রাজশাহী লকডাউনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত আজ
ক্রমেই অবনতি হচ্ছে রাজশাহীর করোনা পরিস্থিতি। দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে মৃতের তালিকা। দিনে নতুন সংক্রমণ নামছে না তিন অংকের নিচে। এই পরিস্থিতিতে লকডাউনের পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু আম বাণিজ্যের কারণে লকডাউনে না গিয়ে গত বৃহস্পতিবার থেকে সন্ধ্যার পর লোকজনকে বিনা প্রয়োজনে ঘরের বাইরে বের হতে দিচ্ছে না জেলা প্রশাসন। তবুও কাটছে না শঙ্কা।
এ অবস্থায় জনগণের খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করে এখনই কঠোর লকডাউন দিতে বলেছেন রাজশাহী ১৪ দলের নেতারা। শনিবার (৫ জুন) বিকেলে তারা লিখিত চিঠি দেওয়ার পর জেলা প্রশাসক আবদুল জলিলের সঙ্গে আলোচনায় বসেন।
বিজ্ঞাপন
১৪ দলের নেতাদের মধ্যে ছিলেন- নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার, নগর জাসদ সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল মাসুদ শিবলী, নগর ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক দেবাশিস প্রামাণিক দেবু প্রমুখ।
এ সময় ১৪ দলের নেতারা রাতের বিধিনিষিধকে অপর্যাপ্ত উল্লেখ করে পুরোপুরি লকডাউন দেওয়ার দাবি জানান। জবাবে ডিসি বলেন, নগর পুলিশ ও মেয়র যদি রাজি থাকেন এবং কঠিন লকডাউন কার্যকরে ভূমিকা রাখেন তাহলে লকডাউন দিতে আপত্তি নেই।
ডিসি আরও বলেন, লকডাউন কঠোরভাবে দিলে ১৫ হাজার রিকশাচালক, এক লাখ বস্তিবাসীর দায়িত্ব কে নেবে? ২০০০ কোটি টাকার আম ব্যবসার কী হবে, তাদের ক্ষতিপূরণ কীভাবে সম্ভব? লকডাউন যদি দিতেই হয়, কাঁচা বাজার, মসজিদ সব বন্ধ করেই দিতে হব। এছাড়া সম্পূর্ণ লকডাউন সম্ভব না।
এ সময় ১৪ দল নেতারা সম্মিলিত উদ্যোগের কথা বললে ডিসি বৈঠকের প্রস্তাব দেন। সে অনুযায়ী রোববার (৬ জুন) বিকেল ৩টায় মেয়র, সংসদ সদস্য, ডিসি, পুলিশ কমিশনার, এসপি, সিভিল সার্জন ও ১৪ দল নেতারা বৈঠকে বসবেন। সেখানে আলোচনার পর লকডাউনের সিদ্ধান্ত হবে বলে জানানো হয়েছে।
এদিকে শনিবার বিকেলে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ ল্যাবে ৩৭৪ জনের নমুনা পরীক্ষায় ১৯৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে রাজশাহীর ১৯৮ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৯১ জনের করোনা ধরা পড়েছে। এছাড়া চাঁপাইনবাবগঞ্জের ১৭৬ জনের নমুনায় করোনা ধরা পড়েছে ১০৮ জনের।
এর আগে শুক্রবার বিকেলে রাজশাহীর ২ ল্যাবে ২৬৫ জনের নমুনা পরীক্ষায় ১৩১ জনের করোনা শনাক্ত হয়। নমুনা পরীক্ষার উপরে শনাক্তের হার ৪৯ দশমিক ৪৩ শতাংশ। এর আগে গত ২৮ মে রাজশাহীতে সর্বোচ্চ ৪৬ শতাংশ করোনা ধরা পড়ে।
দুই পিসিআর ল্যাবের পাশাপাশি শুক্রবার ১০টি র্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষায় করেনা শনাক্ত হয় আরও ২ জনের। এই একদিনে জেলায় করোনা শনাক্ত হয় ১৩৩ জনের, মারা গেছেন ৩ জন।
অন্যদিকে শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে শনিবার সকাল ১০টা পর্যন্ত রামেক হাসপাতালে আরও ৮ জন মারা গেছেন।
শনিবার সকাল ১০টা পর্যন্ত হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে ভর্তি ছিলেন ২২৪ জন। এর মধ্যে আশঙ্কাজনক অবস্থায় নিবীড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (আইসিইউ) রয়েছেন ১৬ জন।
এর আগে রামেক হাসপাতালে গত ২৪ মে ১০ জন, ২৫ মে ৪ জন, ২৬ মে ৪ জন, ২৭ মে ৪ জন, ২৮ মে ৯ জন, ৩০ মে ১২ জন, ৩১ মে ৪ জন, ১ জুন ৭ জন, ২ জুন ৭ জন, ৩ জুন ৯ জন এবং ৪ জুন সর্বোচ্চ ১৬ জন মারা গেছেন।
জেলায় মোট করোনা শনাক্ত দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার ৫৬১ জনে। এর মধ্যে ৭ হাজার ৭৪২ জনই রাজশাহী নগরীর বাসিন্দা। জেলায় করোনায় মোট প্রাণহানি হয়েছে ৯৩ জনের। এর মধ্যে ৫৯ জন রাজশাহী নগরীর বাসিন্দা।
এসএসএইচ