিশ্লেষণ করে এর পেটে ৮০.৭১ শতাংশ ফাইটোপ্লাংটন এবং ১৯.২৯ শতাংশ জুপ্লাংটন পাওয়া যায়। তাছাড়া বছরব্যাপী জিএসআই ও হিস্টোলজি পরীক্ষণের মাধ্যমে পিয়ারি মাছের সর্বোচ্চ প্রজনন মৌসুম নির্ধারণ করা হয়। এ প্রজাতির মাছ সাধারণত বর্ষাকালে অগভীর জলাশয়ে প্রজননে অংশগ্রহণ করে থাকে।
গবেষণায় দেখা গেছে, মে থেকে আগস্ট এবং ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি মাসে নদীতে প্রজননক্ষম পরিপক্ক স্ত্রী মাছ পাওয়া যায় এবং জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাসে জলাশয়ে পিয়ালির পোনার উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। এ মাছের ডিম ধারণক্ষমতা আকার ভেদে ১৫০০ থেকে ৩৫০০ টি।
গবেষক দলের প্রধান ড. ডেভিড রিন্টু দাস জানান, পিয়ালি মাছ দ্রুত বর্ধনশীল ও খেতে খুবই সুস্বাদু। এই মাছ আমিষ, চর্বি, ক্যালসিয়াম এবং লৌহ সমৃদ্ধ। প্রতি ১০০ গ্রাম মাছে মেথিয়োনিন ৭৫০ মিলিগ্রাম, সিস্টিন ৪২০ মিলিগ্রাম, পটাশিয়াম ৪৩০ মিলিগ্রাম, ক্যালসিয়াম ৬৭০ মিলিগ্রাম, ম্যাগনেশিয়াম ১৫০ মিলিগ্রাম, জিংক ১২.৮ মিলিগ্রাম, আয়রন ২৫ মিলিগ্রাম রয়েছে।
প্রজনন সফলতা সম্পর্কে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ বলেন, দেশীয় মাছ রক্ষার্থে ইনস্টিটিউটের গবেষণা কার্যক্রম সম্প্রতি জোরদার করা হয়েছে। সব দেশীয় মাছকে সুরক্ষা করে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণসহ দেশব্যাপী এ মাছ ছড়িয়ে দেওয়াই এ গবেষণার মূল উদ্দেশ্য।
উবায়দুল হক/এমএসআর