তাদের কথা কেউ না শুনলেই করা হয় নির্যাতন
যশোর পুলেরহাট শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে (বালক) দুই গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনায় তিন কিশোর গুরুতর আহত হয়েছে। আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সোমবার (৭ জুন) বেলা দেড়টার দিকে এ ঘটনাটি ঘটে। পরে গুরুতর অবস্থায় শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের আনসার সদস্যরা তাদের যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন।
আহতরা হলেন পিরোজপুর জেলার সদর উপজেলার মরিচাল গ্রামের ছওয়াব হোসেনের ছেলে হুসাইন (১৭), বগুড়া জেলার সারিয়াকান্দ্রির লাভলু হোসেনের ছেলে লিমন হোসেন (১৮) এবং ফরিদপুর জেলার নগরকান্দি এলাকার ইকরাম হোসেনের ছেলে ইমারত শেখ (১৮)।
বিজ্ঞাপন
আহতদের এর মধ্যে হুসাইন হত্যা মামলা, লিমন চুরি ও ইমারত শেখ অপহরণ মামলার অপরাধে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে অন্তরীণ ছিল।
আহতরা ও শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের ভেতর বন্দি তপু ও পাভেলের যৌথ বাহিনী রয়েছে। তারা এখানে দীর্ঘদিন ধরে আধিপত্য বিস্তার করে আসছে। তাদের কথা কেউ না শুনলেই করা হয় নির্যাতন।
রোববার (৬ জুন) রাত ৮টার দিকে হঠাৎ তারা হুসাইন নামের এক বন্দিকে মারধর করে। তারপর হুসাইন কেন্দ্রর উপপরিচালক জাকিরের কাছে অভিযোগ দেয়। পরে সোমবার দুপুরে হুসাইনকে পাভেল ও তপু বাহিনী দেখে হাতুড়ি-রড় দিয়ে মারধর করতে থাকে। একপর্যায়ে লিমন ও ইমারত হুসাইনকে বাঁচাতে গেলে তাদেরও রড ও হাতুড়ি দিয়ে বেধড়ক মারধর করা হয়।
আহত কিশোররা অভিযোগ করে বলে, কেন্দ্রের আনসার সদস্যদের সামনেই তাদের মেরেছে। কিন্তু তারা আমাদের বাঁচাতে এগিয়ে আসেননি। গেল বছরের যে বন্দি তিন কিশোরকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়, সেই ঘটনায় এই পাভেল ও তপু বাহিনী যুক্ত ছিল।
যশোরে পুলেরহাট শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের সহকারী পরিচালক জাকির হোসেন ঢাকা পোস্টকে জানান, শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের তিন বন্দিকে গুরুতর আহত অবস্থায় যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। কী নিয়ে বন্দিরা মারামারি করেছে, সেটা জানতে পারেননি তারা। এ ঘটনায় কারা জড়িত, সেটা তদন্ত চলছে।
এদিকে আহত তিন কিশোর শঙ্কামুক্ত বলে জানিয়েছেন যশোর জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক আহম্মেদ তারেক শামস।
উল্লেখ, অব্যবস্থাপনায় যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। গেল ১০ বছর চারবার কেন্দ্রে বিদ্রোহ ও সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। গেল বছরের তিন বন্দি কিশোরের হত্যা ও ১৫ জনের আহত হওয়ার ঘটনায় তোলপাড় শুরু হয়েছিল। একাধিক বার তদন্ত কমিটি গঠন করা হলেও কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়ন করা হয়নি।
নিয়ন্ত্রণ সংস্থার উদাসীনতা, অনিয়ম-দুর্নীতিতে কেন্দ্রে এ অবস্থা হয়েছে। ফলে কেন্দ্র বারবার এমন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট সূত্র।
জাহিদ হাসান/এনএ